বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় এ পর্যন্ত ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকসহ ১৩ জন রয়েছে। গ্রেপ্তার ১৬ জনের মধ্যে মামলার এজাহারে নাম রয়েছে ১২ জনের।
আবরার হত্যাকাণ্ডের পর ৭ অক্টোবর সন্ধ্যায় চকবাজার থানায় ১৯ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়। আবরারের পিতা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন।
ওই মামলার পর বুয়েটের শেরে বাংলা হলে অভিযান চালিয়ে এবং সিসিসিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে প্রথমে ১০ জনকে গ্রেপ্তার করার কথা জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়।
এরপর গত তিন দিনে গ্রেপ্তার হয় আরো ছয়জন। এদের মধ্যে ছাত্রলীগ নেতা ও শেরে বাংলা হলেরই ছাত্র অমিত সাহা ও আবারের রুমমেট মিজানুর রহমান রয়েছে।
প্রসঙ্গত, আবরার বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের (১৭তম ব্যাচ) শিক্ষার্থী ছিলেন। কুষ্টিয়ার ছেলে আবরার শেরে বাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন। ২০১৫ সালে কুষ্টিয়া জেলা স্কুল থেকে এসএসসি এবং ২০১৭ সালে ঢাকা নটরডেম কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন আবরার। ২০১৭-২০১৮ শিক্ষাবর্ষে তিনি বুয়েটের তড়িৎ কৌশল বিভাগে ভর্তি হন।
গত ৬ অক্টোবর রাত ২টার দিকে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের দ্বিতীয় তলার সিঁড়ি আবরারের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেয়ার পর ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক জানান, তার মরদেহে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।
ওই রাতে হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে আবরারকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন পিটিয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় ১৯ জনকে আসামি করে ৭ অক্টোবর সন্ধ্যার পর চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা করেন আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ। ৮ অক্টোবর মামলা তদন্তের দায়িত্ব পায় গোয়েন্দা পুলিশ।
আবরার হত্যায় প্রথম দফায় গ্রেপ্তার হয় বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল ও সহসভাপতি মুহতাসিম ফুয়াদ। এ দুজনই বুয়েটের শেরে বাংলা হলের আবাসিক ছাত্র।
এছাড়া গ্রেপ্তার হয় বুয়েট ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার, ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, উপসমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল, সদস্য মুনতাসির আল জেমি, মো. মুজাহিদুর রহমান মুজাহিদ এবং মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভির ও একই বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ইশতিয়াক আহম্মেদ মুন্না।
পরদিন ৮ অক্টোবর গ্রেপ্তার হয় বুয়েট শেরেবাংলা হলের ৩০৭ নম্বর কক্ষের মনিরুজ্জামান মনির ও ১০০৮ নম্বর কক্ষের ছাত্র আকাশ হোসেন ও সন্দেহভাজন আসামি সামছুল আরেফিন রাফাত।
এরপর গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর সবুজবাগ এলাকা থেকে অমিত সাহাকে আটক করে ডিবি পুলিশ। আবরারকে শেরে বাংলা হলের যে কক্ষে পিটিয়ে হত্যা করা হয় সেই কক্ষের (২০১১) বাসিন্দা বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের আইনবিষয়ক উপ-সম্পাদক অমিত সাহা। সেদিন আবরারকে ওই কক্ষে ডেকে নেওয়ার আগে অমিত মেসেঞ্জারে আবরারের খোঁজ করেন তার এক সহপাঠীর কাছে, যার স্ক্রিনশট পরে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।
এদিন দুপুরে আটক হয় আবারের রুমমেট মিজানুর রহমান। সে বুয়েটের ওয়াটার রিসোর্সেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। এছাড়া বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টার দিকে গাজীপুরের মাওনা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় এজাহারভুক্ত আসামি মোহাম্মদ তোহাকে।
তোহা যন্ত্র প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র এবং হল শাখা ছাত্রলীগের সদস্য। শেরোংলা হলের ২১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন তিনি।
গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ইফতি মোশাররফ সকাল প্রথম স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর হাকিম সাদবির ইয়াসির আহসান চৌধুরীর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন তিনি।