ডেস্ক রিপোর্ট:
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থীর মধ্যে বিএনপির ইশরাক হোসেনের চেয়ে সম্পদে এগিয়ে আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপস। আবার দায়-দেনায়ও এগিয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থী।
জানা যায়, আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপসের বার্ষিক আয় প্রায় ১০ কোটি টাকা। তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদও প্রায় সোয়া শ’কোটি টাকা।
অপরদিকে তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী ইশরাক হোসেনের বার্ষিক আয় কোটি টাকারও কম। তার অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ সাড়ে ৫ কোটি টাকার মতো। ইশরাক দুর্নীতির মামলাতেও অভিযুক্ত।
মনোনয়নপত্রের সঙ্গে দাখিল করা হলফনামা বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য জানা গেছে। হলফনামায় প্রার্থীরা শিক্ষা, সম্পদ ও দায়-দেনার বিবরণ দিয়েছেন।
ঢাকার দুই সিটিতে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ছিল মঙ্গলবার। নিয়ম অনুযায়ী, মনোনয়নপত্রের সঙ্গে হলফনামায় স্বেচ্ছায় সম্পদ ও দায়দেনার বিবরণ দিয়েছেন প্রার্থীরা।
বিবরণে দেখা গেছে, ৪৮ বছর বয়সী (জন্ম ১৯ নভেম্বর ১৯৭১) শেখ ফজলে নূর তাপস সুপ্রিম কোর্টে আইন পেশায় নিয়োজিত। ২০০২ ও ২০০৩ সালে তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা হলেও হাই কোর্ট তা খারিজ করে দেয়। শেখ ফজলুল হক মণি ও শামছুন্নেছা আরজু মণির ছেলে তাপস ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। সংসদ সদস্য পদ ছেড়ে মেয়র হওয়ার লড়াইয়ে নেমেছেন তিনি।
বার-এট-ল (ব্যারিস্টার) ডিগ্রিধারী তাপসের কৃষি খাত থেকে বছরে আয় ৩৫ হাজার টাকা, বাড়ি/দোকান ভাড়া বাবদ ৪২ লাখ ৫০ হাজার ৩৯৮ টাকা, শেয়ার, সঞ্চয়পত্র/ব্যাংক আমানত থেকে ৭ কোটি ৮৫ লাখ ৪২ হাজার ৬৪৮ টাকা, আইন পেশা থেকে ১ কোটি ৪৬ লাখ ৫০ হাজার এবং চাকরি থেকে বেতন বাবদ ৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা।
তার অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ১০৮ কোটি ৯০ লাখ ৮৯ হাজার ৬৯৩ টাকা। তার নগদ টাকা ২৬ কোটি তিন লাখ তিন হাজার ৫৫৭ টাকা। অন্য খাতের মধ্যে ব্যাংকে জমা ১ কোটি ৫৩ লাখ ৭৭ হাজার ২০৭ টাকা, কোম্পানির শেয়ার ৪৩ কোটি ২৭ লাখ ৫৫ হাজার ৪০৪ টাকা এবং পোস্টাল, সেভিংস সার্টিফিকেটসহ বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্রে বা স্থায়ী আমানত ৩৫ কোটি ২২ লাখ টাকা।
এর বাইরে তার স্থাবর সম্পত্তি রয়েছে। এগুলো হল- কৃষিজমি ১০ দশমিক ৫০ কাঠা, অকৃষি জমি ১০ কাঠা (মূল্য ৩৮ লাখ ১৯ হাজার ৫০ টাকা), মতিঝিল, পূর্বাচল ও সাভারে তিনটি দালান (মূল্য ৮ কোটি ৩৭ লাখ ২০ হাজার ৩১৩ টাকা) এবং একটি বাড়ি (মূল্য ৩ কোটি ২৮ লাখ ৫০ হাজার ৮৯৪ টাকা)। আগাম বাড়ি ভাড়া বাবদ তাপস ৪ কোটি ৬৭ লাখ ৯৬ হাজার ২৫০ টাকা নিয়েছেন।
২০০২ সালে দুদক আইনে এবং ২০০৩ সালে শ্রম আদালতে তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়েছিল। কিন্তু দুটি মামলা আদালত খারিজ করে দিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে বর্তমানে কোনো মামলা নেই। হলফনামায় তাপস তার স্ত্রীর আয় ও সম্পদেরও বিবরণ দিয়েছেন।
অন্যদিকে বিএনপি প্রার্থী ৩৩ বছর বয়সী প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন (জন্ম ৫ এপ্রিল ১৯৮৭) ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা ও ইসমত আরার ছেলে।
ইশরাক হোসেন পেশায় ব্যবসায়ী। তার বিরুদ্ধে ঢাকার বিশেষ জজ আদালতে (৪) একটি দুর্নীতির মামলা বিচারাধীন। এমএসসি ডিগ্রিধারী ইশরাক চারটি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক এবং একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক।
ডাইনামিক স্টিল কমপ্লেক্স নামে একটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারহোল্ডার তিনি। তার আয়ের উৎসগুলোর মধ্যে রয়েছে- বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে লভ্যাংশ ৪৬ লাখ ৮০ হাজার ৩৮৯ টাকা, চাকরি থেকে ৩৫ লাখ ৪৯ হাজার ৯৯৬ টাকা ও ব্যবসা থেকে ৪ লাখ ২৪ টাকা। ইশরাকের অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৪ কোটি ৯৮ লাখ ২ হাজার ৭২ টাকা এবং স্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৭৮ লাখ ৫১ হাজার ৫২৪ টাকা।
অস্থাবর সম্পদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- নগদ ৩৩ হাজার ১০৯ টাকা, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শেয়ার বাবদ ২ কোটি ৯৬ লাখ টাকা এবং ব্যাংকে জমা ১ কোটি ৩৭ লাখ ১৮ হাজার ৬৩ টাকা। তার দায়দেনার পরিমাণ ৬৫ লাখ ৪৬ হাজার ৭৪৩ টাকা। এর মধ্যে মা ইসমত আরার কাছ থেকে ৬১ লাখ ৩৭ হাজার ২২২ টাকা তিনি নিয়েছেন। বাকি টাকা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন।