স্টাফ রিপোর্টার: কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে ত্রাণ চুরির প্রতিবাদ করায় পেরিয়া ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির মজুমদারের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ নেতাকে ছুরিকাঘাতসহ ৬ জনকে কুপিয়ে জখমের এক মাস না যেতেই আবারও তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে উপজেলার বড় সাঙ্গিশ্বর তার নিজ গ্রামে চেয়ারম্যান নেতৃত্বে তার বাহিনীর সদস্যরা এক আইনজীবীর বাড়িতে প্রকাশ্য দিবালোকে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। শুক্রবার জুমআর নামাজ শেষে এ সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে।
প্রতিপক্ষের অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবিরের নেতৃত্বে সন্ত্রাসী হামলায় অংশগ্রহণ করে তার ভাই সোলাইমান মজুমদার, ভাতিজা ফরহাদ, ভাগিনা মাসুম ও সুজন’সহ ৪০-৫০ জনের সন্ত্রাসী গ্রুপ। হামলায় চেয়ারম্যান বাহিনীর ছুরিকাঘাতে ওই গ্রামের মৃত মাস্টার কাজী মোস্তফা কামালের ছেলে অ্যাডভোকেট কাজী নুরে আলম সিদ্দিকের ভাগনী আড়াই বছরের শিশু রাইদা ইসলাম’সহ ৩ জন গুরুতর আহত হয়েছে। আহতরা হলেন ওই আইনজীবীর ছোট ভাই কাজী আবু জাফর (৩৫), কাজী আবু তাহের (৩৭) । আহতদের কুমিল্লা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
অ্যাডভোকেট কাজী নুরে আলম সিদ্দিক সাংবাদিকদের বলেন, চেয়ারম্যান হুমায়ুনের ভাই সোলাইমান আজ ভোর বেলায় জনচলাচল না থাকার সুযোগে বদ-অভ্যাস বসত আমাদের বাড়ির দরজায় মলত্যাগ করতে বসে যায়। এসময় কে বা কহারা তার শরীরে বালু নিক্ষেপ করে বলে সে অভিযোগ করে। পরে আমার ছোট ভাই কাজী আবু জাফর জুম্মার নামাজ পড়ে মসজিদ থেকে বের হলে সোলাইমান তাকে বালু নিক্ষেপের বিষয়ে অভিযুক্ত করে গালমন্দ করতে থাকে। এসময় বাকবিতন্ডার একপর্যায়ে চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির মসজিদ থেকে বের হয়ে তার ভাই ভাতিজা ভাগিনাসহ ৪০-৫০ জন আমাদের বাড়ি-ঘরে দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র দিয়ে সন্ত্রাসী হামলা চালায়। তাদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আমার ভাগনী ও ছোট দুই ভাই রক্তাক্ত জখম হয়। এ ব্যাপারে নাঙ্গলকোট থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবিরের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
উল্লেখ্য, পেরিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির মজুমদারের বিরুদ্ধে ইউনিয়নের ৫০-৬০ জন হত দরিদ্রকে ঘর করে দেয়ার কথা বলে তাদের থেকে ১০ হাজার টাকা করে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ উঠে। ভূক্তভোগীরা ৪ বছরেও ঘর না পেয়ে গত কিছুদিন যাবৎ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও অনলাইন টেলিভিশনে ভিডিও বক্তব্যের মাধ্যমে প্রতিবাদ জানায়। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হওয়া নিয়ে চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক মোশারফ হোসেন মজুমদারের পরিবার ও তার ভাতিজাদের দায়ী করে। এর জের ধরে চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে গত ২৭ এপ্রিল সোমবার রাত ১০টায় তার সন্ত্রাসী বাহিনী দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র সহ প্রতিপক্ষের উপর হামলা চালায়।হামলায় পেরিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক বড়সাঙ্গিশ্বর গ্রামের মোখলেছুর রহমান মজুমদারের ছেলে মোশারফ হোসেন মজুমদার (৬০), তার ছেলে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতা আমজাদ হোসেন জুয়েল (২৫), মোশারফ হোসেন মজুমদারের ভাই ফারুক আহম্মেদ মজুমদারের স্ত্রী মীর মোর্শেদা বেগম (৪৮), তার ছেলে মাহতাব উদ্দিন ফাহিম (২০), বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী মোহাম্মদ আলী মিঠু (২৬) ও মোসলেহ উদ্দিন মুন্না (২৩) আহত হয়।আহতদের নাঙ্গলকোট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আমজাদ হোসেন জুয়েল ও মোহাম্মদ আলী মিঠুর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদেরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাদের দুইজনের অবস্থাই আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।ওইদিন জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন পেয়ে নাঙ্গলকোট থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আহত দু’জনকে উদ্ধার করে নাঙ্গলকোট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। গুরুতর আহতদের কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।