স্টাফ রিপোর্টার: মনোহরগঞ্জের হাসনাবাদ ইউপি আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি, লুটপাট ও স্বেচ্ছাসারিতার অভিযোগ করেছেন একই এলাকার খোরশেদ আলম ও নুর আলম নামে দুই আওয়ামী লীগ নেতা। তারা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ উত্থাপন করে দুদকে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন। ইউপি চেয়ারম্যান কামাল হোসেন সংবাদ সম্মেলন করে তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ মিথ্যা ও ষড়যন্ত্র বলে জানান।
চেয়ারম্যান বিরুদ্ধে যত অভিযোগ:
হাসনাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান কামাল হোসেন ৪০ দিনের কর্মসূচির প্রতি প্রকল্পে প্রায় ৪ লাখ টাকার মধ্যে মেম্বারদেরকে ১ লাখ টাকার মাটির কাজের টার্গেট দিয়ে গত ৩ বছরে ৩০টি প্রকল্পের ৯০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন । চেয়ারম্যান কামাল ৪০ দিনের কর্মসূচির ননওয়েজ খাতের ৫% প্যালাওয়াল নামে মাত্র প্রকল্প দিয়ে স্থানীয় মানরা পাকা রাস্তা থেকে ঈদগাহ পর্যন্ত ১ লাখ ৬২ হাজার টাকা, নেয়ামতপুর পাটারী বাড়ি থেকে মসজিদ পর্যন্ত ৯৪ হাজার টাকা, বাদুয়াড়া গজারিয়া পুকুরের পশ্চিম পাড়ে রিটার্নিং ওয়াল নির্মাণে ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা, বাদুয়াড়া মধ্যপাড়া প্যালাসাইটিং ৭৯ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন। বাস্তবে যে প্রকল্পগুলোর নামে টাকা উত্তোলন করা হয়েছে এগুলোর কোনো অস্তিত্ব নাই। আলীনকিপুর স্কুল থেকে চৌধুরী বাড়ি রাস্তায় ৩ বছরে ৯টি প্রকল্পের মাধ্যমে ১৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। যার মধ্যে ১% এডিবি এলজিএসপি জেলা পরিষদ বরাদ্দ রয়েছে।
চেয়ারম্যান কামাল হোসেন প্রতি ওয়ার্ডে পানি নিষ্কাশনের জন্য আরসিসি পাইপ ক্রয় বাবদ উপজেলা এডিবির ৩ বছরে ৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন। টিআর, কাবিখা, কাবিটা ৩ বছরে ১ টাকারও মাটির কাজ না করিয়ে সম্পূর্ণ টাকা আত্মসাৎ করেন। তাছাড়া সোলার ও আর্সেনিকমূক্ত নলকূপ, বিভিন্ন ভাতার কার্ড চেয়ারম্যানের আত্মীয় স্বজনদের মাঝে বিতরণ করার অভিযোগ করা হয়।
চেয়ারম্যান কামাল একই ইউপির তালতলা নুরানী মাদ্রাসার মাঠ ভরাট ৪০ দিনের কর্মসূচি দিয়ে ৩৫ ট্রাক্টর মাটি ফেলে ৩ লক্ষ ৯২ হাজার টাকা উত্তোলন করে নিয়েছেন। এভাবে অনেক অভিযোগ স্থানীয়দের কেউ প্রতিবাদ করলে তাদেরকে হুমকি-ধামকি এবং মামলা-হামলার ভয়ভীতি দেখিয়ে থাকেন।
অতি দরিদ্রদের জন্য বরাদ্দকৃত ৪০ দিনের কর্মসূচির আওতায় ব্যাংকের তালিকাভুক্ত উপকারভোগীদের সই (স্বাক্ষর) চেয়ারম্যান কামাল তার অনুগত সাইফুল মেম্বারের মাধ্যমে নকল করে কৃষি ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করেন। তার আধিপত্যের কাছে জিম্মি থাকায় ইউনিয়ন পরিষদের অন্যান্য মেম্বাররা তার স্বেচ্ছাচারিতা অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে মুখ খোলেন না।
তদন্ত প্রক্রিয়া:
বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ, একই স্থানে প্রতিবছর সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প দেখিয়ে বরাদ্দকৃত অর্থ আত্মসাৎ, ক্ষমতার দাপট প্রদর্শণ, স্বেচ্ছাচারিতা, আওয়ামী লীগের দলীয় কর্মীদেরকে হয়রানিসহ বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ আমলে নিয়ে দুদক কর্তৃপক্ষ কুমিল্লা জেলা প্রশাসককে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দেয়। যার স্মারক নং ৪২৯৪০, তারিখ ৩১/১২/২০১৮ইং। জেলা প্রশাসক সরেজমিনে তদন্ত না করে ১৫ দিনের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেওয়ার জন্য মনোহরগঞ্জের প্রাক্তন উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামীম বানুকে সরেজমিনে গিয়ে তদন্ত করে ১৫ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দেয়ার জন্য নির্দেশ দেন। কিন্তু উপজেলা নির্বাহী অফিসার গড়িমসি করে অযথা সময়ক্ষেপণ করেন। পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রকৌশলী আল আমিন সর্দারকে তদন্তভার দেয়া হয়।
সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত নিয়ে অভিযোগকারীদের সংশয়:
যে দপ্তরের অধীনে দুর্নীতি, সেই দপ্তরেরই অফিসার দুর্নীতি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হওয়ায় সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে অভিযোগকারীরা। তাদের অভিযোগ, তদন্তকারী উপজেলা প্রকৌশলী আল আমিন সর্দার সরেজমিনে তদন্ত কিংবা তাদেরকে না ডেকে চেয়ারম্যানের সাথে সমঝোতার ভিত্তিতে তদন্ত রিপোর্ট তৈরি করেছেন।
অভিযোগকারীরা তদন্তকারী কর্মকর্তা উপজেলা প্রকৌশলী আল আমিন সর্দারের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন বলে জানান।
দুদকে দেয়া অভিযোগ মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমুলক বলে সংবাদ সম্মেলনে জানালেন ইউপি চেয়ারম্যান কামাল হোসেন:
এদিকে হাসনাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান কামাল হোসেন সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলন করে তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমুলক বলে দাবি করেন।
লিখিত বক্তব্যে ইউপি চেয়ারম্যান কামাল হোসেন বলেন, যারা মদ, জুয়া, মাদক ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সাথে জড়িত, সালিশী বৈঠকের নামে সাধারণ মানুষের উপর অবিচার, জুলুম, নির্যাতন করে, অবৈধভাবে খাস জায়গা দখলের চেষ্টা করে, বিদ্যুতের নাম ভাঙিয়ে জনসাধারণের কাছ থেকে অর্থ হাসিলের চেষ্টা করে, তিনি তাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার বিধায় এসব অপকর্মে জড়িতরা তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে আসছে। জনসাধারণকে ষড়যন্ত্রকারীদের অপপ্রচারে কর্ণপাত না করার আহবান জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, ইউপি সদস্য দ্বীন ইসলাম, শাহ আলম, মোখলেছুর রহমান, আলমগীর হোসেন, সাইফুল ইসলাম, মনিরুজ্জামান, কাজী মজিবুল হক, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহবায়ক হাজী নুরুল ইসলাম, যুগ্ম আহবায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা মাষ্টার শাহজাহান, মাষ্টার মোবারক উল্লাহ, সদস্য দেলোয়ার হোসেন প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহবায়ক আবুল কালাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা ইফসুফ জামান, মহরম আলী, ইউপি সদস্য বকুল বেগম, জমিলা বেগম, মনোয়ারা বেগম, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক জাকির হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহবায়ক ছিদ্দিকুর রহমান, ছাত্রলীগ সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন, সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম স্বপন সহ এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত উপস্থিত ছিলেন।
সর্বশেষ:
মনোহরগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী আল আমিন সর্দার সরেজমিনে অভিযোগের তদন্ত না করায় এবং অভিযোগকারীদের তদন্তের বিষয়ে এ পর্যন্ত যোগাযোগ না করায় দুদকে অভিযোগকারী দুই আওয়ামী লীগ নেতা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে দুদক কর্মকর্তাকে দিয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে তদন্ত করার জন্য পুনরায় দুদকে লিখিত আবেদন জমা দিয়েছেন।