বিশেষ প্রতিনিধি: করোনা পরিস্থিতিতে সারাদেশের ন্যায় কুমিল্লার লাকসাম-মনোহরগঞ্জের শ্রমজীবি মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। এতে নিম্নআয়ের মানুষরা চরম বিপাকে পড়েছে। চলমান এমন দুঃসময়ে অনেকটা নিবর স্থানীয় বিএনপি। দলের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় রাজনীতিতে এখানকার ডজনখানেক শিল্পপতি থাকলেও মানবিক সাহায্য নিয়ে তাদেও কাউকে এগিয়ে আসতে দেখা যাচ্ছে না।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, করোনায় অঘোষিত লকডাউনে লাকসাম-মনোহরগঞ্জের মানুষ ঘরবন্দি হয়ে পড়েছেন। কৃষিনির্ভর, খেটে খাওয়া দিনমজুর অধ্যুষিত এ এলাকার বিশাল জনগোষ্ঠির সাহায্যার্থে ইতিমধ্যেই সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি অনেক বিত্তবানও এগিয়ে এসেছেন। রাজনৈতিক, সামাজিক, পেশাজীবি ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো খাদ্য সহায়তা নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ালেও মানবিক বিপর্যয়ের এ দুঃসময়ে পুরোপুরি নিরব স্থানীয় বিএনপি। এখানকার ডজনখানেক শিল্পপতি কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় বিএনপি’র রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকলেও তারা এখন পর্যন্ত খাদ্যসামগ্রী বিতরণে কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেননি। এতে একদিকে সাধারণ মানুষের মধ্যে হতাশা অন্যদিকে নেতা-কর্মীদের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
বিগত জাতীয় নির্বাচন পূর্ববর্তী সময়ে বিএনপি’র সাথে সম্পৃক্ত অধিকাংশ শিল্পপতি রাজনীতিকদের লাকসাম-মনোহরগঞ্জে অবাধ বিচরণ ছিল লক্ষ্যনীয়। বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান বিশেষ করে বিয়ে, মৃত ব্যক্তির জানাজা ও কুলখানিতে দলবেঁধে তারা ঢাকা থেকে ছুটে আসতেন। কিন্তু নির্বাচনকালীন সময় এবং এর পরবর্তী সময় থেকে পাল্টে যেতে শুরু করে চিত্র। বর্তমানে কোন সামাজিক অনুষ্ঠানাদিতে তাদেরকে তেমন দেখা যায়না।
বিএনপি’র জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক কর্ণেল (অব.) এম. আনোয়ারুল আজিম, শিল্প বিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম, কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক শ্রমবিষয়ক সম্পাদক ড. রশিদ আহমেদ হোসাইনী, মনোহরগঞ্জ উপজেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ইলিয়াছ পাটোয়ারী, উপজেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি শাহ সুলতান খোকন, লাকসাম পৌরসভা বিএনপি’র আহবায়ক মফিজুর রহমান সহ আরো কয়েকজন শিল্পপতি কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় বিএনপি’র রাজনীতিতে সম্পৃক্ত থাকলেও দেশের চলমান দুঃসময়ে তাদের নিরব ভূমিকা নেতা-কর্মীদের ভাবিয়ে তুলেছে।
গত বছরের (২০১৯ সালের) ডিসেম্বরে দুই শীর্ষ নেতা আনোয়ারুল আজিম ও আবুল কালামের মধ্যে দীর্ঘদিনের বিরাজমান দ্বন্দের অবসানের মাধ্যমে পারস্পরিক সমঝোতায় দুই উপজেলার তিনটি সাংগঠনিক ইউনিটের সমন্বিত এবং অবিভক্ত আহবায়ক কমিটি গঠিত হওয়ার পরও রাজনীতিতে কোন চমক দেখা যায়নি। দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে এ পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে কমিটি ঘোষণা কিংবা পরবর্তী কর্মপরিকল্পনাও নির্ধারণ করতে পারেননি। তিনটি সাংগঠনিক ইউনিটের আহবায়করা দলীয় সকল পর্যায়ে নিষ্ক্রিয় থাকায় নেতা-কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এমনকি করোনা পরিস্থিতিতে দলের অধিকাংশ অসচ্ছল নেতা-কর্মী মানবেতর জীবন যাপন করলেও তাদের পাশে শীর্ষ নেতাদের কাউকে দেখা যাচ্ছে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একাধিক নেতা-কর্মীর অভিযোগ, লাকসাম-মনোহরগঞ্জ বিএনপি এখন অনেকটাই নেতৃত্বশূন্য। বর্তমানে মহামারী করোনা বিপর্যস্ত সময়েও কুমিল্লা-৯ নির্বাচনী এলাকায় বিএনপি’র কোন সাংগঠনিক ইউনিটেই হতদরিদ্র জনসাধারণ কিংবা মামলা-মোকদ্দমায় জর্জরিত দলের অসহায় ও অস্বচ্ছল নেতা-কর্মীদের সাহায্যার্থে কোন তৎপরতা দেখা যাচ্ছেনা। এতে হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে অনেকটাই দিশেহারা বৃহৎ এ অঞ্চলের বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
অনেকের অভিযোগ, আমাদের শীর্ষ নেতারা এখন কারো খবর নেয়া তো দূরের কথা কোন নেতা-কর্মীর ফোনও রিসিভ করেন না। রাজনৈতিক মামলায় নিজ খরচে আমাদেরকে হাজিরা দিতে হয়। করোনা পরিস্থিতিতে এ এলাকার গরীব-অসহায় মানুষ ও বিএনপি’র অস্বচ্ছল নেতা-কর্মীরা তাদের মানবিক সহযোগিতার দিকে তাকিয়ে থাকলেও তারা পুরোপুরিই নিরব। যা রহস্যজনক বলে জানান তারা।
নেতা-কর্মীদের অভিযোগ বিষয়ে জানার জন্য বিএনপি’র জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক কর্ণেল (অব.) এম. আনোয়ারুল আজিম, শিল্প বিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম, লাকসাম উপজেলা বিএনপি’র আহবায়ক নুরুন্নবী চৌধুরীর মোবাইলে একাধিকবার চেষ্টা করেও তারা কেউ ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
স্থানীয় শীর্ষ নেতাদের মধ্যে একমাত্র লাকসাম পৌরসভা বিএনপি’র সভাপতি ও পৌরসভার সাবেক মেয়র মফিজুর রহমানকে ফোন করে কথা বলা সম্ভব হয়। চলমান পরিস্থিতিতে স্থাণীয় বিএনপি’র উদ্যোগ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, অবস্থা অনুকূলে না থাকায় আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে কাউকে সহযোগিতা করতে পারছি না। তবে তিনি ব্যক্তিগতভাবে তার প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মচারীসহ বিভিন্ন সংগঠনকে সাধ্যমতো সহযোগিতা করছেন বলে জানান।
এদিকে, দেশের চলমান পরিস্থিতিতে বিএনপি’র জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক কর্ণেল (অব.) এম আনোয়ারুল আজিম তার ভেরিফাই ফেসবুকে এক বার্তায় লাকসাম-মনোহরগঞ্জের প্রতিটি গ্রাম/মহল্লায় বিত্তবানদের সামর্থ অনুযায়ী সাহায্য নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ করেন। তিনি করোনাভাইরাস থেকে মুক্তি পেতে সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে সর্বদা নিরাপদে থাকার পরামর্শ দেন।