মহান আল্লাহ মাঝে-মধ্যে তাঁর বান্দাদের ভয়, মুসিবত ও বিপদ দিয়ে পরীক্ষা করেন। এ ধরনের সময় মুমিনরা আক্ষেপ, বিচলিত আচরণ করবে না। মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের এ ধরনের পরিস্থিতিতে ধৈর্য ধরতে বলেছেন। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং জান-মাল ও ফল-ফলারির স্বল্পতার মাধ্যমে। আর হে নবী! আপনি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দিন।’ সূরা বাকারা, আয়াত ১৫৫।
প্রথমত মনে রাখতে হবে, জমিনে যত ধরনের বিপদ ও সংকট দেখা দেয়, তার সবই মানুষের কৃতকর্মের ফল। আল্লাহ বলেন, ‘মানুষের কৃতকর্মের কারণে জলে ও স্থলে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ে; যার ফলে তাদের কোনো কোনো কর্মের শাস্তি তিনি তাদের আস্বাদন করান, যাতে তারা (তাদের কৃতকর্ম থেকে) ফিরে আসে।’ সূরা রুম, আয়াত ৪১। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যখন কোনো জাতির মধ্যে প্রকাশ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে তখন সেখানে মহামারী আকারে প্লেগের (মহামারী) প্রাদুর্ভাব ঘটে। তা ছাড়া এমন সব ব্যাধির উদ্ভব হয়, যা আগেকার লোকদের মধ্যে কখনো দেখা যায়নি।’ ইবনে মাজাহ।
হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘তিনি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্লেগ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। আল্লাহর নবী তাঁকে জানালেন, এটি হচ্ছে এক ধরনের শাস্তি। আল্লাহ যার ওপর তা পাঠাতে ইচ্ছা করেন, পাঠান। কিন্তু আল্লাহ মহামারীকে মুমিনের জন্য রহমত বানিয়েছেন। অতএব প্লেগে কোনো বান্দা যদি ধৈর্য ধরে এবং এ বিশ্বাস নিয়ে নিজ শহরে অবস্থান করতে থাকে যে আল্লাহ তার জন্য যা নির্ধারিত করে রেখেছেন, তা ছাড়া আর কোনো বিপদ তার ওপর আসবে না, তাহলে সেই বান্দা শহীদের মর্যাদা লাভ করবে।’ বুখারি। অতএব মহামারীতে ভয়ে বিহ্বল না হয়ে ধৈর্য ও আল্লাহর রহমত কামনার মাধ্যমে তা কাটিয়ে ওঠা মুমিনের কর্তব্য।
মহামারীতে করণীয় : যে কোনো বিপদ আপদে বান্দা তার পাপের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে ও শেষ আশ্রয় হিসেবে তাঁরই দিকে ফিরে আসবে- এটাই মহান প্রতিপালকের প্রত্যাশা। আল কোরআনের একাধিক স্থানে বিপদে আল্লাহমুখী হওয়ার নির্দেশনা রয়েছে। তাই মহামারীর সময় মুমিনের প্রধান কাজ হলো নিজের গুনার জন্য আল্লাহর কাছে বিনীত হয়ে অশ্রুসিক্ত নয়নে ক্ষমাপ্রার্থনা করা। আল্লাহ বলেন, ‘আমি তাদের শাস্তি দ্বারা পাকড়াও করলাম, কিন্তু তারা তাদের প্রতিপালকের প্রতি বিনয়াবনত হলো না এবং কাতর প্রার্থনাও করল না।’ সূরা মুমিনুন, আয়াত ৭৬।
বেশির ভাগ মহামারীই সংক্রামক। তাই রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহামারীর সংক্রমণ রোধে আক্রান্ত অঞ্চলে যাতায়াত নিষিদ্ধ করেছেন। মুমিন বান্দারা ইমান ও আন্তরিকতার সঙ্গে ধৈর্য ধারণ করবে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘কোথাও মহামারী দেখা দিলে এবং সেখানে তোমরা অবস্থানরত থাকলে সে জায়গা থেকে চলে এসো না। অন্যদিকে কোনো এলাকায় এটা দেখা দিলে এবং সেখানে তোমরা অবস্থান না করলে সে জায়গায় যেও না।’ তিরমিজি।
মহামারীতে পড়ার দোয়া : হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রোগব্যাধি থেকে বাঁচার জন্য রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পড়তেন, ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই শ্বেত, উন্মাদনা, কুষ্ঠ এবং সব দুরারোগ্য ব্যাধি (ভাইরাস) থেকে।’ আবু দাউদ। হাদিসে আরও এসেছে, যে ব্যক্তি এই দোয়াটি সন্ধ্যায় তিনবার পাঠ করবে, সকাল পর্যন্ত সে কোনো হঠাৎ বিপদে আক্রান্ত হবে না। আর যে তা সকালে তিনবার পাঠ করবে, সে কোনো হঠাৎ বিপদে আক্রান্ত হবে না। দোয়াটি হলো, ‘বিসমিল্লা-হিল্লাজি লা ইয়াদুররু মাআসমিহি শাইউন ফিল আরদি ওয়ালা ফিস সামায়ি, ওয়াহুয়াস সামিউল আলিম।’ আবু দাউদ।
লেখক : খতিব, মণিপুর বাইতুর রওশন (মাইকওয়ালা) জামে মসজিদ মিরপুর, ঢাকা।