ডেস্ক রিপোর্ট: বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া বর্তমানে খুবই ভয়াবহ জীবন-যাপন করছেন। জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন তিনি- এমনই মন্তব্য করেছেন দলের সিনিয়র যুগ্ন মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। আজ বৃধবার (১৮ ডিসেম্বর) নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন তিনি।
এসময় রিজভী বলেন, ‘খালেদা জিয়া বর্তমানে ভয়াবহ জীবন-মৃত্যুর সংকটের মধ্যে রয়েছেন। তিনি হাঁটাচলা করতে পারেন না। খেতে পারছেন না। হাত ও পায়ের ছোট ছোট জয়েন্টগুলোসহ শরীরের বিভিন্ন জয়েন্ট ফুলে গেছে এবং এতে তীব্র ব্যথা অনুভূত হচ্ছে। জয়েন্টগুলো শক্ত ও বাঁকা হয়ে যাচ্ছে। চিকিৎসার অভাবে হাইলি অ্যাক্টিভ ডিফরমিং, রেমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশনসহ বেশ কয়েকটি রোগ চরম আকারে পৌঁছেছে। তীব্র অসুস্থতায় কাতরালেও ডাক্তার আসেন না। ডাক্তার ঠিকমত ওষুধ দিচ্ছেন না। রাত্রে ঘুমাতে পারেনা। ফাস্টিংয়ের তার সুগার থাকছে-১৪। তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. শামীম এবং ডা. মামুনকে বেগম জিয়ার স্বাস্থ্য পরিক্ষায় যেতে দেয়া হচ্ছেনা। বাস্তবে তার কোন চিকিৎসায়ই হচ্ছে না এবং ঔষধও দেয়া হচ্ছে না।’
তিনি আরো বলেন, ‘দীর্ঘ এক মাসের বেশি সময় পর কারারুদ্ধ বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার স্বজনদের দেখা করতে দেয়া হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর। বেগম জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা নিয়ে আদালতে পেশ করা মেডিকেল বোর্ডের রিপোর্টের সঙ্গে তার শারীরিক অবস্থার বাস্তবে কোনো মিল পাননি তার বোনসহ পরিবারের সদস্যরা। আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে বিনা চিকিৎসায় তিলে তিলে নিঃশেষ করাটাই এই সরকারের অভিপ্রায়। বাস্তবে তাই হতে চলেছে এখন।’
রিজভী বলেন, ‘আদালতে সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা নিয়ে মেডিকেল বোর্ডের রিপোর্টের নামে পেশ করা হলো গণভবনের ফরমায়েশী এক চোখা রিপোর্ট। প্রথমে সঠিক রিপোর্ট তৈরী হলেও সরকার প্রধানের নির্দেশে বদলে ফেলা হয় সেই রিপোর্ট। প্রচন্ড অসুস্থতায় জীবনের হুমকির মুখে থাকা মানুষকে কিভাবে সুস্থ বলে চিকিৎসকরা রিপোর্ট দিতে পারে? চিকিৎসকরা হুকুমের অনুগত হবেন এই দৃষ্টান্ত পৃথিবীর কোথাও নেই। যেখানে চিকিৎসকদেরও সরকারের কথা শুনে রোগীর শারিরীক পরিক্ষার রিপোর্ট দিতে হয়। এটি শেখ হাসিনার চরম কর্তৃত্ববাদী দুঃশাসনের একটি নমুনা।’
তিনি বলেন, ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে কারো কারো বিচার হয়েছে। আবার কেউ কেউ আত্মীয়তার বন্ধনের কারনে দিব্যি বহাল তবিয়তে আছেন। সাম্প্রতিক সময়ে রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করতে গিয়ে আরেক কেলেঙ্কারির জন্ম দিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। অন্যকে ফাঁসাতে গিয়ে এবার আওয়ামী লীগ নিজেরাই ফেঁসে গেছে। প্রকাশিত রাজাকারের তালিকায় দেখা যায়, অধিকাংশই আওয়ামী লীগের চিহ্নিত নেতা কর্মী। এতে জনগণ বিস্মিত নয়, কারণ ৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন কিনা এ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। প্রকাশিত তালিকায় প্রমাণিত হয়েছে, জনগণের সেই আশংকাই সত্যি হয়েছে।’
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘আওয়ামী লীগ মূলত স্বাধীনতার মুল স্পিরিটের বিরোধী। মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা হচ্ছে গণতন্ত্র-সাম্য-মানবিক মর্যাদা-এবং ন্যায় বিচার। এর কোনোটিই আওয়ামী রাজনীতির ঐতিহ্যে নেই। এদের ঐতিহ্য ময়দান থেকে বিরোধীদেরকে নিশ্চিহ্ন করে নিজেদের অবৈধ ক্ষমতাকে দখলে রাখা। আওয়ামী লীগের অনিবার্য সারসত্য হচ্ছে এরা একনায়ক সুলভ মনোভাবের কর্তৃত্ববাদী নিষ্ঠুর শাসক যার সাথে কেবল হালাকু খাঁ, আইয়ুব, ইয়াহিয়া ও টিক্কা খানেরই বৈশিষ্ট্যের সাথেই মিল রয়েছে। ৭১ এর পাকিস্তানি শাসকরা জণগনের ম্যান্ডেটকে স্বীকার করেনি, গণতন্ত্র হত্যা করে, নারী নির্যাতনসহ পাইকারী হারে বাংলাদেশের জণগনকে হত্যা করে ঠিক তেমনিভাবে আওয়ামী লীগের হাতে বারবার গণতন্ত্র হত্যা হয়ে একদল কায়েম হয়েছে, নারী ও শিশু নির্যাতনের মহাসমারোহ চলছে, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নির্বিচারে হত্যা, ঘুম ও খুন অব্যাহত রয়েছে। এই সরকারের পতন ছাড়া দেশের বিরাজমান গুমোট অবস্থা দুর হবেনা।’