বিশেষ প্রতিনিধি:
কুমিল্লার লাকসামে পলিসির সুবাধে নারী বীমা কর্মীর সাথে প্রবাসীর প্রেম-বিয়ের ১৪ বছর পর সেই সম্পর্ক বিচ্ছেদে রূপ নিয়েছে। স্বামী হানিফ প্রবাস থেকে তার প্রেরিত টাকার হিসাব চাওয়ায় এবং তালাকের নোটিশ দেয়ায় স্ত্রী হোসনে আরা ৯ আগস্ট স্বামী হানিফ সহ ৬ জনকে আসামী করে কুমিল্লা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। স্ত্রীর দাবি যৌতুক দিতে অস্বীকার করায় স্বামীর পরিবারের লোকজনের হামলায় গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনায় তিনি মামলা দায়ের করেছেন।
পারিবারিক ও স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, উপজেলার উত্তরদা ইউনিয়নের রামারবাগ গ্রামের মৌলভী পেয়ার আহম্মদের মেঝো ছেলে প্রবাসী আবু হানিফের সাথে বায়রা লাইফের বীমা কর্মী হোসনে আরা বেগমের বীমা পলিসি করার সুবাদে পরিচয় হয়। একপর্যায়ে তাদের পরিচয় প্রেমের সম্পর্কে গড়ায়। দীর্ঘদিন প্রেম-ভালোবাসার পর ২০০৬ সালের ৭ নভেম্বর সামাজিকভাবে বিয়ে করলেও পরিবারের আপত্তিতে বাড়িতে স্ত্রীকে নিয়ে ডুকতে পারেনি আবু হানিফ। বিয়ের ৩/৪মাস পর পুত্র ও সামাজিক লোকজনের অনুরোধে হানিফের পিতা-মাতা পুত্রবধূকে মেনে নিয়ে বাড়িতে তুলে আনেন। কিছুদিন সংসার করার পর শহরে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকবে বলে পুত্রবধু হোসনে আরা বিভিন্ন অজুহাত দেখাতে থাকে। স্ত্রীর বেপরোয়া জীবন যাপনের ফলে সামাজিক মর্যাদার কথা চিন্তা করে স্বামী আবু হানিফ হোসনে আরাকে দুবাইতে তার কাছে নিয়ে যান। প্রায় বছরখানেক সেখানে রাখলেও স্ত্রীর বেপরোয়া জীবন যাপন রুখতে না পেরে পুনরায় দেশের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। অবশেষে স্বামীকে না জানিয়ে পৌর শহরের পশ্চিমগাঁও পুরানবাজার এলাকায় একটি বাসা ভাড়া করে বসবাস করতে থাকে। এর মধ্যে স্ত্রী হোসনে আরা বেগম স্বামীকে না জানিয়ে পরপর ২টি সন্তান নষ্ট করলে তাদের দাম্পত্য জীবনে ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হয়। বর্তমানে ওই ঘরে ২ সন্তান রয়েছে।
প্রবাসী হানিফের পরিবারের অভিযোগ, গৃহবধু হোসনে আরা প্রবাসী স্বামী হানিফের অনুপস্থিতে শুশুর-শাশুড়ির সাথে বনিবনার অজুহাতে আলাদা সংসার করতে থাকে এবং নানা বিষয়াদি নিয়ে কয়েকবার হারপিক ঔষধ খেয়ে ওই প্রবাসীর পরিবারকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করে। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে একাধিকবার শালিস দরবার বসলেও বীমাকর্মী গৃহবধু হোসনে আরাকে দাম্পত্য জীবনমুখী করতে পারেনি স্বামীর বাড়ির স্বজনরা।
অপরদিকে বিভিন্ন অজুহাতে প্রবাসী স্বামী আবু হানিফের কাছ থেকে বিভিন্ন সময় স্বর্নালংকার ও ফার্নিচার বাবদ ৩ লাখ ৭৮ হাজার টাকা, মোবাইল ব্যাকিং-এ ১ লাখ ৩ হাজার টাকা, ব্যাংকের মাধ্যমে ১৪ লাখ ১২ হাজার টাকা সহ প্রায় ৪২ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার প্রমাণাদি আবু হানিফের পরিবারের নিকট রয়েছে। স্ত্রী হোসনে আরা একাধিক মোবাইল সিম ব্যবহার করে স্বামী হানিফের সাথে নানাভাবে প্রতারণা করে বলে তাদের অভিযোগ।
এছাড়া, স্বামী-স্ত্রী উভয় উভয়ের বিরুদ্ধে পরকীয়ায় অভিযোগ নিয়েও অন্তকলহে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। স্ত্রীকে কোনভাবেই আয়ত্বে আনতে না পেরে অবশেষে তালাক দেওয়ার ভয় দেখালেও স্ত্রী হোসনে আরা তাতে কর্নপাত না করে সে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে। অবশেষে ইসলামী শরীয়তের কথা চিন্তা করে ও স্ত্রীকে সঠিক পথে আনার চেষ্টার অংশ হিসাবে স্বামী-আবু হানিফ স্ত্রী হোসনে আরাকে সময়ের ব্যবধানে ১ তালাক করে ২ বার মৌখিক তালাক দিয়ে সতর্ক করা হলেও পরবর্তীতে চূড়ান্তভাবে তালাক দেন। স্বামী হানিফ প্রবাস থেকে তার প্রেরিত টাকার হিসাব চাওয়ায় এবং তালাকের নোটিশ পেয়ে হোসনে আরা ৯ আগস্ট স্বামী হানিফ সহ ৬ জন আসামী করে কুমিল্লা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্র্যাইবুনালে মামলা করেন।
হানিফের বাবা মৌলভী পেয়ার আহম্মদ জানান, হানিফের স্ত্রী হোসনে আরা ছলচাতুরির আশ্রয় নিয়ে আমার পুরো পরিবারটাকে সর্বশান্ত করে ফেলেছে। এমনকি আমাদের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন মামলা করেছে বলে শুনেছি। সে তাঁর অপকর্ম আঁড়াল করার জন্য মিথ্যা মামলার পথ বেঁচে নিয়েছে।
এ বিষয়ে হোসনে আরা বলেন, আমার স্বামী দুবাই থেকে আসার পর গত ৫ ডিসেম্বর আমার শ্বশুর, শাশুড়ি, ভাসুর ও ননদদেরকে নিয়ে আমার বাসায় এসে আমার কাছে ৫ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন। আমি যৌতুক দিতে অস্বীকার করায় তারা আমাকে মারধর করে। এ ঘটনার কিছুদিন পর আমার স্বামী আবু হানিফ পুনরায় প্রবাসে চলে যায় এবং আমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। ইতোমধ্যে আমার পরিবার সামাজিকভাবে মীমাংসা করার চেষ্টা করেছে বেশ কয়েকবার। আমার শ্বশুর বাড়ির লোকেরা সাড়া দেয়নি। গত ৭ আগস্ট শুক্রবার বিকেলে আমি বিরোধ মিমাংসার লক্ষ্যে শ্বশুর বাড়িতে গেলে তারা পুনরায় আমার কাছে যৌতুক দাবি করে। যৌতুক দিতে অস্বীকার করায় আমাকে এলাপাতাড়ি মারধর করে এবং যৌতুক না দিলে সংসার ভেঙে ফেলা এবং আমাকে প্রাণে মারার হুমকি দেয়।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমার স্বামী প্রবাসে থাকার সুবাদে তিনি একাধিক পরকীয়ার সম্পর্কে জড়িত আছেন। আমি বারবার ওনাকে সংশোধনের চেষ্টা করায় তিনি আমার প্রতি ক্ষুব্ধ। আর তাই প্রবাসে থেকেও তার পরিবারকে দিয়ে আমাকে যৌতুকের জন্য নির্যাতন করছেন এবং আমি ও আমার সন্তানদেরকে ভরণপোষণ দিচ্ছেন না।’
মুঠোফোনে প্রবাসী আবু হানিফের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি জানান, মামলার বাদী আমার তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী। ওই মহিলা এখন আমার কেউ না, তার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই।
এ ব্যাপারে ওয়ার্ড মেম্বার আনোয়ার হোসেন জানান, এ বিষয়ে স্থানীয়ভাবে একাধিকবার সালিশ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু কোন সুরাহা হয়নি। তালাক কিংবা টাকা পয়সা লেনদেন ও মামলা নিয়ে কিছুই জানিনা এবং কোন পক্ষই এখনো আমার কাছে আসেনি।
লাকসাম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নিজাম উদ্দিন জানান, এ ব্যাপারে কিছুই জানিনা। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষ আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।