হাফসা লোদি, ওয়াশিংটন: আমার গাড়ির সাউন্ড সিস্টেম থেকে ভেসে আসা ধীর গতির দক্ষিণ আমেরিকান কণ্ঠটি প্রাণবন্ত সুরে বলে উঠল ‘তারা মনে করেছিল সে ব্যক্তি পূর্ব ইউরোপ থেকে আসা কোনো লোক।’ সেখান থেকে বক্তার বলা একটি গল্প ভেসে আসছিল সেখানে তিনি বলেছেন, কিভাবে তার আমেরিকান পরিবার প্রথমবারের মত একজন আরব পুরুষের সাথে সাক্ষাত করেছেন যে ব্যক্তি তার স্বামী হতে চলেছে।
তার পরিবার শঙ্কায় ছিল পশ্চিমা গণমাধ্যম সমূহে যেভাবে মধ্য প্রাচ্যের মানুষদের নেতিবাচক ভাবে চিত্রায়ন করা হয় তাদের সাথে ঠিক এমন একজন পুরুষের সাথে দেখা হবে কিন্তু শেষ পর্যন্ত তার মত বন্ধুত্ব পূর্ণ এবং ব্যক্তিত্ব পূর্ণ ব্যক্তির সাথে দেখা করতে পেরে আমরা খুশি ছিলাম।
নিকল কুইন এবং মনিকা ত্রাভেরজো নামের দুজন ইসলাম গ্রহণ কারী মুসলিম নারী কর্তৃক প্রচারিত পডকাস্ট ‘Salam, Girl!’ শুনছিলাম। তাদের প্রচারিত প্রথম পর্ব থেকে তারা যেভাবে হাস্যজ্জ্বল ভঙ্গিতে মাথায় প্রজাপতি আকৃতির ক্লিপ পরিধান করে অনুষ্ঠান পরিচালনা করেছিল এবং আজকের পর্বে তাদের হিজাব পরিধান করে উপস্থিত হওয়া ইত্যাদি বিবেচনায় এটি পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে যে, এটি কোনো সাধারণ ধর্মীয় পডকাস্ট নয়।
তথাপি পডকাস্ট পরিচালনা কারী কুইন এবং ত্রাভেরজো তারা ইসলাম ধর্মের শিক্ষা ছড়িয়ে দেয়ার জন্য নিজেদের কাজ কে ইসলামের দাওয়াত দেয়ার অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে ব্যাবহার করছেন।
হিজাব পরিহিত ‘jiu-jitsu’ যোদ্ধা, পুরস্কার বিজয়ী চলচ্চিত্রকার, শৈল্পিক মেক আপ শিল্পী সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফল ব্যক্তিদের সাক্ষাতকার গ্রহণের মাধ্যমে তারা তাদের পডাকাস্ট পরিচালনা করছেন।
তাদের এসব পডকাস্টের মাধ্যমে তারা নবী মুহাম্মদ(সা:) সময় কিভাবে তালাক কার্যকর হত এমন জীবন ঘনিষ্ঠ আলোচনার মাধ্যমে তারা আমেরিকান কলেজের প্রথম কোনো নারী শিক্ষার্থীদের সংগঠন ‘Salam, Girl!’ এর দিকে দৃষ্টি পাত করে।
‘Salam, Girl!’ মুসলিম কমিউনিটির মধ্যে সমমনা এবং যেসমস্ত নারী তাদের ইসলামি বিশ্বাসের চর্চার সাথে সাথে ক্রমবর্ধমান পশ্চিমা ফ্যাশনের সাথে মিল রেখে জীবন নির্বাহ করতে চান তাদের কে নিয়ে গড়ে উঠেছে।
শুরুর কথা
যুক্তরাষ্ট্রের ডালাস এবং টেক্সাস থেকে আসা এসব নারীরা আমাকে জানিয়েছেন যে, ‘কোনো নাটকীয় বিষয় তাদের কে ইসলাম ধর্মের দিকে নিয়ে আসেনি বরং বেশ কয়েক বছরের ইসলামি শিক্ষা গ্রহণের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তারা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন।’
নিকল কুইন বলেন, ‘আমি মোটামুটি রাতের শিল্পে জীবন যাপন করতাম এবং আমার সকল সময় মদ পান কারী এবং এসব বিষয় নিয়ে থাকে এমন মানুষদের আশে পাশে কাটাতাম। একসময় আমি এসব থেকে নিজেকে দুরে সরিয়ে রাখতে শুরু করি এবং আমি আবার আলোতে ফিরে আসতে চাইতাম।’
এভাবে তিনি হাসান নামের একজন স্থানীয় বন্ধুর নিকট থেকে পবিত্র কুরআনের একটি কপি উপহার পান এবং তা অধ্যয়ন করতে শুরু করেন।
নিকল কুইন ২০০৭ সালে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন এবং বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি তার ইসলাম ধর্ম গ্রহণ নিয়ে, সন্তান লালন পালন নিয়ে ও আন্ত ধর্মীয় বন্ধুত্ব নিয়ে আলোচনা করেন।
স্থানীয় একটি মসজিদে ধর্ম সম্পর্কে আলোচনা করার সময় তারা সাথে মনিকা ত্রাভেরজোর সাথে পরিচয় ঘটে যিনি ২০১০ সালে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।
নিকল কুইন যখন তার একজন অমুসলিম বন্ধুর সাথে তার ইসলাম গ্রহণ নিয়ে একটি ইউটিউব ভিডিও তৈরী করেন তিনি তখন দেখেন যে, তার দর্শকেরা দুজন ব্যক্তির উপস্থিতি পছন্দ করছে এবং এর পর থেকে তিনি মনিকা ত্রাভেরজো কে সাথে নিয়ে ইউটিউব চ্যানেল চালু করেন।
মনিকা ত্রাভেরজো বলে, আমাদের দুজনের মধ্য কথোপকথনের মাধ্যমেই আমাদের পডকাস্টটির নাম করণ করা হয়েছে। যখনই আমরা একে অন্যকে ফোন কল করতাম তখন আমরা প্রথমেই বলতাম-‘Salam, Girl’ আর এভাবেই আমরা এর নাম রাখলাম, ‘Salam, Girl!’
নিকল কুইন বলেন, ‘আমরা আধুনিক বিষয় বস্তুর অবতারণার মাধ্যমে দাওয়াতি কাজ পরিচালনা করতে পারছি আর এটাই আমাদের শো’র অন্যতম আকর্ষণ।’
তিনি আরো বলেন, ‘অনেকেই ইসলাম ধর্মের প্রতি কৌতূহল অনুভব করেন এবং তারা আমেরিকান নারীদের কণ্ঠে তাদের মত করে ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে জানতে পারেন। এভাবেই আমরা অমুসলিমদের নিকট ইসলামের বার্তা পৌঁছে দিচ্ছে যা কেবল মাত্র ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত নারীদের পক্ষেই সম্ভব।’
ব্রান্ড প্রতিষ্ঠা
নিকল কুইন এবং মনিকা ত্রাভেরজো বলেন, এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে ‘Salam Girl!’ এপল এবং স্পটিফাই থেকে অন্তত ৬০,০০০ হাজারেরও বেশী বার ডাউনলোড করা হয়েছে।
ইতোমধ্যেই তাদের তাদের এসব অনুষ্ঠানে স্পন্সর করার জন্য হিজাব ব্রান্ড, জুয়েলারি, শিশুদের পোশাক তৈরী কারক সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এসেছে।
নিজেদের পডকাস্ট রেকর্ডিংয়ের পাশাপাশি তারা তাদের নিজদের কর্ম ক্ষেত্রে নিয়মিত উপস্থিত থাকেন। এছাড়াও তাদের দুজনেরই সন্তান রয়েছে। মনিকা ত্রাভেরজোর চার সন্তান এবং নিকল কুইনের দুজন সন্তান রয়েছে।
তাদের ব্যক্তিগত জীবন যাত্রা তাদের শো’ এর বিষয় বস্তু নির্মাণে সহায়তা করে যেমন, তাদের ইসলাম গ্রহণ এবং হিজাব পরিধান করার জন্য তাদের সংগ্রাম, তাদের আরব আত্মীয় স্বজনের সাথে মেল বন্ধন ইত্যাদি তাদের কে আরো বেশী উৎসাহ দেয়।
ত্রাভেরজো বলেন, ‘আমরা একটি কমিউনিটি তৈরী করতে চাই সুতরাং আমরা আমাদের নারী দর্শকদের উদ্দেশ্যে বলি আপনারাই সবচেয়ে উত্তম।’
সূত্র: দিন্যাশনাল ডট এই তে প্রকাশিত হাফসা লোদির কলাম থেকে।