স্টাফ রিপোর্টার:
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের চলমান অভিযানকে খুব ভালো উদ্যোগ হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, যে হারে বাংলাদেশে প্রবৃদ্ধি, অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো হচ্ছে, দুর্নীতির সাথে পাল্লা দিয়ে টিকতে পারছে না। এটাকে এখন ধরতে হবে, এটাকে এখন থামাতে হবে। এটা যেই হোক।তিনি আরো বলেন, আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন তার নিজের ঘর থেকে শুরু করতে হবে। ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগ বলুন অর্থাৎ যে যে দলই করুক না কেন, দুর্নীতি যে করবে তাদেরকে কোন ছাড় দেয়া হবে না। আমি বিশ্বাস করি, যদি আমরা দেশকে মোটামুটি দুর্নীতিমুক্ত করতে পারি, তাহলে আমরা অনেক বেশি এগিয়ে যাবো। ইনশাআল্লাহ। এটি নিয়ে কোন সন্দেহ নাই।
বুধবার (৯ অক্টোবর) বিকালে তাড়াইল মুক্তিযোদ্ধা সরকারি কলেজ মাঠে তাড়াইল নাগরিক কমিটি আয়োজিত এক সুধি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ এসব কথা বলেন। তিনি তাঁর নিজের ‘ভাটির শার্দুল’ উপাধি পাওয়া প্রসঙ্গে বলেন, তাড়াইলে আমার বহুকালের অনেক স্মৃতি রয়েছে। ছাত্রজীবনে সর্বপ্রথম তাড়াইলে আমি জনসভা করেছি। সেটা তাড়াইলের পুরুড়া হাইস্কুলে। ১৯৬৯ সালে তখন ছাত্র আন্দোলন গণ আন্দোলনে রূপ নিল। পুরুড়া হাইস্কুলের আব্দুর রাশিদ আমার কাছে এসে বললো, হামিদ ভাই, পুরুড়া হাইস্কুলে আমরা একটি জনসভা করতে চাই। তো আমরা তো ছাত্রসভা করেছি, জনসভা জীবনে করিনি। তখন রাশিদ বললো, ঢাকা থেকে বড় নেতা আনতে হবে। ‘৬৯ এর গণআন্দোলনের সময় ঢাকা থেকে কোন নেতা যে এখানে এসে মিটিং করবে, বক্তৃতা দেয়ার জন্য আসবে, সে পরিস্থিতিতে সেটা সম্ভব ছিল না।
তখন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন মহিউদ্দিন সাহেব। রাশিদকে নিয়ে গেলাম। তিনি বললেন, তুমি বড় নেতা খুঁজতেছো, আমাদের হামিদ কি কম বড় নেতা নাকি? তাকে নিয়ে যাও। একথা বলার পর রাশিদ বললো, টাইটেল কি দিবো? তিনি বললেন, নাম লেখবা, টাইটেল লাগবে কেন? আর যদি টাইটেল দিতে চাও লেখবা, ভবিষ্যৎ মন্ত্রী। আমি বললাম ভবিষ্যৎ মন্ত্রী এটা কেন লেখবা, এটা লেখা যাবে না।
তখন মহিউদ্দিন সাহেব বললেন, ব্যাটা, শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের বঙ্গশার্দুল। তিনি তখন বঙ্গবন্ধু টাইটেল পাননি, তাঁকে বঙ্গশার্দুল ডাকা হতো। তোমাদের তাড়াইলও ভাটি, হামিদের বাড়িও ভাটি। সে হলো ভাটির শার্দুল। সেই পুরুড়া হাইস্কুল মাঠে তখন লক্ষাধিক লোকের সমাগম হয়েছিল। সেখানে আমি একাই সোয়া দুই ঘন্টা বক্তৃতা দিয়েছিলাম। মিটিং শেষে যখন রাস্তায় মানুষজনের সাথে দেখা হয়, মুরুব্বীরাও তখন সালাম দেয় আর বলেন, ‘ভাটির শার্দুল’ সাব আপনি কেমন আছেন? তখন জানতাম না, ‘৭০ এ আমি ইলেকশন করব। ‘৭০ এ যখন ইলেকশন করলাম তখন দেখা গেল, পোস্টারের মধ্যেও একই টাইটেল। তখন আমি অ্যাডভোকেটও হইনি। পোস্টারে লেখা হয়, প্রার্থী ভাটির শার্দুল মো. আবদুল হামিদকে ভোট দিন। এই হয়ে গেলাম ‘ভাটির শার্দুল’। ‘ভাটির শার্দুল’ উপাধিটা আমার তাড়াইল থেকেই পাওয়া, তাড়াইল থেকেই দেওয়া, তাড়াইল থেকেই শুরু।
প্রেসিডেন্ট ১৯৭০ সালে প্রথম নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিজয়ী হওয়া প্রসঙ্গে বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকা ছিল ইটনা, অষ্টগ্রাম, নিকলী ও তাড়াইল এই চারটি থানা। মিঠামইন তখন পূর্ণাঙ্গ থানা হয়নি। আমি ভোটের দিকে চার থানার মধ্যে তাড়াইলের প্রথম হয়েছিলাম। সুতরাং তাড়াইলের সাথে আমার আলাদা একটি সম্পর্ক রয়েছে। সারাজীবন এটা আমার মনে আছে এবং মনে থাকবে। বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে আমি আপনাদের সহযোগিতা পেয়েছি। শুধু আওয়ামী লীগ নয়, সব দলের মানুষের সহযোগিতা পেয়েছি।
এর আগে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারযোগে নিজ জেলা কিশোরগঞ্জে এক সপ্তাহের সরকারি সফরের প্রথম দিন বুধবার (৯ অক্টোবর) দুপুর আড়াইটার দিকে তাড়াইল উপজেলার শামুকজানি মাঠের হেলিপ্যাডে অবতরণ করেন। হেলিপ্যাড থেকে তিনি উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে যান। সেখানে প্রেসিডেন্টকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।পরে তিনি উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে নবনির্মিত স্বাধীনতা ‘৭১ ভাস্কর্য উদ্বোধন করেন। উদ্বোধন শেষে তিনি সুধী সমাবেশে যোগ দেন। সুধি সমাবেশ শেষে বিকালে প্রেসিডেন্ট কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের উদ্দেশ্যে তাড়াইল ত্যাগ করেন। ১৫ই অক্টোবর পর্যন্ত তিনি তাড়াইল ও কিশোরগঞ্জ সদর ছাড়াও নিজের সাবেক সংসদীয় এলাকার তিন উপজেলা মিঠামইন, ইটনা ও অষ্টগ্রাম সফর করবেন।