বগুড়ার শেরপুরে বড় বোনের চল্লিশার দিনেই প্রবাসী দুলাভাই জিল্লুর রহমান (৩৫)-এর সঙ্গে মোবাইল ফোনে নাবালিকা শ্যালিকা স্কুলছাত্রী রত্না খাতুন (১৬) এর বিয়ের দিন ধার্য করেছেন তার মা সহ নিকট আত্মীয়-স্বজনরা। গতকাল সকাল সাড়ে ১১টায় ওই স্কুলছাত্রী রত্না খাতুন ও তার এক বান্ধবী বৃষ্টি খাতুন (১৬) মিলে শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরে হাজির হয়ে বাল্যবিয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। শেরপুর পৌরশহরের টাউন কলোনি এজে উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর মানবিক বিভাগের ছাত্রী মোছা. রত্না খাতুন এবং একই স্কুলের বিজ্ঞান বিভাগের অপর ছাত্রী বৃষ্টি খাতুন (১৬) মিলে শেরপুর উপজেলা প্রশাসন এবং তারপরে শেরপুর থানায় হাজির হয়ে বাল্যবিয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন।
রত্না জানায়, শেরপুর শহরতলীর ১নং কুসুন্বি ইউনিয়নের দুবলাগাড়ী বনিকপাড়া এলাকার বাসিন্দা তার বাবা হলুদ শেখ বেশ কিছুদিন পূর্বে অকালে মারা যান। তখন তার মা রাশেদা বেওয়া ২ মেয়েকে নিয়ে অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করতো। আবার কখনো রাইচ মিলে চাতাল শ্রমিকের কাজ করে কোন মতে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। গত ১৫ই সেপ্টেন্বর রত্নার বড়বোন সীমা খাতুন (৩০) হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শেরপুরেই মারা যান। ২৩শে অক্টোবর মরহুম সীমা খাতুনের চল্লিশার অনুষ্ঠান শেষে বিকেলে রত্নার ভগ্নিপতি রোমান প্রবাসী গাইবান্ধা জেলার বাসিন্দা জিল্লুর রহমানের সাথে মোবাইল ফোনের ভিডিও কলে বাল্যবিয়ে সম্পন্ন করার আয়োজন করা হয়েছে।
শেরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসের বারান্দায় কান্না জড়িত কণ্ঠে স্কুল ছাত্রী রত্না খাতুন আরও জানায়, আমি বাল্যবিয়ে করবো না। আমি লেখাপড়া শিখে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করতে চাই। তার পর নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে বিয়ে করবো। এজন্য আমি উপজেলা প্রশাসন সহ সকলের সহযোগিতা চাই। রত্নার বান্ধবী একই স্কুলের বৃষ্টি খাতুন জানায়, আমাদের এলাকায় আমরা যে কোন বাল্য বিয়ে হতে দেবো না। এজন্য সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে চাই আমরা। শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তর থেকে জানানো হয় যেকোনে উপায়ে হোক শেরপুর উপজেলার সর্বত্র বাল্যবিয়ে রোধ করা হবে। এদিকে শেরপুর থানার পক্ষ থেকে গতকাল দুপুরে একজন পুলিশ কনস্টেবল শেরপুরের দুবলাগাড়ী রত্নার মায়ের বাড়িতে গিয়ে বাল্যবিয়ে না দেয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করেছেন। এ ব্যাপারে রত্নার মায়ের সেল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। রত্নার মামাতো ভাই মঞ্জু জানায়, রত্নাকে বিয়ে দেয়ার কথা হয়েছিল। কিন্ত এখন আর বিয়ে দেয়া হবে না। কারণ মৃত. বড়বোন সীমার ছেলে মারুফকে দেখাশুনা এবং তার সংসার ধরে রাখার জন্য রত্নাকে বিয়ে দেয়ার কথা হয়েছিল। সূত্র: মানবজমিন।