শাখাওয়াত হোসেন মামুন:
(সন ৩১২০)
হাইপার গ্লাক্সি ক্লাউড প্লাটফর্ম ব্যবহার করে শিক্ষক ক্লাস নিচ্ছেন। শিক্ষকের অবস্থান মঙ্গলগ্রহে। ক্লাস হচ্ছে বৃহস্পতিগ্রহে। ইতিহাসের ক্লাস চলেছে। শিক্ষক মনিটরের দিকে তাকিয়ে বললেন,- ‘১১০০ বছর আগে পৃথিবী নামক গ্রহে একটি সভ্যতা ছিল বঙ্গীয় সভ্যতা। এই জাতির ধ্বংসের ইতিহাস সম্পর্কে কিছু বলো…. ‘
ইমো খুব মেধাবী ছাত্র, সে তার চোখের রেটিনায় বসানো মনিটরের দিকে তাকিয়ে, ও ভোকাল কর্ডে বসানো ন্যানো মাক্রোফোনে বলা শুরু করলো … স্যার বঙ্গীয় সভ্যতা গড়ে উঠেছিল বঙ্গোউপসাগরের পাশে। ঐ জাতিটির নাম ছিল বাঙ্গালী জাতি। তারা ছিল খুব মেধাবী, সাহসী কিন্তু লাজ লজ্জাহীন। মেধাবীর প্রমান পাওয়া যায়- একটা সময় ছিল যখন এই জনপদের মানুষ পৃথিবী গ্রহের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল এবং পৃথিবীর অনেক বড় বড় আবিস্কার ও গবেষনার সাথে এই জাতিসত্ত্বা মানুষের সম্পর্ক পাওয়া যায়।
সাহসী- তারা ছিল অত্যন্ত সাহসী, তেমন কোন অস্ত্র ও ট্রেনিং ছাড়াই তারা ১৯৭১ সনে তৎকালীন পৃথিবীর একটি সুসজ্জিত সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে অসীম সাহসে মাত্র নয় মাসে তাদের দেশ স্বাধীন করেছিল। কিন্তু দেশটি স্বাধীন হওয়ার পর, বিভিন্ন সময়ে ক্ষমতাশীনদের ক্ষমতার অপব্যবহারের কারনে জাতিটি বাঘ থেকে ধীরে ধীরে বিড়াল হওয়া শুরু করেছিলো।
আর তারা লজ্জাহীন ছিল- কারন এই জাতী ধ্বংসের কয়েক দশক পূর্বে তাদের মধ্যে ঘুষ, চুরি, ধর্ষন, খুন ইত্যাদি একটি সাধারন ব্যাপার হয়ে উঠেছিল। তাছাড়া এসব করে তারা কোন লজ্জাও পেতো না! এবং সমাজের বাকী মানুষগুলি প্রতিদিন সংবাদ পত্র নামক কাগজে লিখা একধরনের তথ্য প্রদানকারী উপকরনের মাধ্যমে এসব তথ্য পেতো, তথ্য গুলি পড়ে তারা সবাই দৈনন্দিনের মতো তাদের স্বাভাবিক কাজ কর্মে চলে যেতো, যেনো কিছুই হয়নি। স্যার জানেন! তারা নাকি ৬ মাস বাচ্চা থেকে শুরু করে ৭০ বছরের বুড়িকেও ধর্ষন করে মেরে ফেলতো!!! এমনকি মেয়ে শিশু শুধু নয় ছেলে শিশুরাও বাদ যেতো না !!!
– এই বলে ইমোর মুখ ঘৃনায় ও আতংকে ফ্যাকাশে হয়ে গেলো।
রোবট স্যার ক্ষেপে গিয়ে বললেন, তোমাকে প্রশ্ন করেছি একটা আর তুমি উত্তর দিচ্ছো আরেকটা। আমি বলেছি,- এই সভ্যতা ধ্বংস হয়েছে কিভাবে তা বলো?
ইমো থতোমতো খেয়ে বললো,- ‘স্যার বলছি’ । আজ থেকে ১১০০ বছর আগে Covid 19 (করোনা) নামক এক ভয়াবহ ভাইরাস এসেছিল পৃথিবী গ্রহে। পৃথিবীর প্রায় প্রত্যেক জাতি গোষ্টির ৩০% – ৪০% মানুষ এতে মারা যায়। কিন্তু একমাত্র বঙ্গীয় সভ্যতা তখন পুরোপুরি ধ্বংস হয়। ঐ সময় পুরো পৃথিবীর মানুষ যখন কোয়ারেন্টাইনে তখন এই মানুষ গুলি অকারনে রাস্তায় ঘুরাঘুরি করতো। যেহেতু তাদের পূর্বপুরুষদের সাহস ছিল ভয়াবহ, তাই তারা তা জাহির করার জন্য করোনা রোগকে পাত্তাই দেয়নি। তারা অহংকার করে বলতো- ‘আমরা করোনার চেয়ে শক্তিশালী’।
আবার, তাদের পুর্বপুরুষরা মেধাবী ছিলো বলে তারা ঘরে বসে নিজেরা যে যার মতো ভাইরাসের ঔষধ ও করোনা চিকিৎসার উপায় তৈরী করতে লাগলো, এবং বোকার মতো তা নিজেদের মধ্যে প্রয়োগ করতে লাগলো। যা আদতে কোন কাজে আসেনি, কারন ঐ সময় তাদের অপরিকল্পিত শিক্ষা ব্যবস্থার কারনে তাদের মেধার বিকাশ ছিলো না। তাদের পূর্বপুরুষরা মেধাবী হলেও পরবর্তিতে তারা মেধার চর্চা ঠিক ভাবে করেনি বলে জাতিটি মেধা শূন্য হয়ে গিয়েছিল।
অন্যদিকে, করোনার পর তারা দুর্ভিক্ষে পড়েছিল। যদিও পৃথিবীতে তারা খাদ্য উৎপাদনে ছিল প্রথম কাতারে, কিন্তু দুর্যোগ কালীন সময়ে তাদের নির্লজ্জ মানুষ গুলি সরকারী ত্রানের চাল সহ বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী লুকিয়ে রেখেছিল অতি লাভের আশায়। প্রত্নতাত্ত্বিক বিশ্লেষনে জানা যায়, তাদের দেশের বিভিন্ন জায়গার মাটির নিচে কয়েক বছরের খাদ্য লুকানো ছিল, কিন্তু অন্যদিকে কোটি কোটি মানুষ মারা গেছে না খেয়ে। শেষ দিকে যখন ডাক্তার সহ প্রয়োজনীয় সেবাদানকারী মানুষগুলি না খেয়ে মারা যায় তখন চিকিৎসা সেবা না পেয়ে সেই চোর মজুমদাররাও একদিন মরে শেষ হয়ে যায়।
স্যার এককথায় বলা যায়,- অতি অহংকার, সাহসের অযথা বর্হিপ্রকাশ, মেধার অপব্যবহার ও অযথা ঘুরাঘুরি করতে গিয়ে একটি সভ্যতা নিঃশেষ হয়ে গেছে।
স্যার অযথা ঘোরাঘুরি নিয়ে একটা প্রবাদ এখনও খুব জনপ্রিয়,- “মহামরিতে যখন ঘরে ঘরে মানুষ মরছিলো, বাঙালরা তখন অযথাই রাস্তায় ঘুরছিলো”।
বি.দ্র. এটি একটি কাল্পনিক গল্প, যদিও আমি জানি অনেকের সাথে কোন কোন চরিত্র মিলে যেতে পারে। যদি মিলে যায় তবে তা কাকতালীয় নয়, আপনার কৃতকর্মের কারনে মিলতে পারে, এবং লেখক এজন্য ক্ষমাপ্রার্থী নয়।
লেখক: ভাইস চেয়ারম্যান, ভাইয়া গ্রুপ
উপদেষ্টা, কালের কন্ঠ শুভ সংঘ।