স্টাফ রির্পোটার: ঢাকার সেগুন বাগিচার শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালায় চিত্রশালা মিলনায়তনে প্রদর্শনীর উদ্বোধনের পাশাপাশি বিজয়ী শিল্পীদের পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম। এই আয়োজনে চিত্রশিল্পী কাজী আনোয়ার হোসেন পুরস্কার পেয়েছেন ফারিয়া খানম।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ ও বরেণ্য চিত্রকর মনিরুল ইসলাম।
একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভিাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য দেন একাডেমির চারুকলা বিভাগের পরিচালক শিল্পী আশরাফুল আলম পপলু।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উদ্বোধনী আয়োজনে আটটি বিভাগে পুরস্কার প্রদান করা হয়। সব মাধ্যমের ভেতর থেকে নির্বাচিত একটি শিল্পকর্মকে শ্রেষ্ঠ বিবেচনায় প্রদান করা হবে দুই লাখ টাকা মূল্যমানের শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার কামরুজ্জামান। ভাস্কর্য বিভাগের এক লাখ টাকা মূল্যমানের শিল্পকলা একাডেমি সম্মানসূচক পুরস্কার পেয়েছন তানভীর মাহমুদ। এক লাখ টাকা মূল্যমানের ছাপচিত্র, চিত্রকলা ও স্থাপনাশিল্পী বিভাগে সম্মানসূচক পুরস্কার পেয়েছেন যথাক্রমে রুহুল করিম রুমী, রাফাত আহমেদ বাঁধন ও সহিদ কাজী। এক লাখ টাকা মূল্যমানের বেঙ্গল ফাউন্ডেশন পুরস্কার উত্তর কুমার তালুকদার। কুড়ি হাজার টাকা মূল্যমানের দীপা হক পুরস্কার পেয়েছেন সুমন ওয়াহিদ।
৫০ হাজার টাকা মূল্যমানের চিত্রশিল্পী কাজী আনোয়ার হোসেন পুরস্কার পেয়েছেন ফারিয়া খানম। পুরস্কারপ্রাপ্ত ফারিয়া খানম চলার পথে নারীর প্রতিবন্ধকতাকে চিত্রপটে মেলে ধরেছেন। তার আঁকা ছবির শিরোনাম ‘প্রতিবিম্ব-৪’।
সোমবার থেকে সূচনা হওয়া একুশ দিনব্যাপী প্রদর্শনীটি শেষ হবে ২১ জুলাই। প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা ও শুক্রবার বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
সারাদেশের শিল্পীদের নির্বাচিত শিল্পকর্মসমূহ। একুশ দিনের শিল্প সফরে দর্শকরা দেখতে পাবেন ৩১০ শিল্পীর ৩২২টি শিল্পকর্ম। বিচিত্র শিল্পরেখায় উজ্জ্বল প্রদর্শনীতে ঠাঁই পেয়েছে বিভিন্ন মাধ্যমের ১৫৯টি চিত্রকলা, ৪৫ ভাস্কর্য়, ৫০টি ছাপচিত্র, ১৭ কারুশিল্প, ৮টি মৃৎশিল্প, ৩৭টি স্থাপনাশিল্প ও ভিডিও আর্ট । সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ৭টি পারফরমেন্স আর্ট।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে শিল্পকলায় (চিত্রকলা) কাজী আনোয়ার হোসেনকে (মরণোত্তর) একুশে পদকে ভূষিত করা হয়। ১৯৬৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটি থেকে স্নাতক উত্তীর্ণের পর থেকে শিল্পী কাজী আনোয়ার হোসেন নানা বৈচিত্রময় ছবি এঁকেছেন। ক্যানভাস হিসেবে দিয়াশলাইয়ের খাপ ব্যবহার করে কাঠের অংশের ওপরে নৌকা এবং ব্যতিক্রমভাবে নদীর দৃশ্যও চিত্রায়িত করেছেন। এ ছাড়া তিনি ছবির উপকরণ হিসেবে আঠা, গাছের পাতা, ছাল, মাছের কাটা, হাড়, টুকরা কাপড় ইত্যাদি ব্যবহার করতেন। তাই তিনি মডার্ন আর্ট শিল্পী হিসেবেও পরিচিতি লাভ করেন। নৌকার ছবি এঁকে আলোড়ণ সৃষ্টি করায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আদর করে তাকে ‘নৌকা আনোয়ার’ বলে ডাকতেন।
১৯৮৮ সালের বন্যার ছবি এঁকে একক চিত্র প্রদর্শনীর মাধ্যমে বিক্রির ব্যবস্থা করেন। ছবি বিক্রির সমুদয় টাকা তিনি বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ এবং বন্যা পরবর্তী পূনর্বাসনে দূর্গত মানুষদের সহায়তার করেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দেশে বিদেশে ২২ টিরও বেশি একক ও যৌথ প্রদর্শনীতে প্রদর্শিত হয়েছে তার ্আঁকা ছবি। তার সৃষ্টি অনেক ছবি রক্ষিত আছে বাংলাদেশের জাতীয় জাদুঘর, জাতীয় চিত্রশালা, বাংলাদেশ সংসদ সচিবালয়, দেশের বহু আর্ট গ্যালারিসহ বাংলাদেশের প্রায় ৬০টি সার্কিট হাউজে।
শিল্পীর ছোট ছেলে কাজী আশিকুর হোসেন অপু বলেন, চিত্রশিল্পী কাজী আনোয়ার হোসেন পুরস্কার পাওয়ায় ফারিয়া খানমকে অভিনন্দন জানাই। আশা করছি প্রতিবছরই এই আয়োজনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে চিত্রশিল্পী কাজী আনোয়ার হোসেন পুরস্কার দেয়া হবে।