ফারুক আল শারাহ: কুমিল্লার লাকসামকে সম্পূর্ণ করোনামুক্ত রাখতে শহরের প্রধান বাণিজ্য কেন্দ্র ‘দৌলতগঞ্জ বাজার’ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ক্রেতাদের উপচেপড়া ভীড় ঠেকাতে ৯টি ওয়ার্ডে চালু করা হয়েছে বিকল্প ১৮টি বাজার। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, পৌরসভা ও উপজেলা প্রশাসনের যৌথ সিদ্ধান্তে আজ এসব বাজারের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ক্রেতাদের সুবিধার্থে দেশে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত প্রতিদিনই এ বাজার বসবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে।
জানা যায়, কুমিল্লার লাকসাম দৌলতগঞ্জ একটি বৃহৎ প্রসিদ্ধ বাণিজ্যিক কেন্দ্র। লাকসাম, মনোহরগঞ্জ, নাঙ্গলকোট ও লালমাই উপজেলার ক্রেতারা প্রয়োজনের তাগিদে এখানে এসে কেনাকাটা করেন। চলমান করোনা পরিস্থিতিতে স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সম্মিলিত উদ্যোগে বেশকিছু কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও উপচেপড়া ক্রেতার কারণে দৌলতগঞ্জ বাজারে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করা যাচ্ছিল না।
ইতোমধ্যে লাকসাম উপজেলাকে লকডাউন ঘোষণা করে সকাল ৬টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত বাজারের সময়সূচি নির্ধারণ করে দেয়া হয়। এ ঘোষণার পর সকাল হওয়ার সাথে সাথেই বাজারে আগত ক্রেতাদের ভীড় বেড়ে যায়। বিশেষ করে কাঁচাবাজার, মাছ, মাংশের বাজার ও মুদি দোকানে অতিরিক্ত ভীড় থাকায় নিরাপদ দূরত্ব মানা হচ্ছিল না। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে দৌলতগঞ্জ বাজারে জনসমাগম ঠেকাতে আজ বুধবার থেকে লাকসামের প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র দৌলতগঞ্জ বাজারে শুধুমাত্র ফার্মেসী ও ব্যাংক ছাড়া সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের প্রতিটিতে দু’টি করে সর্বমোট ১৮টি বাজার চালু করা হয়েছে। দেশে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত প্রতিদিন বাজার সমূহ বসবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে।
লাকসাম পৌরসভার প্যাডে পৌর মেয়র অধ্যাপক আবুল খায়েরের স্বাক্ষরে ঘোষণা দেয়া বাজার সমূহ হচ্ছে, ১নং ওয়ার্ডের নশরতপুর এবং মিশ্রি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ, ২নং ওয়ার্ডের রেলওয়ে হাই স্কুল এবং কুন্দ্রা সরকারি প্রথমিক বিদ্যালয় মাঠ, ৩নং ওয়ার্ডের উত্তর বিনই মদিনাতুল উলুম এবং গোপালপুর মাদ্রাসা মাঠ, ৪নং ওয়ার্ডের লাকসাম পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং পেয়ারাপুর পৌর প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ, ৫নং ওয়ার্ডের পশ্চিমগাঁও আম্মাজান হাউজিং এস্টেট মাঠ, এবং উত্তর পশ্চিমগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৬নং ওয়ার্ডের। নওয়াব ফয়জুন্নেসা সরকারি কলেজ এবং বাতাখালী সরকারি প্রথমিক বিদ্যালয় মাঠ, ৭নং ওয়ার্ডের গাজীমুড়া এবং ধামৈচা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ, ৮নং ওয়ার্ডের লাকসাম পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় এবং গুন্তি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ, ৯নং ওয়ার্ডের কাদ্রা এবং উত্তরকূল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ।
লাকসাম পৌরসভার প্যানেল মেয়র-২ আবদুল আলিম দিদার জানান, স্থানীয় ক্রেতাদের সুবিধার্থে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে বিকল্প বাজার শুরু হয়েছে। বাজারগুলোতে নিত্যপ্রয়োজনীয় সকল পণ্য পাওয়া যাবে। এতে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে কেনাকাটার পাশাপাশি ক্রেতাদের যাতায়াত সুবিধাও নিশ্চিত হবে।
লাকসাম পৌরসভার মেয়র অধ্যাপক আবুল খায়ের বলেন, স্থাণীয়ভাবে অনেক কার্যকর উদ্যোগের পরও লাকসাম দৌলতগঞ্জ বাজারে ক্রেতাদের জনসমাগম ঠেকানো যাচ্ছিল না। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে পৌরসভার প্রতি ওয়ার্ডে দুইটি উন্মুক্ত স্থানে সর্বোচ্চ নিরাপদ দূরত্বে বাজার চালু করা হয়েছে। করোনা সংক্রমণরোধে লাকসামের সকল শ্রেণী-পেশার মানুষকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে তিনি অনুরোধ করেন।
লাকসাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ.কে.এম সাইফুল আলম বলেন, লাকসামের সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে এবং খুব প্রয়োজন ছাড়া বাসা-বাড়ি থেকে বের না হলে লাকসামকে করোনামুক্ত রাখা সম্ভব।
তিনি আরো বলেন, নাগরিকদের যে কোন সমস্যায় আমরা সজাগ দৃষ্টি রাখছি। এলজিআরডি মন্ত্রী মহোদয়ের নির্দেশনায় ইতোমধ্যে লাকসামের ২০ হাজার সুবিধাবঞ্চিত পরিবারের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেয়া হয়েছে। সমাজের লাজুক প্রকৃতির মানুষদের কথা বিবেচনায় নিয়ে হটলাইন চালু করেছি। কেউ খাদ্য সমস্যায় পড়লে হটলাইনে মেসেজ পাঠালে যাছাই-বাছাই করে আমরা সর্বোচ্চ গোপনীয়তার সাথে ‘মানবিক সহায়তা’ (খাদ্যসামগ্রী) পৌঁছে দিচ্ছি।