স্টাফ রিপোর্টার: সাবেক গণপরিষদ সদস্য আবদুল আউয়ালের ১২ তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০০৭ সালের ২৮অক্টোবর কুমিল্লার লাকসামের নিজ বাস ভবনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। আওয়ামী রাজনীতিতে অপরিসীম ত্যাগের জন্য তিনি আজো লাকসামবাসীর হৃদয়ে অমর হয়ে আছেন।
জানা যায়, ১৯২১ সালের পহেলা জুলাই চাঁদপুর জেলার শাহরাস্তি থানার অন্তর্গত ‘চেঙ্গাচাল’ নামক গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন আব্দুল আউয়াল। মাওলানা ছাইয়েদ আহমদ ও ছায়েদা খাতুন দম্পতির ৭ সন্তানের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। ১৯৩৬ সালে ১৭ বছর বয়সে কিশোর আব্দুল আউয়াল অংশগ্রহণ করেন বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে। ১৯৩৮ সালে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত হন লাকসাম থানা মুসলিম ছাত্রলীগের রাজনীতিতে। ১৯৩৯ সালে তিনি লাকসাম থানা মুসলিম ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং ১৯৪০ সালে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৪১ সালে পাকিস্তান দিবস পালনের উদ্দেশ্যে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করার দায়ে ব্রিটিশ সরকারের রোষানলে পড়ে প্রাণপ্রিয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান লাকসামের গাজীমুড়া আলীয়া মাদ্রাসা থেকে বহিষ্কৃত হন মেধাবী ছাত্রনেতা আব্দুল আউয়াল।
তিনি ১৯৪২ সালে ত্রিপুরা সদর দক্ষিণ মহকুমা মুসলিম ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, বৃহত্তর কুমিল্লা জেলা মুসলিম ছাত্রলীগের সভাপতি ও বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম ছাত্রলীগের কাউন্সিল সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৪৩ সালে ত্রিপুরা জেলা মুসলিম লীগ ও বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগে কাউন্সিল সদস্য হিসেবে কলকাতায় অনুষ্ঠিত প্রাদেশিক মুসলিম লীগের প্রতিটি সভায় যোগদান করেন।
১৯৪৫ সালে চাঁদপুর জেলার কচুয়া থানার অন্তর্গত রহিমানগর বাজারে আয়োজিত জনসভায় পাকিস্তানের স্বপক্ষে জ্বালাময়ী বক্তব্য দেয়ার দায়ে ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক গ্রেফতার হন সংগ্রামী আব্দুল আউয়াল। তিনি ১৯৪৯ সালে লাকসাম থানা আওয়ামীলীগের সম্পাদক, ১৯৫৩ সালে মহকুমা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও বৃহত্তর কুমিল্লা জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
ষাট-সত্তরের দশকে কুমিল্লার লাকসামে স্নেহধন্য আব্দুল আউয়াল আয়োজিত বেশ কয়েকটি জনসভায় অংশগ্রহণ করেছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যার প্রমাণাদি স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। এজন্য সংগ্রামী আব্দুল আউয়াল মুক্তিযুদ্ধের একজন ইতিহাস সংগ্রাহক হিসেবেও বিবেচিত। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে তিনি অংশগ্রহণ করেছিলেন মুক্তিযুদ্ধে। পরবর্তীতে ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বৃহত্তর কুমিল্লা জেলা আওয়ামীলীগের কমিটি গঠন করে আব্দুল আউয়ালকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব অর্পণ করেন। দীর্ঘ এক দশক তিনি এ দায়িত্ব পালন করেন।
আন্দোলন সংগ্রামের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে গিয়ে নিজের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা-বানিজ্য এবং সংসার বিমুখ ছিলেন আব্দুল আউয়াল। ১৯৭৬ সালে মায়ের অনুরোধ রক্ষার্থে ৫৫ বছর বয়সে লাকসামের মিশ্রী গ্রামের শহীদ বুদ্ধিজীবি ডা. গোলাম মোস্তফার বিপতœীক ছোট বোনের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। দাম্পত্য জীবনে তিনি ২ পুত্র ও ২ কন্যা সন্তানের জনক। তার বড় ছেলে আতাউল করিম জুন্নুন প্রধানমন্ত্রীর কার্য্যালয়ে সহকারী প্রোগ্রামার হিসেবে নিযুক্ত রয়েছেন।
জীবদ্দশায় আব্দুল আউয়ালকে একাধিকবার স্বহস্তে লিখিত চিঠি প্রেরণ করেছিলেন বাঙ্গালীর অবিসংবাদিত নেতা, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। দলের প্রতি আব্দুল আউয়ালের অগাধ ভালোবাসার প্রতি সমর্থন রেখে একটি চিঠিতে বঙ্গবন্ধু লিখেছিলেন, ‘ভাই আউয়াল, আপনার নিঃস্বার্থ ত্যাগের কথা সকলে ভুলতে পাওে; কিন্তু আমি ভুলতে পারিনা।’ ১৯৮৯ সালে আবদুল আউয়ালের লাকসামের বাসভবনে এসে পিতার চিঠি পড়ে আবেগাপ্লুত হন বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনা।
২০০৭ সালের ২৮ অক্টোবর ৮৬ বছর বয়সে বার্ধক্য জনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে লাকসামের নিজ বাসভবনে ইন্তেকাল করেন সংগ্রামী নেতা আব্দুল আউয়াল। লাকসাম জংশন ক্লাব মাঠের পশ্চিম পার্শ্বস্থ কবরস্থানে তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন।