জহিরুল কাইউম ফিরোজ:
মৃত্যু! একটা শব্দ, যা থামিয়ে দেয় জাগতিক সামগ্রিকতাকে। একটা দেহের প্রস্থান মানে আশেপাশে অনেকগুলো জীবিত সত্ত্বার থমকে যাওয়া। করোনার এই থমথমে সময়ে হাসপাতালগুলোতে অন্যান্য রোগীদের আসাও থেমে নেই। কেউ থ্যালাসেমিয়াও আক্রান্ত, কেউ ভুগছে রক্তশূন্যতায়, কারো বা প্রয়োজন গর্ভকালীন জরুরি রক্ত। রক্তের প্রয়োজনে লাকসামের হাসপাতালগুলোর দেয়ালে সবার আগে যাদের নাম চোখে পড়ে, তারা হচ্ছে ভিক্টোরি অব হিউম্যানিটি অর্গানাইজেশন। কিন্তু, অস্থির সময়ে রাষ্ট্র যখন চূড়ান্তভাবে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ঘর হতে বের হওয়ার ব্যাপারে, সেখানে রক্তদাতা পাওয়া বড্ড মুশকিল। অথচ, ওরা থেমে নেই।

ভিক্টোরি অব হিউম্যানিটির প্রত্যেক সদস্য চোখ কান খোলা রাখছে। কখন ডাক পড়ে তাদের। অসহায়ের আর্তনাদ তারা সইতে পারে না। চরম সংকটেও ওরা মানুষের পাশে আছে। এপ্রিল মাসের ১৯ দিনে ৭০ ব্যাগ রক্ত দান করেছে সংগঠনের সদস্যরা! তাদেরই একজন সাইফুল ইসলাম সুজন। ঝকঝকে হাসির স্বচ্ছ বালক। তিনি জানান- ‘একদিনে এমনকি তিন জায়গায় রক্তদাতা নিয়ে ছুটে গেছি। বাড়িতে পরিবারের সদস্যরা চিন্তা করেন। মা বারবার ফোন দিয়ে খবর নেন। তবে দিনশেষে রক্ত ম্যানেজ করে দিতে পারলে যে তৃপ্তিটুকু পাই এর সাথে কোন কিছুর তুলনা হয় না। সকাল হোক বা রাত, যখনই রক্তের প্রয়োজন হবে আমরা তৈরি আছি।’ এই অবস্থায় যানবাহন পেতে কষ্ট হয়। সুজন কৃতজ্ঞতা জানান বন্ধু আরিয়ানের প্রতি। আরিয়ান তার মোটরসাইকেল নিয়ে সুজনের সঙ্গেই ছোটেন রক্তদাতা নিয়ে।
একজন অসুস্থ মানুষকে রক্ত দিয়ে যে কতটা আনন্দ পাওয়া যায় তা বলে বোঝাবার নয়। আর যদি কাউকে রক্ত দিয়ে তার জীবন ফেরানো যায় সে আনন্দের ভূমিকা হয়ত কোন মহা কবির হাতেও লেখা হয়ে উঠে নি! কেউ না লিখলেও সুঁচের ফোঁড়ে দেহ থেকে বের হয়ে ব্লাডব্যাগে জমা প্রতিটি রক্তকণিকায় লেখা থাকে মানবিক উচ্ছ্বাসের অদৃশ্য শব্দমালা, যার রচয়িতা ভিক্টোরি অব হিউম্যানিটি অর্গানাইজেশনের সদস্যরা।
©