মনির আহমেদ:
গোটা বিশ্ববাসী এক অভিন্ন শত্রুর সাথে লড়াই করছে দীর্ঘদিন। Covid-19 বা করোনা ভাইরাস নামের এই মরনব্যাধী মহামারী ইতিমধ্যেই বিশ্বের প্রায় লক্ষাধিক মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। সারাবিশ্বে ভয়াবহ এই ছোঁয়াচে ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ১৮ লক্ষ। বৈশ্বিক বিপর্যয়ে পরিনত হয়েছে করোনা ভাইরাস। গত একমাসেরও বেশী সময় ধরে মরনঘাতি এই ভাইরাস প্রিয় মাতৃভুমি বাংলাদেশেও তান্ডব চালাচ্ছে জোরেশোরে । ইতিমধ্যে ঘনবসতিপূর্ণ বিশাল জনগোষ্ঠীর বাংলাদেশেও এই মহামারীতে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৭’শ এর কাছাকাছি। এই ভাইরাসে সরকারি হিসাবেই আজ পর্যন্ত মৃত্যুর কাছে হার মেনেছে ৩৪ জন। দেশের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যম সুত্র থেকে জানা যায়, মহামারী করোনা ভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে সারাদেশে গড়ে প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ জনের মৃত্যু হচ্ছে। সমগ্র দেশে ছড়িয়েপড়া এই মহামারীতে আক্রান্ত ও মৃতের সঠিক পরিসংখ্যান নিয়েও বিতর্ক বা প্রশ্ন উঠছে প্রতিমুহুর্তে। দেশের সরকার প্রধান থেকে শুরু করে সাধারন নাগরিকরা পর্যন্ত এই মরণব্যাধী ভাইরাসের ভয়াবহ প্রাদুর্ভাব নিয়ে ভীত এবং উদ্বিগ্ন। অবশ্য দেশে এই ভয়াবহ ভাইরাস সংক্রমন শুরুর আগ থেকেই সরকারের পক্ষ থেকে এই ভাইরাস প্রতিরোধে বহুমুখী তৎপরতা শুরু হয়েছে। যা ইতিমধ্যেই দেশে বিদেশে প্রশংসিত হয়েছে। করোনায় সংক্রমন প্রতিরোধে এক এক করে দেশের অধিকাংশ জেলা/উপজেলা লকডাউন ঘোষণা করা হলেও অঘোষিতভাবে কার্যত পুরো দেশটাই লকডাউন। এই লকডাউন কতদিন পর্যন্ত বলবৎ থাকবে সঠিক ভাবে তাও বলতে পারছেনা কেউ।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সকল মাননীয় মন্ত্রীগণ, মাননীয় সংসদ সদস্যগণ, স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিগণ এবং দেশের ঊধ্র্বতন সকল প্রশাসনিক কর্মকর্তাগণ Covid-19 বা করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। তাদের পাশাপাশি আমাদের সশস্ত্র বাহিনী, র্যাব, পুলিশ সহ গণমাধ্যমকর্মীদের ভূমিকাও ব্যপক প্রশংসনীয়। এই ভাইরাসে আক্রান্তদের সেবা দিতে গিয়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় আমাদের দেশেও একাধিক ডাক্তার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, গণমাধ্যমকর্মীরা সংক্রমিত হয়ে এখন জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। নি:সন্দেহে মহামারী করোনা মোকাবেলার এই যুদ্ধে দেশের এসব সাহসী ব্যক্তিদের জাতীয় বীর বলা যায়। এক কথায় বলতে গেলে গোটা দেশ ও জাতি একটি ভাইরাস থেকে জীবন বাঁচাতে প্রাণপনে লড়াই করছে। দেশের মধ্যবিত্ত এবং হতদরিদ্র বিশাল জনগোষ্ঠি অনেকেই এই সময়ে কর্মহীন। এই পরিস্থিতিতে খাদ্যাভাবের আশঙ্কাও করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশিষ্টজনদের ধারনা আসন্ন পবিত্র রমজান মাসে চলমান সঙ্কট এখনকার চেয়েও আরও বেশী ঘনীভূত হতে পারে।
অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, যখন গোটা বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে প্রিয় মাতৃভুমি বাংলাদেশও মরণব্যাধি করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় লড়াই করছে ঠিক তখনও কিছু অসাধু ব্যাক্তি বিশেষ দেশের সিংহভাগ হতদরিদ্র নাগরিকের জন্য সরকার কতৃক বরাদ্ধকৃত রিলিফের চাল নিয়ে হরিলুটে মেতে উঠেছে। আবার কেউ কেউ বলছেন, দলমত নির্বিশেষে সকল দরিদ্র জনগোষ্ঠির জন্য সরকারের বরাদ্ধকৃত খাদ্যসামগ্রী বিতরণেও দলীয়করণ করা হচ্ছে। দেশের শীর্ষস্থানীয় জাতীয় দৈনিকের অনলাইনভার্সন গুলো ক্লিক করলে করোনা পরিস্থিতির পাশাপাশি এসব অনাকাঙ্খিত সংবাদও পাওয়া যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। ভয়াবহ দুর্যোগ মুহুর্তে গণমাধ্যমে এসব সংবাদ নিতান্তই দু:খজনক। এমন ভয়াবহ দুর্যোগকালীন সময়েও আমরা যদি শোধরাতে না পারি তাহলে আমরা আর কবে শোধরাবো? দেশ ও জাতীর ভয়াবহ ক্রান্তিকালে আমাদের সকলের মাঝে অবশ্যই সর্বশক্তিমান আল্লাহ ভীতি থাকতে হবে। আমাদেরকে লোভ-লালসার ঊর্ধ্র্ব থেকে অবশ্যই সততার সহিত দায়িত্ব পালন করতে হবে। আমাদেরকে সহমর্মী হতে হবে। সমতা বা সমবন্টনের মানসিকতা রাখতে সকলের মাঝে। সর্বোপরি দলমত, জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে একে অপরের প্রতি ভালবাসা থাকতে হবে।
ব্যাক্তিগত মতামত হিসাবে মহামারী করোনা পরিস্থিতিতে নিম্নে কিছু প্রস্তাবনা…
প্রথমত, মহামারী করোনা মোকাবেলায় যে সকল জনপ্রতিনিধি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ডাক্তার, নার্স, গণমাধ্যমকর্মী সাহস এবং সততার সহিত দায়িত্ব পালন করছেন, তাদেরকে বর্তমান পরিস্থিতি উত্তরনের পর রাষ্ট্রীয় খেতাবে ভূষিত করার ঘোষণা দেয়া যেতে পারে। যেমনটা দেয়া হয়েছিল মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে। এতে তারা দায়িত্ব পালনে আরও বেশী উৎসাহিত হবে।
দ্বিতীয়ত, খাদ্যসামগ্রী বিতরণের ক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধিদের সাথে সেনাবাহিনী সহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সংযুক্ত করা যেতে পারে। এতে সমতা বা সমবন্টনের পাশাপাশী লুটতরাজ ঠেকানো সহজ হবে।
তৃতীয়ত, লকডাউন চলাকালীন একটি নির্দিষ্ট সময় যেহেতু খাদ্যসামগ্রীর দোকান খোলা রাখার নির্দেশনা রয়েছে, সেইক্ষেত্রে অন্তত ওই সময়ে সিমীত পরিসরে কিছু রিক্সা বা ভ্যানগাড়ি সচল রাখা যেতে পারে। এতে চাল, ডাল, তরিতরকারি সহ খাদ্যসামগ্রী কেনাকাটা করা মানুষজন ভোগান্তি থেকে রক্ষা পাবে।
চতুর্থত, দেশের সকল জেলা/ উপজেলার বড় বড় কাঁচাবাজার গুলোকে এলাকাভিত্তিক বিভিন্ন স্কুল বা খেলার মাঠে সম্প্রসারিত করা যেতে পারে। পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সমন্বিত ব্যবস্থাপনায় ন্যায্যমূল্যের ভ্রাম্যমাণ দোকানের ব্যবস্থাও করা যেতে পারে। এতে বড় বাজার গুলোতো লোকসমাগম বা ভীড় প্রতিরোধ করা সহজ হবে।