দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকার পর ফের শ্রমবাজার খুলেছে মালয়েশিয়া। ফলে কয়েক লাখ বাংলাদেশি শ্রমিকদের নতুন কর্মসংস্থান হতে যাচ্ছে। আগামী বুধবার (৬ নভেম্বর) দেশটির প্রশাসনিক রাজধানী কুয়ালালামপুরের পুত্রজায়ায় বসছে দুই দেশের মন্ত্রিপর্যায়ের বৈঠক। বৈঠকে যোগ দিতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ইমরান আহমেদের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল আজ সোমবার (৪ নভেম্বর) মালয়েশিয়ায় যাচ্ছেন। দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকা এ শ্রমবাজারটিতে ফের কর্মী পাঠানোর সব সিদ্ধান্ত এ বৈঠকেই চূড়ান্ত হবে বলে মনে করছেন জনশক্তি রপ্তানিকারকরা। উল্লেখ্য, এক বছরে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমেদ মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার উন্মুক্ত করতে কয়েক দফা সে দেশে সফর করেন এবং গঠন করেন জয়েন্ট ওয়ার্কিং কমিটির বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল। মালয়েশিয়া সরকারের মানবসম্পদমন্ত্রী কুলাসেগারান বিভিন্ন সময় দেওয়া তার বিবৃতিতে বারবার মালয়েশিয়া গমনেচ্ছু বাংলাদেশি কর্মীদের অতিরিক্ত অভিবাসন ব্যয়ের কথায় জোর দেন। অভিবাসন ব্যয় নিয়ন্ত্রণে এরই মধ্যে জয়েন্ট ওয়ার্কিং কমিটির রিপোর্টে কিছু সুপারিশ উঠে এসেছে, যা আসন্ন বৈঠকে চূড়ান্ত আলোচনা করা হবে।
মালয়েশিয়া সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরে জানান, বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য এ শ্রমবাজার উন্মুক্ত করতে তার সরকারের আন্তরিকতার অভাব নেই। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ সরাসরি দেখভাল করছেন। জনশক্তি রপ্তানিকারক ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা মন্ত্রী ইমরান আহমেদ পুত্রজায়ার বৈঠকে বায়রার সাধারণ সদস্যের স্বার্থের কথা চিন্তা করে সিন্ডিকেটের বিপক্ষে তার অবস্থান সুস্পষ্ট করবেন। আরেক ব্যবসায়ী আবারও সিন্ডিকেট সিস্টেমের আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে অফিসিয়ালি এখনও মালয়েশিয়া সরকারকে সিন্ডিকেটের বিপক্ষে কোনো চিঠি দেওয়া হয়নি যা একটি বড় ধরনের ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন সাধারণ ব্যবসায়ীরা। কেউ কেউ এ বিষয়ে মন্ত্রীর উদ্দেশ্য নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করছেন।
কেননা সুস্পষ্ট বক্তব্য না দেওয়ার অর্থই আরেকটি সিন্ডিকেট সিস্টেমের প্রতি নীরব সমর্থন দেওয়া। গেলবারও একটি মহল মালয়েশিয়ার নাজিব সরকারকে ম্যানেজ করে সিন্ডিকেট সিস্টেম সফল করতে পেরেছিল শুধু সিন্ডিকেটের বিপক্ষে বাংলাদেশ সরকারের নীরবতার কারণে। দুঃখজনকভাবে আবারও একই পথে হাঁটছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। একজন জনশক্তি রপ্তানিকারক জানান, আগের মতো বিতর্কিত বেস্টিনেট বাংলাদেশের শ্রমবাজার দখলের জন্য আবার পাঁয়তারা করছে। এজন্য তারা ১৭টি মেডিকেল সেন্টারকে তাদের তালিকাভুক্ত করেছে। বেস্টিনেট একটি আইটি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি কীভাবে মেডিকেল সেন্টারের মতো একটি স্পর্শকাতর বিষয়ে কাজ করার সুযোগ পায়? বেস্টিনেটের তালিকাভুক্ত ১৭টি মেডিকেল সেন্টারকে বাংলাদেশ সরকার এখনও তালিকাভুক্ত করেনি।
পর্যাপ্ত মান নিয়ন্ত্রণ ও প্রফেশনাল মনিটরিং না থাকায় এর আগে এসব মেডিকেল সেন্টার থেকে ফিট সার্টিফিকেট নিয়ে মালয়েশিয়া গিয়ে আনফিট হয়ে বহুকর্মী নিঃস্ব হয়ে শূন্য হাতে দেশে ফেরত আসে। যার দায়ভার বেস্টিনেট এবং এর দোসর মেডিকেল সেন্টার কেউই নেয়নি। বিস্ময়কর হলেও সত্য যে আমাদের মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে আজও বেস্টিনেট (বাংলাদেশ) লিমিটেড অথবা বেস্টিনেট এসডিএন বিএইচডির কাছে কোনো ব্যাখ্যাই চায়নি। এ ১৭টি মেডিকেল সেন্টারের অনুমোদন সম্পর্কে মালয়েশিয়া সরকারকে কখনও কোনো চিঠিও দেয়নি। এখানেও আমাদের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নীরবতা প্রশ্নবিদ্ধ। মালয়েশিয়া সরকারের একমাত্র অনুমোদিত সব বিদেশি শ্রমিককের স্বাস্থ্য পরীক্ষার সংস্থা ফোমেমা বাংলাদেশি শ্রমিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার ক্ষেত্রে মান নিয়ন্ত্রণ ও পর্যবেক্ষণ সহযোগিতার আগ্রহ প্রকাশ করে চিঠি দিলেও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে তাদের সিদ্ধান্ত জানায়নি।