আতঙ্কে রয়েছে দেড় শতাধিক অসাধু মন্ত্রী-এমপি, আমলা, পুলিশ, ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ। তারা বিশেষ নজরদারিতে রয়েছে বলে জানিয়েছে সূত্র। এদের অবৈধ সম্পদের ডাটা সংগ্রহ করছে গোয়েন্দা সংস্থা।
সূত্র জানায়, প্রাথমিকভাবে অভিযান থেমে যাবে ভাবলেও চলমান অভিযান প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরলে আরও জোরদার হবে এমন আশঙ্কায় দুর্নীতিবাজ রাঘববোয়লা আতংকগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফিরলে তার পরামর্শমতো রূপরেখা তৈরি করে অবৈধ সম্পদ অর্জনকারী এবং দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক অভিযান চালানো হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
এদিকে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গোয়েন্দা জালে থাকা যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটকে যে কোনো সময় গ্রেপ্তার ঘোষণা করা হতে পারে বলে জানা গেছে।
এর মধ্যে গত রোববার নিউ ইর্য়কে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, কেউ যদি অসৎ পথে অর্থ উপার্জন করে এবং তার অনিয়ম, অসততা ধরা পড়ে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে। তারা যে-ই হোক না কেন, এমনকি আমার নিজ দলের লোক হলেও।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী এবং সরকারি কর্মকর্তারা যৌথভাবে দুর্নীতির বিশাল একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। তালিকায় শুধু সাবেক ও বর্তমান মন্ত্রী-এমপিই আছে অর্ধশতাধিক। নির্বাচনের আগে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা এসব দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদদের নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে। এরপর চলতি বছরের মাঝামাঝি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সমন্বয়ে মন্ত্রী-এমপিসহ দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদ এবং কর্মকর্তাদের প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। সম্প্রতি গ্রেপ্তার হওয়া যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভুইয়া, জিকে শামীম এবং কৃষকলীগ নেতা ফিরোজকে র্যাবের মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদে অনেক নেতা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের নাম বেরিয়ে আসে। টেন্ডারবাজি ও ক্যাসিনোর টাকার কমিশন খাওয়া বেশকিছু সাবেক ও বর্তমান মন্ত্রী-এমপির নাম রয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ একজন কর্মকর্তা জানান, দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদ, কর্মকর্তা এবং ব্যবসায়ীর তালিকা করা হচ্ছে। তালিকায় নতুন নামও যুক্ত হচ্ছে। গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের অনুসন্ধান ছাড়াও অবৈধ সম্পদ খুঁজতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কাজ করছে। গোয়েন্দা সংস্থা থেকেও দুদকে একটি তালিকা দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরলে তালিকা সমন্বয় করে তার পরামর্শ এবং রূপরেখা অনুযায়ী দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, আমাদের চলমান অভিযান শুধু ক্যাসিনো কিংবা জুয়ার বিরুদ্ধে নয়। আইন অমান্যকারী সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যারা অনৈতিক ব্যবসা করেন, তাদের বিরুদ্ধেও অভিযান চালবে। অন্যায়কারী জনপ্রতিনিধি বা কর্মচারী যে-ই হোক না কেন সবাইকে আইনের মুখোমুখি হতেই হবে। তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত অভিযান চলবে।
গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা জানান, দুর্নীতিবাজদের তালিকা অনেক দীর্ঘ। প্রাথমিকভাবে দুর্নীতিবাজ এবং অবৈধ সম্পদ অর্জনকারীদের সম্পদের হিসাব ও উৎস খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এসব দুর্নীতিবাজের তালিকা নিয়ে কাজ করছে একাধিক গোয়ন্দা সংস্থা এবং দুদক। রাজনীতিবিদ, সরকারি কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ এ তালিকায় রয়েছে। এছাড়া টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি এবং ক্যাসিনোর শত শত কোটি টাকা ভাগ-বাটোয়ারার সঙ্গে রাজনীতিবিদ ছাড়াও প্রশাসনের কোন স্তরের কারা জড়িত তার অনুসন্ধান করা হচ্ছে। দেশের বাইরে কোন চ্যানেলে কীভাবে টাকা পাচার করা হয়েছে সেটা নিয়েও কাজ করছে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।
একাধিক রাজনীতিবিদ জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে তাদের মনে হয়েছিল ক্যাসিনো এবং জুয়ার বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে শেষ হয়ে যাবে। তবে পরবর্তী সময় জানতে পেরেছেন এ অভিযান দীর্ঘায়িত হবে। তালিকা ধরে প্রথমে শীর্ষ দুর্নীতিবাজ, টেন্ডারবাজ এবং অবৈধ সম্পদ উপার্জনকারীদের ধরা হবে। তারপর মধ্যসারি থেকে তৃণমূল পর্যন্ত দুর্নীতিবিরোধী অভিযান চালানো হবে প্রাথমিকভাবে এমন সিদ্ধান্তই হয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরলে এ ব্যাপারে তার দিকনির্দেশনা অনুযায়ী চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।