খালি পায়ে হাঁটার – একটা সময় ছিল যখন দাদা-দাদীরা প্রতিদিন সকালে উঠে খালি পায়ে ঘাসের উপর হাঁটতেন। তারা বলতেন, এইভাবে হাঁটলে নাকি শরীরে কোনও রোগ আসে না। তাদের দীর্ঘ জীবনের সিক্রেটটা আসলে কী ছিল! কারণ বাস্তবিকই খালি পায়ে হাঁটার অভ্যাস করলে শরীরের কোনও ক্ষতি তো হয়ই না, বরং অনেক উপকার পাওয়া যায়। একাধিক গবেষণাতেও একথা প্রমাণিত হয়েছে।
খালি পায়ে হাঁটার সঙ্গে আমাদের শরীরের ভাল থাকার সরাসরি যোগ রয়েছে। শুধু তাই নয়, মস্তিষ্কের গঠন থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত শরীরে প্রতিটি কণাকে সুস্থ রাখতে খালি পায়ে হাঁটা উপকারি। চলুন জেনে নেওয়া যাক খালি পায়ে হাঁটার আশ্চর্যজনক ১০টি উপকারিতা সম্পর্কে।
১.অনুভূতি আরও জোরদার হয়
কে বলে শুধু মানুষের অনুভূতি রয়েছে, পৃথিবীর গভীরেও সেনসারি চ্যানেল রয়েছে, যার সঙ্গে আমাদের শরীরের সরাসরি যোগও আছে। কিন্তু সমস্যাটা হল মানুষ যখন থেকে ভদ্র হয়ে উঠেছে, অর্থাৎ জুতা পরা শুরু করেছে তখন মাটির সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গেছে। ফলে এখন আর প্রাকৃতিক শক্তি শরীর প্রবেশ করতে পারে না। সেই কারণেই এত রোগের প্রকোপ বেড়েছে। তাই খালি পায়ে হাঁটা শুরু করুন। এমনটা করলে আমাদের পায়ের তলায় থাকা কিছু প্রেসার পয়েন্ট অ্যাকটিভ হয়ে যায়। ফলে মস্তিষ্ক এবং শরীর আরও বেশি করে অ্যাকটিভ হয়ে ওঠে। সেই সঙ্গে সিক্স সেন্সও বাড়তে শুরু করে।
২. হার্টের কর্মক্ষমতা বাড়ে
শরীরে রক্তচলাচল যখন স্বাভাবিকভাবে থাকে, তখন ব্লাড ক্লট এবং আর্টারিতে ময়লা জমার আশঙ্কা কমে যায়। ফলে হার্টের রোগ হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। খালি পায়ে হাঁটার আরেকটি উপকারিতা হল, এই সময় ব্লাড সেলগুলি খুব গতি প্রাপ্ত যায়। ফলে রক্ত ঘন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও হ্রাস পায়।
৩. ইনসমনিয়া দূর হয়
যদি আপনিও অনিদ্রার শিকার হয়ে থাকেন তো আজ থেকেই খালি পায়ে হাঁটা শুরু করুন। তাহলেই দেখবেন বিনিদ্র রাত্রি যাপন আর করতে হবে না। কারণ খালি পায়ে হাঁটার সময় আমাদের শরীর থেকে নেগেটিভ এনার্জি বেরিয়ে যায়। সেই সঙ্গে স্ট্রেস রিলিজও হয়। শুধু তাই নয়, মস্তিষ্কে বিশেষ কিছু হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যাওয়ার কারণে অনিদ্রা দূর হয়। শুধু খালি পায়ে হাঁটলেই যে এমন উপকার হয়, তা নয়। সাঁতার কাটলেও একই ফল মেলে।
৪. দেহের গঠনে ভালো হয়
স্টাইলের চক্করে প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষই তাদের পায়ের গঠনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জুতা পরেন না। ফলে ধীরে ধীরে পায়ের তলার গঠন খারাপ হতে শুরু করে। আর একবার পায়ের গঠন খারাপ হয়ে গেলে তার সরাসরি প্রভাব পরে আমাদের শরীরের উপর। ফলে ব্যাক পেইন, ঘাড়ে যন্ত্রণা এবং গোড়ালিতে ব্যথা হওয়ার মতো সমস্যা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। তাহলে কী জুতা পরাই ছেড়ে দিতে হবে? একেবারেই না। তবে দুর্বল হয়ে যাওয়া পা যুগলেকে পুনরায় চাঙ্গা করে তুলতে খালি পায়ে হাঁটার অভ্যাস করতে হবে। এমনটা করলেই পায়ের শক্তি বাড়তে থাকবে। ফলে ভুল জুতা পরলেও শরীরের উপরে আর কু-প্রভাব পরবে না।
৫. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটে
আমাদের পায়ের তলায় থাকা একাধিক সেন্সারি নার্ভ, খালি পায়ে হাঁটার সময় অ্যাকটিভ হয়ে গিয়ে শরীরের ভিতরে পজেটিভ এনার্জি তৈরি করতে শুরু করে। ফলে ধীরে ধীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এতটাই শক্তিশালী হয়ে ওঠে যে নানাবিধ রোগ সংক্রমমের আশঙ্কা একেবারে কমে যায়।
৬. বুদ্ধি এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়
আজকের পৃথিবীতে সফল হতে গেলে বুদ্ধির তলোয়ারে ধার থাকাটা একান্ত প্রয়োজন, না হলে কিন্তু বেজায় বিপদ! তাই তো বলি, মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়াতে একটু খালি পায়ে হাঁটাহাঁটি শুরু করুন। এমনটা করলেই দেখবেন ধীরে ধীরে মস্তিষ্কে থাকা নিউরনগুলি মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে অ্যাকটিভ হয়ে যাবে। ফলে একদিকে যেমন স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পাবে, তেমনি বুদ্ধির জোরও বাড়তে শুরু করবে। যেমনটা আপনাদের সকলেরই জানা আছে যে আমাদের শরীরের প্রায় ৭০ শতাংশই পানি দিয়ে গঠিত। তাই তো মাটির সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক যত নিবিড় হবে, তত আমাদের শরীরের নানাবিধ তরলের উপাদানের ভারসাম্য ঠিক থাকবে। ফলে রোগভোগের আশঙ্কা যেমন কমবে, তেমনি শরীর একেবারে চাঙ্গা হয়ে উঠবে।
৭.রক্তচলাচলে উন্নতি ঘটে
খালি পায়ে হাঁটের সময় মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে সারা শরীরে রক্তচলাচল ঠিক মতো হতে শুরু করে দেয়। ফলে অক্সিজেন সমৃদ্ধি রক্ত বেশি বেশি করে বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে পৌঁছে গিয়ে তাদের কর্মক্ষমতাকে বাড়িয়ে দেয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই নানাবিধ জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা হ্রাস পায়।
৮. পেশী ও হাড় শক্তপোক্ত হয়
খালি পায়ে হাঁটার সময় ভেনাস রিটার্ন বেড়ে যায়। অর্থাৎ হার্টে বেশি বেশি করে রক্ত পৌঁছাতে শুরু করে। ফলে পেশী এবং হাড় আরও শক্তপক্তো হয়ে ওঠে। সেই সঙ্গে হার্টের কর্মক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়।
৯. দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটে
প্রতিদিন ভোর বেলা, খালি পায়ে ঘাসের উপর হাঁটলে পায়ের তলায় থাকা বিভিন্ন প্রেসার পয়েন্টে চাপ পড়তে শুরু করে। এই সব প্রেসার পয়েন্টের সঙ্গে চোখের সরাসরি যোগ রয়েছে। ফলে পায়ের তলায় যত চাপ পরে, তত দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটতে শুরু করে।
১০. অ্যাংজাইটি এবং মানসিক অবসাদ কমে
বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত খালি পায়ে ঘাসের উপর হাঁটলে মানসিক অবসাদ কমতে শুরু করে। সেই সঙ্গে অ্যাংজাইটি লেভেলও নিম্নমুখী হয়। খালি পায়ে হাঁটার সময় আমাদের মস্তিষ্কের এন্ডোরফিন নামক একটি ফিল গুড হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়। যে কারণে ডিপ্রেশন নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।