জাতির উন্নতির জন্য শিক্ষার বিকল্প নেই। শিক্ষিত জাতি ও শিক্ষিত সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে সকল মানুষের মাঝে শিক্ষার আলো থাকতে হবে। নিরক্ষর মানুষের মাঝে অক্ষরজ্ঞান ছড়িয়ে দিতে জ্ঞান অর্জনের বিকল্প নেই। কিন্তু এই জ্ঞান ছড়িয়ে দিতে সমাজ-রাষ্ট্র ছাড়াও ব্যক্তিগত উদ্যোগের প্রয়োজন রয়েছে। শিক্ষাবিহীন জাতি মূল্যহীন। জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে আত্মবিশ্বাস ও দৃঢ় মনোবল নিয়ে নিজের যা সামর্থ তা নিয়েই অন্ধকারের কালিমা দুর করে আলোকিত মানুষ গড়ার যুদ্ধে নেমেছেন গাড়ীচালক ফারুক। আর তাকে এ কাজে সহযোগিতা করছেন তারই সহধর্মিনী ও একজন কলেজ ছাত্রী ছাবেরা আক্তার। ফারুকের এ কাজ দেখে গ্রামের অনেকে তাকে পাগল ছাড়াও অনেক টিটকারী করে বিভিন্ন কথা বললেও এ নিয়ে তার কোন আক্ষেপ নেই। সে তার লক্ষে অটুট থাকে। ফারুক একটি ছোট্র চাকুরী করে। নিজ আয় দিয়ে সংসার চালানোর পরেও এলাকার সুবিধা বঞ্চিত শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা উপকরনসহ শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছে নিরবে। কখনও বাড়ীর উঠানে, রাস্তার পার্শে কিংবা বাড়ী বাড়ী নিজেই চাকুরীর অবসরে ছুটছেন ফারুক নামের এই যুবক শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে। অভাবের তাড়নায় শিক্ষা বঞ্চিত এই যুবক অস্টম শ্রেণী পাশের পর আর পড়ালেখা করার সুযোগ পায়নি। অভাবের যাতাকলে পিষ্ট সেই যুবক ফারুক নিজে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হওয়ার জ্বালা নিভানোর জন্য সিদ্ধান্ত নেন, জীবনে এক টাকা আয় করলে অন্ততঃ পচিশ পয়সা এলাকার বঞ্চিত, অভাবী, দুঃস্থ, দরিদ্রদের লেখাপড়ায় সহায়তা করে যাবো। অর্থ উপার্জন করলেও ফারুকের মনে প্রশান্তি আসে নাই। নিজের অশান্ত মনকে শান্তনা দিতে গরীব-দুঃস্থদের মাঝে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ফারুক। মোঃ ফারুক হোসেন দিনাজপুর সদর উপজেলার কাশিমপুর গ্রামের মালিপুকুর মসজিদ পাড়ায়। মৃত মাহবুব হোসেনের পূত্র ফারুক হোসেন । ফারুক বর্তমানে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) এর রাজশাহী উপ-পরিচালকের (কঃ গ্রোঃ) দপ্তরের অনিয়মিত গাড়ী চালক। দৈনিক মজুরী ভিত্তিতে সে গাড়ী চালায়।
এদিকে ফারুক জানায়, তার ২ভাই ও ৪বোনের মধ্যে ৩বোনের বিয়ে হয়েছে। এখন বোন, ভাই, মা সহ নিজ ¯ী¿কে নিয়ে তার সংসার। তার স্ত্রী ছাবেরা আক্তার দিনাজপুর কেবিএম কলেজের কৃষি ডিপ্লোমা ৪র্থ সেমিস্টারের ছাত্রী। আমার সামর্থ অনুযায়ী আমি এলাকার ২শ থেকে আড়াই শত শিক্ষার্থীদের মাঝে খড়ি-মাটি, খাতা, পেন্সিল, কলম, বইসহ শিক্ষা উপকরন বিনামূল্যে বাড়ী বাড়ী পৌছে দেয়। ফারুকের বাড়ীর আঙিনায় বসে বয়স্ক মহিলাদের শিক্ষাদান। বিনামূল্যের শিক্ষাদানের কাজটি করেন তার স্ত্রী ছাবেরা আক্তার। এখানে ৪০জন মহিলা এতে অংশ নেন। চাকুরীতে রাজশাহীতে থাকার কারণে আমার স্ত্রী এ কাজটি করেন। তবে আমি প্রতি মাসে এখানে আসি। ১৯৯৭ সালে শিক্ষা উপকরন দিয়ে অভাবী ছাত্র-ছাত্রীদের সহায়তা করা শুরু করলেও ২০০৫ সাল থেকে নিজ গ্রামের সর্বত্র এটা ছড়িয়ে দেয়। এসব শিশুদের শিক্ষার বিকাশ ঘটাতে একটি স্কুল প্রতিষ্টা করতে চায়। জানিনা এটা কবে সম্ভব হবে। তবে আশা আমি ছাড়িনি। অভাবের তাড়নায় লেখা পড়তে গিয়ে শিশুরা ঝড়ে না পড়ে এবং বয়স্ক যারা শিক্ষালাভে বঞ্চিত হয়েছে তাদেরও মাঝে শিক্ষা দিয়ে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে চায়। ফারুকের এই উদ্যোগ সকলের মাঝে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে।