আমার নাম মো নুরুল ইসলাম। আমার দেশের বাড়ি টাঙ্গাইল। আমি বর্তমানে গাজীপুর জেলা শ্রীপুর উপজেলায় বসবাস করি। পাশাপাশি শ্রীপুর সদরে রড সিমেন্ট ও ইলেকট্রিক হার্ডওয়ারসহ একটা দোকান দেই। আর্থিক সমস্যার কারণে আমি ব্যবসা বাণিজ্য ভালো চালাতে পারছিলাম না। পরে সোনালী ব্যাংক থেকে ৫ লাখ টাকার সিসি লোন নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করতে থাকি।
এভাবেই নিজের কথাগুলো বলছিলেন এক ভয়ঙ্কর নারীর ফাঁদে পড়া যুবক নুরুল ইসলাম।
নুরুল ইসলাম বলেন, তারপরও রড সিমেন্টের ব্যবসা অনেক টাকা লাগে কিন্তু সেই ভাবে করতে পারতেছিলাম না। নিজের মনের মধ্যে চিন্তা ধারণা ছিল যে বড় কিছু করার। সেই চিন্তাধারা থেকেই বিভিন্ন পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি খোঁজাখুঁজি করি আর কি। একদিন পেপার পড়তে পড়তে হঠাৎ একটি বিজ্ঞপ্তি চোখের নজরে আসে।
বিজ্ঞাপ্তিতে লেখা ছিল পাত্র চাই। পাত্রীর খরচে পাত্রকে কানাডা নিয়ে যাওয়া হবে এবং আর্থিক খরচ সম্পূর্ণ পাত্রী পক্ষের। এই বিজ্ঞাপন দেখে তখন মনের মধ্যে একটি উৎফুল্ল সৃষ্টি হয়। পত্রিকায় দেওয়া মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করা হলে পাত্রী (সানজিদা) আমাকে দেখা করার কথা বলে। তার কথায় আমি দেখা করার জন্য গাজীপুর থেকে ঢাকায় যাই।
তার সাথে দেখা করার পর সে আমাকে কানাডার গ্রীন কার্ড দেখায় সাথে আরো কিছু কাগজ পত্র দেখায় যার ফলে তার প্রতি আমার বিশ্বাস হয়। এরপর তিনি আমাকে বলে আপনি যদি রাজি থাকেন আমি আপনাকে কানাডা নিয়ে যাবো। আপনাকে আমার পছন্দ হয়েছে। এরপর আমরা যার যার মত বিদায় নিয়ে চলে আসি।
এইভাবে আস্তে আস্তে তার সাথে আরও সম্পর্ক তৈরি হয় এবং এই ফাঁকে সে আমার কাছে আমার ভোটার আইডি কার্ড ও প্রয়োজনী কাগজ পত্র সব কিছু চেয়ে নিয়ে নেয়। আর আমার পাসপোর্ট করার কথা বলে আবারও আমাকে উওরায় ডাকে এবং ১০০ টাকার স্টেম্প ও ১৫০ টাকার স্ট্যাম্পে আমার সই নেয়। আর আমাকে বলে এটা উকিল দিয়ে এফিডেফিট কারাতে হবে। পরে সে চলে যায় তার বাসায় আমিও চলে আছি গাজীপুরে।
এরপর একদিন হঠাৎ আমাকে বলে সুখবর আছে। সে আমাকে বলে আমাদের কাবিনের কাগজ এফিডেফিট হয়ে চলে আসছে আমি খুব তারাতারি কানাডা চলে যাবো।
এক সপ্তাহ পর সে আবার আমাকে বলছে সে আমায় বিয়ে করবে। আগে কাবিন হয়েছে কিন্তু বিয়ে হয়নি। তাই বিয়ে করতে হবে। আর বিয়ে করতে গেলে কিছু খরচ আছে। আমার পরিবারের কাছে আমি তো আর তোমায় ছোট করতে পারবো না। তারা তো তোমায় দেখবে তাদের কাছে তো আমি তোমায় খালি হাতে আনতে পারবো না। তখন আমি তাকে প্রশ্ন করি এখন বিয়ে করতে হলে কত খরচ হবে। সে আমায় বলে ৪ থাকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা।
সে বলে একটা গলার হার কিনতেই ১ লাখ কিংবা সোয়া লাখ টাকা লাগে। বিভিন্ন বিষয় নিয়া বলে সাড়ে ৪ লাখ টাকা লাগবেই। তার সাথে কথা হয় আমি আমার দোকানটা ছেড়ে দিবো কি না সে বলে ছেড়ে দাও। তখন আমি বলি আমি যদি বেকার হয়ে যাই তখন ও বলে তুমি তো কানাডা চলেই যাচ্ছো দুই দিন পর দোকান ছাড়তেই হবে। এরপর দোকানের মালামাল ও এডবান্স বাবদ ৩ লক্ষ ১০ হাজার টাকা পাই আর ১ লাখ টাকা হাওলাত (ধার) করি।
এরপর সানজিদার সাথে দেখা করতে উওরায় যাই। সে আমাকে অনেক মিষ্টি নিয়ে আসার কথা বলে। আমি হাউজবিল্ডিং নামার পর সানজিদা আমার জন্য একটি গাড়ি পাঠায় কিন্তু গাড়িতে উঠার পরে দেখি সানজিদা সেই গাড়ির ভিতরেই বসে আছে। সে আমাকে বলে আগে শপিং করে তারপর একসাথে বাসায় যাবে আমিও রাজি হয়ে যাই।
মার্কেটে গিয়ে জুতা থেকে শুরু করে সব কিছুই কিনে দিয়েছি। সে আমার কাছে এক বারও টাকা চায়নি। টাকা আমি আমার কাছ থেকেই দিচ্ছি। সে পছন্দ করছে আমি টাকা দিচ্ছি শুধু। সব কিছু কেনাকাটা যখন শেষ তখন সানজিদা বলে সব কিছু তো আমার জন্যই কিনলে তুমি কিছুই কিনো নাই চলো আমার টাকায় আমি তোমাকে কিছু কিনে দিবো এটা বলে একটা প্যান্টের দোকানে নিয়ে যায়। প্যান্ট পছন্দ হওয়ার পর সে আমাকে প্যান্ট গুলো ট্রায়াল দেওয়ার জন্য ট্রায়াল রুমে পাঠায় এই ফাঁকে সে পালিয়ে যায়। পরে কল দিলে সে এই তো আমি। আবার বলে গেটের সামনে। তারপর নাম্বার বিজি বানিয়ে রাখে। আর কল যায় না তার মোবাইলে।(দেশের বেসরকারি টেলিভিশন যমুনা টিভির ফাঁদ অনুষ্ঠান থেকে করা হয়েছে।)