দীর্ঘদিন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অসচেতনতার কারণে রোঙ্গিরা ভোটার হতে পেরেছে বলে জানিয়েছে ইসি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। একই সঙ্গে ইসির কিছু অসাধু কর্মচারী ও টেকনিক্যাল কর্মচারী রোহিঙ্গাদের ভোটার করে অবৈধ অর্থের পাহাড় গড়েছেন। এর সঙ্গে ইসির বড় রাঘব বোয়াল কর্মকর্তারা জড়িত কিনা সে বিষয়ে তদন্ত করছে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা।
সূত্র জানায়, ৫ থেকে ৬ বছর আগে ইসির যেসব ল্যাপটপ ও প্রিন্টার হারিয়ে গেছে সেগুলো কেন এত দিনে উদ্ধার করা হয়নি; কাদের স্বার্থে শুধু মামলা করে বসে থাকা হল-এ নিয়ে ইসিতে ক্ষোভ রয়েছে। এসব হারানো ল্যাপটপে এত দিন রোহিঙ্গাদের ভোটার করাসহ জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত বিভিন্ন অনিয়ম করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
সম্প্রতি কুখ্যাত রোহিঙ্গা ডাকাত সর্দার নুর মোহাম্মদ ওরফে নুর আলমের কাছে ইসির স্মার্টকার্ড পাওয়ার পর সব মহল নড়েচড়ে বসে। এরপর দুদক, ইসি ও গোয়েন্দা সংস্থা একাধিক আভিযান চালিয়ে ইসির কর্মচারী ও টেকনিক্যাল কর্মচারীদের আটক করে। প্রিন্টার উদ্ধার না করতে পারলেও দুটি ল্যাপটপ উদ্ধার হয়। এখন গোয়েন্দারা রাঘব বোয়াল কর্মকর্তাদের বিষয়ে তদন্ত করছে। কিছুদিনের মধ্যে আরও বড় ধরনের আভিযান হবে বলে সূত্র জানিয়েছে।
ইসি কর্মকর্তারা জানায়, একজন ইসির কর্মচারী ও টেকনিক্যাল কর্মচারীর কাছে একাধিক পাসওয়ার্ড থাকত। একটি থানা আফিস থেকে অন্য আফিসে অথবা একজন কর্মকর্তার দপ্তর থেকে অন্য দপ্তরে বদলি হলেও আগের পাসওয়ার্ড ব্যবহার করতো কর্মচারীরা। কর্মকতারা তাদের পাসওয়ার্ড পরিবর্তন না করায় কর্মচারীরা অন্য অফিসে বসে আগের অফিসের পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে অপরাধ করতো। বিভিন্ন সময় বদলি হওয়ার ফলে একজন কর্মচারীর কাছে একাধিক পাসওয়ার্ড থেকে যেত বলে জানায় ইসি কর্মকর্তারা। এ কারণে ইসি বর্তমানে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যভান্ডারের (সার্ভার) সুরক্ষায় ‘ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড’ (ওটিপি) পদ্ধতি চালু করেছে। এখন ওটিপি ছাড়া ইসির কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী ভোটার তথ্যভান্ডারে ঢুকতে পারবেন না। থানা নির্বাচন আফিসার এটির নিয়ন্ত্রণ করছে।
এ বিষয়ে ইসির জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক সাইদুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে ওটিপি চালু হয়েছে। উপজেলা অফিসের কর্মচারীরা চাইলে সর্ভারে ঢুকতে পারবে না। প্রতিবার সার্ভারে ঢোকার সময় থানা নির্বাচন আফিসার জানতে পারবেন কখন, কোন টাইমে সার্ভারে ঢোকা হচ্ছে। প্রুপ রিডার বা উপজেলা/থানার কোনো কর্মকর্তা সার্ভারে ঢুকতে চাইলে তাঁকে ফিঙ্গার প্রিন্ট দিতে হবে। ফিঙ্গার প্রিন্ট অনুমোদিত হলে তাঁকে পাসওয়ার্ড দিতে হবে। পাসওয়ার্ড অনুমোদিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উপজেলা/থানা নির্বাচন কর্মকর্তার ই-মেইল অথবা মোবাইল ফোনে ওটিপি যাবে। সেই ওটিপি তিনি সংশ্লিষ্ট কর্মী বা কর্মকর্তা দিলে তবেই ওই ব্যক্তি সার্ভারে ঢুকতে পারবেন।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের ভোটার করা ঠেকাতে আমরা জিরো টলারেন্স গ্রহণ করেছি কাউকে ছাড় দিচ্ছি না। অপরাধী যেই হোক তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছি।
জানা যায়, ইসিতে কর্মরত এবং এর আগে চাকরিচ্যুত হয়েছেন এমন কর্মকর্তার যোগসাজসে রোহিঙ্গাদের ভোটার করাসহ জাতীয় পরিচয়পত্রর বিভিন্ন আপরাধ সংঘটিত হয়েছে। এ কারণে টেকনিক্যাল কর্মচারী ইসির একটি অফিস থেকে চাকরিচ্যুত হওয়ার পর। আবার ইসির অন্য আফিসে চাকরি নিয়ে অপরাধ করেন। এ কারণে ইসি এখন থেকে চাকরীচ্যুত সকল কর্মচারীর বিস্তারিত তথ্য ও ছবি প্রকাশ করবে। যাতে তারা পুণরায় চাকরিতে আসতে না পারে। সম্প্রতি চাকরীচ্যুত ৩০ জনের তালিকা প্রকাশ করেছে ইসি।
এসব বিষয়ে ইসির সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর বলেন, ইসি সব অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। বিভিন্ন গয়েন্দা সংস্থা, দদুকসহ সরকারে বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে ইসি কাজ করছে। রোহিঙ্গাদের ভোটার করার সঙ্গে আরও কেউ জড়িত থাকলে বেরিয়ে আসবে। আমরা সব ধরণের প্রস্তুতি নিয়েছি।
কয়েকবছর আগে ইসির ল্যাপটপ ও প্রিন্টার হারিয়ে গেছে-কেন এগুলো উদ্ধার করা হয়নি এবং রোহিঙ্গাদের ভোটার করা কেন ঠোকাতে পারেনি ইসি এমন প্রশ্নে সচিব বলেন, জেনে হোক আর আজান্তে হোক আগে ইসির অল্প কিছু অসেচতনতা ছিল। হয়তো আরও আগে থেকে এসব বিষয়ে কঠোর হলে পরিস্থিতি এত দূর হয়তো আসতো না। তারপরও আমি বলব মানুষ আস্তে আস্তে আপডেট হয়। ইসি সামনে আরও ওভারকাম করবে। বর্তমানে ইসির সব ধরণের তৎপরতা রয়েছে কেউ অনিয়ম করে ছাড় পাবে না।