এবার শেয়ার বাজার লুটকারীদের বিরুদ্ধে শুরু হতে যাচ্ছে শুদ্ধি অভিযান। ক্যাসিনোসহ চলমান অভিযানে আতঙ্কে আছেন পুঁজিবাজার কারসাজিতে জড়িতরা। এ অভিযানে তাদেরও আইনের আওতায় নিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীরা।
তাদের বক্তব্য, এর আগে পুঁজিবাজারে কারসাজি করে যারা শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে, তাদেরও আইনের আওতায় নিয়ে আসা উচিত। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কারসাজি করে যারাই বাজার থেকে অর্থ উত্তোলন করেছে, তারা সবাই অপরাধী। তারা কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়।
চলমান অভিযানের প্রেক্ষিতে ওয়াংফু সিকিউরিটিজের বিনিয়োগকারী আজমল হোসেন জানান, ক্যাসিনোতে যারা যায়, বা যারা বিনিয়োগ করে, তারা প্রচুর অর্থের মালিক। তাদের সব অর্থই অবৈধ। আবার এর আগে পুঁজিবাজার থেকে যারা কারসাজি করে অর্থ উত্তোলন করেছে, তারাও অপরাধী। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। সরকারের উচিত হবে যারা পুঁজিবাজারের কারসাজিতে জড়িত তাদেরও আইনের আওতায় নিয়ে আসা। এমন অভিযানে অবশ্যই তারা আতঙ্কিত।
তিনি বলেন, যারা গ্রেপ্তার হয়েছে, তারা সবাই ক্ষমতাসীন দলের নেতা। ২০১০ সালেও বর্তমান সরকার ক্ষমতা থাকার সময়েই কারসাজি করে পুঁজিবাজার থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সরকারের উচিত হবে এখনই তাদের চিহ্নিত করা।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যেখানে বেশি লাভ সেখানে বিনিয়োগ হবে এটাই স্বাভাবিক। চলমান অভিযানে অনেক ক্যাসিনো বন্ধ হয়ে গেছে। বড় বড় বিনিয়োগকারী যারা ক্যাসিনোতে বিনিয়োগ করেছিলেন, তাদের অনেকে এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হয়েছেন, আবার অনেকে আছেন নজরদারিতে। ফলে তাদের কেউ যদি পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে থাকেন তাহলে তারা এখন বিরত থাকবেন। এটাই স্বাভাবিক। ফলে পুঁজিবাজারে এর কোনো প্রভাব নেই, সেটা বলা ঠিক হবে না। একই সঙ্গে এর আগে যারা কারসাজি করে বাজার থেকে অর্থ উত্তোলন করেছে, তাদের কাছে এই অভিযানও আতঙ্কের।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চলতি বছরের শুরুতে ডিএসইর প্রধান সূচক যেখানে ৫ হাজার পয়েন্টে ছিল, এখন তা নেমে এসেছে ৪ হাজার পয়েন্টে। আর লেনদেন গেল দুই মাসে ৩০০ কোটি টাকা থেকে ৫০০ কোটি টাকায় ওঠানামা করছে। তবে মূলধনেও বড় ধরনের পরিবর্তন হয়েছে।
বাজার বিশ্লেষক আবু আহম্মেদ জানান, পুঁজিবাজার যদিও কালো টাকা সাদা করার বড় জায়গা হিসাবে দেখা হয়। এ বাজারে কারসাজিকারীদের জন্য অবশ্যই যে কোনো অভিযানই আতঙ্কের। সে হোক ক্যাসিনোর মালিক আবার হোক পুঁজিবাজার কারসাজিকারী।
তিনি বলেন, পুঁজিবাজারের চলমান মন্দা থেকে বের করতে দ্রুত তারল্য সমস্যার সমাধান করা উচিত। নতুন কোম্পানির পুঁজিবাজারে নিয়ে আসা নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা কাজ করছে। বিশেষ করে দেশের বেসরকারি মোবাইল ফোন অপারেটর রবিকে পুঁজিবাজারে আনার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। যদিও রবির সঙ্গে সরকারের বকেয়া কর পরিশোধ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। আশা করা যায়, কোম্পানিটি দ্রুত এসব সমস্যা সমাধান করে পুঁজিবাজারে আসবে। তিনি আরও বলেন, নতুন ভালো কিছু কোম্পানির এখন দ্রুত তালিকাভুক্ত করা উচিত। এর আগে যেসব কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়েছে, সেগুলোর সার্বিক অবস্থাও নাজুক। এছাড়া অনেক কোম্পানির বছরের পর বছর বোনাস শেয়ার দিয়ে তাদের মূলধন বাড়িয়েছে। পুঁজিবাজারে এখন তারল্য সমস্যা সমাধানে ব্যাংকগুলোকেও এগিয়ে আসতে হবে।
যদিও ব্যাংকগুলো এখন একেবারেই পুঁজিবাজার বিমুখ। এছাড়া পুঁজিবাজার স্থিতিশীল রাখার জন্য মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলো গঠন করা হলেও এখন সেগুলো একেবারেই অকার্যকর। সার্বিক অবস্থার উন্নয়নে পুঁজিবাজারে নতুন কোম্পানি তালিকাভুক্ত করা এবং তারল্য সমস্যা সমাধানে দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জিত হলে যে কোনো অভিযান বা যে কোনো বিষয় খুব বেশি প্রভাবিত হবে না।
বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সহ-সভাপতি আ ন ম আতাউল্লাহ নাঈম বলেন, পুঁজিবাজারের বর্তমান যে অবস্থা, তাতে মন্তব্য করা কঠিন। তবে বিনিয়োগকারীদের আস্থার জায়গা শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। তারল্য সমস্যা নিয়ে নানামুখী আলোচনা, ব্যাংকের সুযোগ-সুবিধা যাই দেওয়া হোক না কেন, তার চেয়ে বেশি জরুরি বিএসইসির আমূল পরিবর্তন করা। দীর্ঘ সময় ধরে এ কমিশন পুঁজিবাজারের জন্য কাজ করলেও বাস্তবে বিনিয়োগকারীদের জন্য এখানে কিছুই হয়নি। ফলে বিনিয়োগকারীরা এখন পুঁজিবাজারের প্রতি আস্থা অর্জন করতে পারেনি।