অ্যাড. তানজিনা:
রোটারি ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স ২০১৬ অনুষ্ঠিত হয়েছিলো দক্ষিন কোরিয়ার রাজধানী সিউলে। একজন রোটারিয়ান হিসেবে আমিও সেখানে যোগদান করি। খুবই সুন্দর, উন্নত, পরিচ্ছন্ন নগরী সিউল। নিয়মানুবর্তিতায় পরিপূর্ণ প্রতিটি মানুষ। আমার একটা অভ্যাস আমি কারো সাথে মিশলে, কোন জায়গায় গেলে, প্রথমেই তাদের গুনগুলো খুঁজে বের করি, দেখি কিছু শেখা যায় কিনা? খাবার থেকে শুরু করে ওদের চলা ফেরা আমাদের থেকে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। কিন্তু না, তারা ধনী রাষ্ট্রের মানুষ আর আমরা গরীব রাষ্ট্রের মানুষ সে জন্য নয়! আমাদের দেশের চাইতে তারা অনেক বেশি বেশি খায় তাও কিন্তু নয়! তাহলে??
সন্ধ্যায় হোটেল থেকে বের হলাম, হালাল খাবার দোকানের সন্ধানে। সিউলে হালাল দোকান তেমন একটা নেই। হেঁটে হেঁটে খুঁজে বের করতে হবে। রিকশা, অটো, সি এন জি কিছুই নেই। রাস্তার এপাশ থেকে ওপাশে যেতে হবে। আমার সাথে তখন কুমিল্লার হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার তৃপ্তিশ চন্দ্র ঘোষ এবং এড. রফিকুল ইসলাম ভাই ছিলেন। তৃপ্তিশদা বললেন, দাঁড়ান বক্সের ভেতর সুইস আছে, ওটা টিপ দিতে হবে। আমরা দাঁড়িয়ে রইলাম। সুইস টিপার এক মিনিটের মাথায়, দুই পাশের গাড়ি গুলি দাঁড়িয়ে গেল, আর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আমরা রাস্তা পার হয়ে গেলাম। আবার গাড়ি চলাচল শুরু। রাস্তায় ট্রাফিক, পুলিশ কিছুই নাই। দৌঁড় দিয়ে রাস্তা পার হতে হয়না, পুলিশ পিটায়ে গাড়ি ভাঙচুর করেনা , মানুষকে ধাক্কা মেরে ড্রাইভার পালিয়ে যায়না, এত এত ওভার ব্রিজও চোখে পড়লোনা!! আমিতো অবাক। তৃপ্তিশদা এর আগেও ওখানে গিয়েছে, তাই ওনার অভিজ্ঞতা আমাদের কাজে লাগলো। হাঁটতে হাঁটতে তিনি আরো অনেক বিষয়, আমাদের সাথে আলাপ করলেন। সে যাই হোক, আমার প্রশ্নটা হলো, বিগত দিনে বাংলাদেশ থেকে এম.পি/মন্ত্রী /ঢাকার সিটি মেয়ররা কি কখনো শিউলে যাননি?
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় এত যানজট, এত অপরিষ্কার, এত নোংরা, আর নিয়ম বহির্ভূত দোকানপাট, ইমারতের ছড়াছড়ি!! কিছু কিছু রাস্তার পাশ দিয়ে হেঁটে যেতে, মুখে রোমাল চাপতে হয়, কিন্তু কেন? বাংলাদেশের টাকা নেই, সেজন্য? নাকি সিটি মেয়ররা গরিব? নাকি উপদেষ্টাদের বুদ্ধির অভাব? কোনটা এর জন্য দায়ী? আপনারা কি বলবেন জানিনা, তবে আমি বলবো- বাংলাদেশ যদি, হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে পদ্মা সেতু বানানোর সাহস দেখাতে পারে, তাহলে রাজধানী ঢাকাকে পরিকল্পিত নগরী হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হচ্ছেনা কেন? আমি সারাদেশের কথা বলছিনা, শুধুমাত্র রাজধানীর কথা বলছি। যেখানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে উচ্চপদস্থ মানুষের আগমন ঘটে। আমি বলবো, শুধুমাত্র আন্তরিক সদিচ্ছার অভাবে এটা হয়ে উঠছেনা।
যতদিন পর্যন্ত সত্যিকার দেশপ্রেম আমাদের মধ্যে জাগ্রত হবেনা, ততদিন পর্যন্ত দেশের সংকট কখনোই কাটবেনা। নিজে নিজে বড় হওয়ার মানসিকতা পরিবর্তন যতদিন না হচ্ছে, ততদিন এদেশের মুক্তি নেই। আমরা মুখে বড় বড় বুলি আওড়াবো আর হাজার হাজার কোটি টাকা সুইসব্যংকে রাখবো, বিভিন্ন দেশে সেকেন্ড হোম বানাবো, অসহায় খেটে খাওয়া মানুষদেরকে বঞ্চিত করে সেই টাকা বিদেশে পাচার করবো, নতুন নতুন গাড়ির ব্র্যন্ড চেন্জ করবো আর মুখে বলবো, বাংলাদেশের টাকা নাই, বাংলাদেশ অনুন্নত দেশ!!
করোনা ভাইরাস আগমনের এই সময়ে বাংলাদেশ সরকার যেভাবে কোটি কোটি টাকার অনুদান ঘোষণা করছে, এতে আমরা আশ্চর্য না হয়ে পারিনি। তাহলে টাকার অভাবে বাংলাদেশ গরিব এটা মোটেই ঠিক নয়। সঠিক ব্যক্তি এবং সঠিক নিয়মমাফিক বন্টনের অভাবেই সুন্দর, পরিচ্ছন্ন রাজধানী তৈরি করতে আমরা ব্যর্থ হচ্ছি। বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার সদিচ্ছাএবং দেশপ্রেমের মোটেই কমতি নেই, ইতিমধ্যেই আমরা তার প্রমাণ পেয়েছি। তাঁর লড়াই সংগ্রামের ফলশ্রুতি আজকের এই বাংলাদেশ। তিনি ইচ্ছে করলেই সব ঘরে ঘরে যেতে পারবেননা, এটা সম্ভবও নয়। তিনি আদেশ করবেন, যোগান দেবেন, বাকি কাজগুলো উনার চারপাশের সৈনিকেরা করবেন, এটাইতো রিয়েলিটি!! আমরা আশা করবো, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাও যেন, সুন্দর, পরিচ্ছন্ন, শৃঙ্খলা মন্ডিত এক পরিকল্পিত নগরী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। তবেই সার্থক হবে বাংলাদেশ।
লেখক:
জেলা পরিষদ সদস্য
কুমিল্লা।