এ বছর এমবিবিএস প্রথম বর্ষ ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম স্থান অর্জন করেছেন ইশমাম সাকীব অর্ণব। তার টেস্ট স্কোর ৮৭.০০। অর্ণবের গ্রামের বাড়ি খুলনার ফায়ার ব্রিগেড রোড এলাকায়। বাবা আবদুস সোবহান একজন বেসরকারি চাকরিজীবী ও মা হাবিবুন নাহার গৃহিনী। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় জাতীয় মেধায় ১ম হওয়া এ মেধাবী তরুণ খুলনার সেন্ট জোসেফ স্কুল থেকে এসএসসি ও এমএম সিটি কলেজ থেকে এইচএসএসসি কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন। আসুন জেনে নিই, ইশমামের সফলতার গল্প-
বেড়ে ওঠার গল্প:
ইশমাম যশোরের একটি স্কুলে প্লে নার্সারি শেষ করেন। এরপর কুষ্টিয়া তারপর খুলনার সেন্ট যোসেফস স্কুলে এসএসসি পাস করেন। পরে মজিদ মেমোরিয়াল সিটি কলেজ থেকে এইচএসসি উত্তীর্ণ হন। ইশমাম বলেন, খুলনা জিলা স্কুলে ভর্তি হওয়ার চেষ্টা করেছি। কিন্তু আব্বু সরকারি চাকরি না করায় অফ টাইমে ভর্তি নেয়নি।
ছোটবেলার স্বপ্ন:
ছোটবেলায় প্রথমে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ইচ্ছে ছিল। পড়ে এসে মেডিকেলে প্রতি ঝুঁকেছি। আমার ছোট ভাই (অর্কণ) স্পেশাল চাইল্ড। তার অটিজম আছে। এজন্য আমার মনে হলো-এই (অটিস্টিক) শিশুদের জন্য আমি বড় হয়ে কিছু একটা করবো। কারণ, বাংলাদেশে এ বিষয়ে খুব একটা স্পেশালিস্ট পাওয়া যায় না।
আগামী দিনের স্বপ্ন:
ইশমাম বলেন, বাংলাদেশের সোশ্যাল ইকোনমিক সেক্টরে অনেক অসহায় বিদেশে এসব শিশুর জন্য অনেক ফ্যাসিলিটি রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে তাদেরকে বার্ডেন হিসেবে মনে করা হয়। আমি চাই, এরাও স্বাভাবিক মানুষের মত স্বাভাবিক জীবনে আসুক, তারা যেন তাদের জীবন স্বাভাবিকভাবে পার করতে পারে। এসব অসহায় শিশুদের জন্য কিছু করতে চাই। আর আমার ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছার পেছনে এটাই সবসময় বেশি প্রাধান্য পেয়েছে। আমার ছোট ভাইয়ের মতো অন্যদের সেবা করার মানসিকতা নিয়েই ভবিষ্যতে বাংলাদেশের একজন ভালো নিউরোসার্জন হতে চাই। নিউরো বায়োলজিক্যাল যে ডিজ-অর্ডারগুলো আছে, যেমন অটিজম টাইপের বা অন্য ধরনের অসহায় শিশুদের নিয়ে কাজ করতে চাই।
সাফল্যের নেপথ্যে:
তার এ কৃতিত্বপূর্ণ সাফল্যের জন্য শিক্ষকদের বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ইশমাম বলেন, ‘যারা আমার পেছনে শ্রম দিয়েছেন, আমার শিক্ষকমণ্ডলীর কাছে আমি কৃতজ্ঞ। যাদের কাছে আমি একদিন হলেও পড়েছি, তাদের সবার প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই।’
এ ব্যাপারে মেডিকেলের ভর্তি প্রস্তুতি হিসেবে কোচিং সেন্টারের মডেল টেস্টগুলোও তাকে বিশেষ সহায়তা করেছে বলে জানান অর্ণব। তিনি বলেন, তাদের গাইডলাইনগুলো আমাকে বিশেষ সহায়তা করেছে। আমি তাদের প্রতিও কৃতজ্ঞ।
প্রথম হওয়ার অনুভূতি:
রেজাল্টের দিন তেমন অনুভূতি কাজ করেনি ইশমামের। কিন্তু যখন তার চারপাশ থেকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা আসা শুরু করলো, তখন থেকে তার ভালোলাগা শুরু করলো। এ বিষয়ে ইশমাম বলেন, প্রথমদিন কোন কিছু ফিল (অনুভব) করিনি। কিন্তু পরের দিন থেকে অন্যরকম অনুভূতি শুরু হয়েছে, যা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না। তখন মনে হলো একটা কিছু করে ফেলেছি।
ভর্তিপরীক্ষার প্রস্তুতি:
ভর্তিপরীক্ষা প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে ইশমাম বলেন, আমি পাঠ্যবইটা ভালোভাবে পড়েছি। এর পাশাপাশি কোচিংয়ের কোশ্চেন সলভ্ করেছি। মূলত কোচিংয়ের কোশ্চেন সলভটাই একটা ফ্যাক্টর।
তিনি বলেন, আমি বেশিক্ষণ পড়তাম না। প্রয়োজন অনুযায়ী পড়েছি। সময় হিসাব করে কখনও পড়িনি। যখন আমার মনে হতো, সিলেবাসটি শেষ করতে হবে তখন সেটি শেষ না হওয়া পর্যন্ত পড়তাম। সেটা ৪ ঘণ্টা হোক কিংবা ১০ ঘণ্টায় হোক। আমার মনে হয়, সবারই সেটা করা উচিত।
আল্লাহর কাছে প্রার্থনা:
ভর্তিপরীক্ষার আগে কী প্রত্যাশা করতেন এমন প্রশ্নের জবাবে ইশমাম বলেন, আল্লাহর কাছে খুব চেয়েছিলাম-যাতে খুব ভালো কিছু হয়। আল্লাহ আমার চাওয়া পূরণ করেছেন।
ইশমামের আরও কিছু প্রতিভা:
২০১৪ সালে জাতীয় গণিত অলিম্পিয়াডে বিভাগীয় পর্যায়ে প্রথম স্থান লাভ করে জাতীয় পর্যায়ে অংশ নেন ইশমাম সাকীব অর্ণব। ২০১৫ সালে ভাষা প্রতিযোগিতাতেও বিভাগীয় পর্যায়ে প্রথম হয়ে জাতীয় পর্যায়ে অংশ নেন। এছাড়াও ডিবেটিং করেছেন নিয়মিত।
অবসরে:
অবসরে বই পড়েন ইশমাম। বিশেষ করে গল্পের বই তার বিশেষ প্রিয়। এছাড়া বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে যাওয়া তার ভীষণ পছন্দ। এছাড়াও তিনি গানের প্রতি বেশ দুর্বল। গানের একজন বিশেষ শ্রোতা তিনি। নিজেও গান করেন ইশমাম।
যা কিছু প্রিয়:
প্রিয় বই: সব ভালো বই
প্রিয় লেখক: হুমায়ূন আহমেদ।
প্রিয় শিল্পী: যেকোনো ভালো গানের শিল্পী
প্রিয় রঙ: গাঢ় লাল
প্রিয় খাবার: বিরিয়ানী
প্রিয় খেলা: ক্রিকেট
প্রিয় খেলোয়াড়: মাশরাফি
প্রিয় মুহূর্ত: পরিবারের কেউ অথবা যে কোনো মানুষের খুশি হতে দেখার মুহূর্ত।
(সাক্ষাৎকারটি মেডিভয়েসের জানুয়ারি ২০১৯ প্রিন্ট সংখ্যায় প্রকাশিত)