ডেস্ক রিপোর্ট: রাষ্ট্রদ্রোহের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে পাকিস্তানের সাবেক সামরিক শাসক জেনারেল পারভেজ মোশাররফকে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার ঘটনা মেনে নিতে পারছে না দেশটির শক্তিশালী সেনাবাহিনী।
মঙ্গলবার সাবেক সেনাপ্রধানের বিরুদ্ধে বিশেষ আদালতের রায় ঘোষণার পর সশস্ত্র বাহিনী বিবৃতি দিয়ে এর সমালোচনা করেছে।
পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতের (আইএসপিআর) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আসিফ গফুর সামরিক বাহিনীর পক্ষে এক বিবৃতিতে বলেন, ‘রাষ্ট্রদোহের দায়ে পারভেজ মোশাররফের মৃত্যুদণ্ডের ঘটনাটি পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর পদমর্যাদার জন্য বিরাট এক বেদনা ও প্রচন্ড কষ্টকর ব্যাপার।’
পারভেজ মোশাররফের রায়ের বিপক্ষে সামরিক বাহিনীর অবস্থান তুলে ধরে আসিফ গফুর বলেন, ‘একজন সাবেক সেনাপ্রধান, সশস্ত্র বাহিনীর প্রধানদের কমিটির চেয়ারম্যান এবং পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট, যিনি ৪০ বছর দেশের সেবা করেছেন, দেশের হয়ে যুদ্ধে লড়েছেন, তিনি কোনোভাবেই দেশদ্রোহী হতে পারেন না।’
বিবৃতিতে আদালতের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলে আরও বলা হয়, ‘বিশেষ আদালত গঠন, আত্মরক্ষার মৌলিক অধিকারকে অস্বীকার, স্বতন্ত্র সুনির্দিষ্ট কার্যক্রম গ্রহণ করা ও তাড়াহুড়ো মামলা শেষ করাসহ তার (পারভেজ মোশাররফ) বিচারের ক্ষেত্রে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া উপেক্ষা করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।’
বিবৃতিটি দেয়া হয় পাঞ্জাব প্রদেশের শহর রাওয়ালপিন্ডিতে অবস্থিত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদর দফতের ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তারা এক বৈঠকে মিলিত হওয়ার পর। আদালত পারভেজ মোশাররফের মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয়ার পরপরই সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তারা জরুরি ওই বৈঠকে বসে এমন বিবৃতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতের মহাপরিচালক আরও বলেন, ‘পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনী প্রত্যাশা করে যে, ইসলামিক প্রজাতন্ত্রী পাকিস্তানের সংবিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ন্যায়বিচার করা হবে।’ দেশটির ‘সেনা সমর্থিত’ সরকারের জন্য সামরিক বাহিনীর এমন বিবৃতিকে হুমকি হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা।
পাকিস্তানের একটি বিশেষ আদালতের তিন সদস্যের বেঞ্চ আলোচিত মামলাটির যুক্তিতর্কের ওপর শুনানি শেষে আজ মঙ্গলবার যুগান্তকারী এই রায় দেন। ২০০৭ সালের ৩ নভেম্বর অবৈধভাবে সংবিধান স্থগিত করে জরুরি অবস্থা জারি করায় রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে তাকে এই সাজা দেয়া হলো।
পারভেজ মোশাররফ সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ১৯৯৯ সালে ক্ষমতা দখল করেন। ২০০১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত দেশটির প্রেসিডেন্ট ছিলেন তিনি। ২০০৭ সালের নভেম্বরে তিনি দেশটির সংবিধান বাতিল করে জরুরি অবস্থা জারি করেন। তারপর বিক্ষোভ শুরু হলে অভিশংসনের ঝুঁকি এড়াতে ২০০৮ সালে পদত্যাগ করেন মোশাররফ।