আবদুল আজিজ:
বাংলাদেশ একটি জনবহুল দেশ। জনসংখ্যা আমাদের ১ নং সমস্যা। পৃথিবীতে জনসংখ্যার দিক দিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ৮ম। আমাদের এ দেশে দিন দিন যেমন মানুষ বাড়ছে তেমন বাড়ছে বাসস্থান সমস্যা। এক টুকরো জমি, তার উপর সাধ্যমত একটি বাড়ি মানে মাথা গোঁজার ঠাঁই- ব্যস যথেষ্ট। কিন্তু যার জমি নেই বাড়ি আবশ্যক, তার তো আগে জমির ব্যবস্হা করতে হবে।সেক্ষেত্রে যিনি জমি কিনবেন তিনি ক্রেতা এবং যিনি বিক্রি করবেন তিনি বিক্রেতা। ক্রেতা যেমন নিষ্কন্ঠক জমি কিনতে আগ্রহী, বিক্রেতাও তেমন উপযুক্ত ক্রেতা পেতে প্রত্যাশী। এ দু’ পক্ষের মধ্যে সমন্বয় ঘটানোর জন্য কখনো কখনো একজন তৃতীয় ব্যক্তি সক্রিয় থাকেন। যাকে কেউ বলেন মধ্যস্তাকারি কে বলেন ব্রোকার আবার কেউ বলেন রিয়েল ষ্টেট বা হাউজিং সোসাইটি। এখানে সবাই সম্মানিত বলে মনে করি। বিক্রেতার( ১ম পক্ষ দাতা) প্রয়োজন টাকার। ক্রেতা ( ২য় পক্ষ গ্রহীতা) প্রয়োজন জমির। মধ্যস্ততাকারীর প্রয়োজন কি?জ্বি প্রয়োজন আছে বৈকি? তারও টাকার প্রয়োজন।
অবশ্য অনেক মধ্যস্ততাকারী নিজের আত্নীয়র উপকার্থে আত্নীয়র জমি বিক্রিয় করে দিয়ে থাকেন। আবার কেউ আত্মীয়র জন্য জমি ক্রয় করে দিয়ে থাকেন। আবার কেউবা বন্ধ বান্ধবের ব্যবসায়িক প্রয়োজনে। কিন্তু যিনি জমি বিক্রেতার বা ক্রেতার কোন আত্মীয় নন তার কি স্বার্থ? হ্যাঁ স্বার্থ তো আছেই।আর সেটা হচ্ছে টাকা। যেখানে টাকা আছে সেখানে হিংসা, হানাহানি, লোভ-লালসা,খুন খারাবির মত জঘন্য কান্ডকারখানা ঘটে ও যেতে পারে। তাই সম্ভব হলে ক্রেতা ও বিক্রেতা নেগোসিয়েশন করাই উত্তম। মাঝখানে তৃতীয় ব্যক্তির উপস্হিতি না থাকাটাই শ্রেয়।
এখন আসা যাক কাগজ পত্রের প্রসঙ্গে। আপনি ক্রেতা বা বিক্রেতা যেটাই হন আপনার করনীয় হবেঃ
(১) বিক্রেতার করনীয়:
ক. হাল নাগাদ কাগজপত্র যেমনঃ দলিল, পর্চা ( সিএস,এসএ,আরএস,মাঠপর্চা) নামজারি,খাজনার দাখিলা ইত্যাদি ক্রেতাকে দেখানো। খ. জমি যদি কোন ব্যাংকের নিকট দায়বদ্ধ থাকে তা ক্রেতাকে জানানো এবং কাগজপত্র দেখানো। গ. জমির শরিক কতজন এবং তাদের অবস্থান সম্পর্কে ক্রেতাকে জানানো। ঘ.জমির অন্য কোন সমস্যা থাকলে ক্রেতাকে জানানো। ঙ. ক্রেতা সম্পর্কে ভালো করে খোঁজ খবর নেওয়া।
(২) ক্রেতার করনীয়:
ক. জমির হালনাগাদ কাগজপত্র যেমনঃ দলিল, পর্চা ( সিএস, এসএ, আরএস,মাঠপর্চা) নামজারি, খাজনার দাখিলা ইত্যাদি ভালোভাবে যাচাই বাচাই করা। খ. জমির চৌহদ্দি সম্পর্কে ভালোভাবে জানা। গ. কোন ব্যাংকের নিকট দায়বদ্ধতা থাকলে তা খতিয়ে দেখা। ঘ.জমির শরীক সম্পর্কে বিস্তারিত জানা। ঙ. কোনো কারণে জমি অন্য লোকের ভোগদখলে আছে কিনা তা খোঁজ করে দেখা। চ.জমির অন্য কোন সমস্যা থাকলে তা ভালো করে জানা। ছ. বিক্রেতা সম্পর্কে ভালো করে জানা। জমি বেচকনা সম্পর্কে ভালো ধারণা পূর্ব থেকে আপনার না জানা থাকলে কোন অসুবিধা নেই। আপনার শুভাকাঙ্ক্ষীদের সাথে অথবা কোন আইনজীবীর সাথে পরামর্শের মাধ্যমে আপনি করণীয় / বর্জনীয় জানতে ও বুঝতে পারবেন। তবে কথা হলো যে, জমি বেচা কেনায় কৌশলী হলে তাতে লাভ না হোক ক্ষতি হবার সম্ভবনা থাকে না।