ফারুক আল শারাহ:
কুমিল্লায় করোনাভাইরাসে মৃতের স্বজনের পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার নিয়ে দাফন ও সৎকার কার্যক্রম কর্মসূচি গ্রহন করেছে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন। দেশব্যাপী কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন কেন্দ্রীয় নির্দেশনার আলোকে কোভিড-১৯ সংক্রমণ প্রতিরোধে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর নানা কর্মসূচি ও পদক্ষেপের অংশ হিসেবে আক্রান্ত মৃত ব্যক্তিকে ধর্মীয় অনুশাসন মোতাবেক দাফন ও সৎকার করার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়ে সহমর্মিতার এক উজ্জল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। আর এই কাজে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অর্পিত দায়িত্ব পালন করছেন কোয়ান্টাম সদস্যরা।
কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন কুমিল্লা শাখার সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত করোনা দাফন টিম গত ২ জুন চৌদ্দগ্রাম উপজেলার আলকরা ইউনিয়নের শিলরী গ্রামে সাবেক গণপরিষদ সদস্য মরহুম মীর হোসেন চৌধুরীর ছোট ভাইয়ের স্ত্রী বকুল বেগমের নামাজে জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন করেন। দাফন কার্যক্রমে পরিবারের আপনজনরা উপস্থিত ছিলেন।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান শামীম তৈমুর মাইকেল জানান, কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের স্বাস্থ্যবিধি ও ধর্মীয় অনুশাসন মেনে সৌহার্দ্যপূর্ণ দাফন কার্যক্রম প্রক্রিয়ায় আমরা সন্তুষ্ট। তিনি আরও বলেন, ‘আমার চাচীর এমন মৃত্যু আমাদের ব্যথিত করেছে। কিন্তু আমরা আপনজনরা কোনো রকম ভয়, আশংকা কিংবা অমুলক ভীতিতে না থেকে জানাজায় অংশ নিয়েছি। কবর দেয়ার পূর্বে ও পরে স্থানটি রাসায়নিক ক্যামিকেল দিয়ে সম্পুর্ণ জীবানুমুক্ত করেছেন দাফন টিম।
কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন কুমিল্লা শাখার পক্ষ থেকে জনপ্রতিনিধি রাশেদা আখতার কুমিল্লার কাগজকে জানান, কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন, কুমিল্লা শাখা দেশের এই ব্যাথিত সময়ে দাফন কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য জেলা প্রশাসক, সিভিল সার্জন ও কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সম্মতি ও অনুমতি পেয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রণীত স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর নির্দেশনা মোতাবেক দাফন কার্যক্রম সম্পন্ন করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা ও প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে।
কুমিল্লা শাখার পরিচালক মোঃ সিকান্দার বলেন, ‘আপনজনেরা শেষ বিদায়ের সময় পাশে থাকুন। প্রিয়জনের উপস্থিতি আমাদেরকেও আপনাদের সমব্যাথি হয়ে কাজটি করতে অনুপ্রাণিত করবে। কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন কুমিল্লা শাখার ৩০জনের একটি প্রশিক্ষিত টিম পর্যায়ক্রমে দাফন কার্যক্রমে অংশ নিতে প্রয়োজনীয় সতর্কতা, নিরাপত্তা ও সররঞ্জাম সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেছে’।
কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি ও প্রশিক্ষক আতিকুল হক শ্যামল জানান, ‘আমরা ¯্রষ্টার নির্দেশিত সৃষ্টির সেবা করার মানসে দেশের এই ক্রান্তিকালে লাশ দাফনের কাজটি করার দায়িত্ব নিয়েছি। সমগ্র দেশের বিভাগীয় প্রধান শহরগুলোতে আমাদের দাফন কার্যক্রম অব্যাহত আছে। কুমিল্লায় আমরা এই উদ্যোগটি নিয়েছি কুমিল্লা সুনাম, ঐতিহ্য ও মর্যাদার দিকটি বিবেচনা করে। কেউ যেন ভয় বা হতাশাগ্রস্ত না হন। কারণ করোনা সংক্রমণ হয় হাত, মুখ ও নাকে অসতর্কতা বশত: অনাকাঙ্খিত স্পর্শের কারনে। মৃতদেহ থেকে এমন সংক্রমণের বিন্দুমাত্র আশঙ্কা নেই। তাই ভয় না করে আমাদের টিমকে সহযেগিতা করুন এবং দাফন কার্যক্রম সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে দ্রুত তথ্য দিয়ে সহায়তা করুন।
কুমিল্লায় করোনায় মৃতদের দাফন ও সৎকারে ‘কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন’র ব্যতিক্রম উদ্যোগ সর্বমহলে ব্যাপক প্রশংসিত হচ্ছে। তাদের এমন মানবিকতায় অন্যান্য সামাজিক, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও এমন কার্যক্রমে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে।