লাইসিয়াম নামে প্রাচীন গ্রিসে একটি স্কুল ছিলো। ব্যবসায়িক উদ্দ্যেশে নয়। স্কুলটি তৈরি হয়েছিলো মানুষ তৈরির জন্য। এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন দার্শনিক এরিস্টটল। জ্ঞান বিতরণের জন্য, জ্ঞান আহরণের জন্য বহু দূর থেকে ছাত্র এবং শিক্ষকরা আসতেন এখানে। দার্শনিক প্লেটোর সুযোগ্য ছাত্র হিসেবে তখন সবদিকেই এরিস্টটলের খ্যাতি। তিনি তাঁর এই প্রতিষ্ঠানে রাষ্ট্র পরিচালনার নীতি, দর্শন, বিজ্ঞানের শিক্ষা দিয়ে গেছেন নিরলসভাবে। এই আধুনিককালে দেশের নানা প্রান্তে ব্যাঙের ছাতার মতো স্কুল, কলেজ, কোচিং সেন্টার, বিশ্ববিদ্যালয় গজিয়ে উঠছে। রাস্তার মোড়ে, বাসার ছাদে, মার্কেটের নিচতলায় গড়ে উঠছে এসব প্রতিষ্ঠান। মানুষ তৈরির এ প্রতিষ্ঠানগুলো কিন্তু বিনামূল্যে শিক্ষা দিচ্ছে না। উচ্চ সেশন চার্জ, বেতন দিয়ে ভর্তি করা হয় শিক্ষার্থীদের। এছাড়াও নানাবিধ ফি আদায় করা হয় বছর জুড়ে। কোথাও কোথাও সরকার নির্দেশিত সিলেবাসও মানা হচ্ছে না। বইয়ের লম্বা তালিকা বছরের শুরুতেই ধরিয়ে দেওয়া হয় অভিভাবকদের হাতে। এরপর ব্যাগের বইয়ের ভারে সারাটা বছর একজন ছোট্ট শিক্ষার্থীর থাকে দমবন্ধ অবস্থা। এরপর ঘরে ফিরে হোমওয়ার্ক, প্রাইভেট, কোচিং। অর্থাত্ যেভাবেই হোক সন্তানকে ভালো রেজাল্ট করতেই হবে। ফার্স্ট তাকে হতেই হবে। ভালো ছাত্র হওয়ার রেসে দৌড়াতে গিয়ে ভালো মানুষ হওয়ার রাস্তায় কি আমরা পিছিয়ে পড়ছি না?
সন্তানকে শুধুই পাঠ্যবইমুখী করতে গিয়ে তার ভিতরের সৃজনশীলতা, নৈতিকতা, মূল্যবোধ, বিনয়, শ্রদ্ধাবোধের গুণগুলো নষ্ট করে ফেলছি কিনা। শিক্ষার্থীরা যদি শুধুমাত্র শিক্ষিত হওয়া কিংবা চাকরি লাভের আশায় পড়ালেখা করে। তবে তার কাছে থেকে দেশের প্রত্যাশা খুব কমই থাকে। আমরা কি অপ্রত্যাশিতভাবেই একটি আত্মকেন্দ্রিক প্রজন্ম তৈরি করছি?
দেশের অনেক শিক্ষার্থী ম্যাজিস্ট্রেট হতে চান। কিন্তু কতোজন শিক্ষার্থী বঙ্কিমচন্দ্রের মতো ম্যাজিস্ট্রেট সাহিত্যিক হতে চান? অধিকাংশ শিক্ষার্থী ডাক্তার হতে চান, কিন্তু কতোজন ডা. এম আর খান, ডা. মোঃ ইব্রাহীম হতে চান? প্রকোশলী হতে চান অনেকেই। কিন্তু এফ আর খানের মতো প্রকোশলী কতোজন হতে চান? অনেকেই ডক্টরেট ডিগ্রি পেতে চান। কিন্তু ডক্টর মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ হতে চান কতোজন? কেউ কেউ শিক্ষক হতে চান।
কিন্তু মাস্টারদা সূর্যসেনের মতো হতে চান কতোজন?
সমস্যাটা কার?
শিক্ষার্থীর! শিক্ষকের! অভিভাবকদের! শিক্ষা ব্যবস্থার! নাকি সময়ের!
সমস্যা যারই হোক। সমাধান করতে হবে আমাদের সবাইকেই। সব শিক্ষার্থীই শুধু সার্টিফিকেট অর্জনের জন্য শিক্ষিত যেন না হয়। তারা শিক্ষিত হোক মানুষ হওয়ার জন্য। আলোকিত মানুষ হওয়ার জন্য।
লেখক :শিক্ষার্থী, টিটি কলেজ, রাজশাহী