ফারুক আল শারাহ:
কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে স্থানীয় এক ব্যবসায়ীর ব্যক্তিগত উদ্যোগে করোনা রোগীদের নিবিড় চিকিৎসায় আইসলোশান সেন্টার করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ১০টি বেড দিয়ে এ আইসলোশান সেন্টারের যাত্রা শুরু হতে যাচ্ছে। করোনা পরিস্থিতির সন্তোষজনক উন্নতি না হলে বেড বৃদ্ধির পাশাপাশি আইসলোশান সেন্টারটিকে আধুনিকায়নের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান উদ্যোক্তা মো. সাইফুল ইসলাম পাটোয়ারী। তাঁর এ ব্যতিক্রম উদ্যোগ সর্বমহলে প্রশংসিত হচ্ছে।
জানা যায়, গত ১০ মে পর্যন্ত কুমিল্লা জেলার মধ্যে নাঙ্গলকোট একমাত্র করোনামুক্ত উপজেলা যেখানে কোনো করোনা রোগী শনাক্ত হয়নি। ১১ মে দুইজন রোগী শনাক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে উপজেলায় করোনার থাবা শুরু হয়। গত ১ মাস ১২ দিনে এখানে ১৪৫ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে মারা গেছেন ৫ জন। এখানে করোনা পরিস্থিতি ক্রমাগত অবনতির দিকে ধাবিত হলেও উপজেলা সদরে করোনা রোগীদের চিকিৎসায় আইসলোশান কিংবা করোনা ওয়ার্ডের ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে পাটোয়ারী জেনারেল হাসপাতালে মালিক মো. সাইফুল ইসলাম পাটোয়ারী ব্যক্তিগত উদ্যোগে শুধুমাত্র করোনা রোগীদের সু-চিকিৎসার প্রত্যয়ে আইসলোশান সেন্টার চালুর উদ্যোগ নেন।
পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা উপজেলা কমিউনিটি সেন্টারটিতে তিনি আইসলোশান সেন্টার গড়ে তুলতে নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লামইয়া সাইফুল এর নিকট আবেদন করেন। নির্বাহী কর্মকর্তার অনুমতি পেয়ে সাইফুল ইসলাম পাটোয়ারী তাতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নের কাজ শুরু করেন। প্রায় সপ্তাহখানেক তিনি কমিউনিটি সেন্টারটিতে রংয়ের কাজ, মোটরপাম্প, ট্যাংক, পাইপ, ইলেকট্রিক, পাখা, লাইট, বোর্ড, থাই এ্যালুমিনিয়াম, দরজা, জানালা, পর্দা লাগানোর কাজ সম্পন্ন করেন। এছাড়া, চিকিৎসক ও নার্সদের জন্য পৃথক ডিউটি রুমও তৈরি করেন। আইসলোশান সেন্টারটিতে রোগীদের জন্য ১০টি নতুন বেড, অক্সিজেন, মেডিসিন, ইমার্জেন্সি এবং ডাক্তার ও নার্সদের জন্য সকল সুরক্ষা সারঞ্জামাদিরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। যে কোন সময় আইসলোশান সেন্টারটি উদ্বোধন হতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তাকওয়া ফাউন্ডেশনের অন্যতম সদস্য সাজ্জাদ হোসেন রাহাত বলেন, করোনা রোগীদের চিকিৎসার লক্ষ্যে ব্যক্তিগত উদ্যোগে আইসলোশান সেন্টার চালু প্রশংসনীয় উদ্যোগ। নাঙ্গলকোটে ইতোমধ্যে করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া বেশ কয়েকজন ব্যক্তির লাশ আমরা দাফন করেছি। করোনা রোগীদের চিকিৎসায় সাইফুল ইসলাম পাটোয়ারি যে উদ্যোগ নিয়েছেন তাতে তাকওয়া ফাউন্ডেশনের সদস্যরা কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
সংশপ্তক এর অন্যতম উদ্যোক্তা জহিরুল ইসলাম জানান, নাঙ্গলকোটে করোনার প্রকোপ দিন দিন বেড়ে চলেছে। ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম পাটোয়ারির ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় গড়া উঠা আইসলোশান সেন্টারটিতে করোনা রোগীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত হবে বলে আমি মনে করি। মানবিক এ সেবায় সার্বিক সেবায় আমাদের সংশপ্তক টিমও সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে যাবে। ক্রমান্বয়ে আইসলোশান সেন্টারটিতে বেড সংখ্যা বৃদ্ধি করার দাবি জানান তিনি।
নাঙ্গলকোট উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি আবদুর রাজ্জাক সুমন বলেন, ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম পাটোয়ারি নাঙ্গলকোট উপজেলা কমিউনিটি সেন্টারে আইসলোশান সেন্টার করে করোনা রোগীদের মানবিক চিকিৎসার যে উদ্যোগ নিয়েছেন তা ইতিবাচক। এখানে করোনা রোগীদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত হবে বলে আমি আশা আশা রাখছি। আইসলোশান সেন্টারটিকে আরো আধুনিকায়নে দেশ-প্রবাসের ধর্ণাঢ্য ব্যক্তিরা এগিয়ে আসা দরকার।
আইসলোশান সেন্টারের উদ্যোক্তা মো. সাইফুল ইসলাম পাটোয়ারী জানান, নাঙ্গলকোট একটি বৃহৎ উপজেলা। এখানে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন ব্যক্তি এখানে করোনা উপসর্গ নিয়ে ইন্তেকাল করেছেন। যারা মারা যাচ্ছেন তাদের বেশিরভাগই প্রয়োজনীয় চিকিৎসার অভাব ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে মারা যাচ্ছেন। ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের নিবিড় তত্ত্বাবধানে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা এবং অক্সিজেন সাপোর্ট দিয়ে মৃত্যুর পথ থেকে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যেই আইসলোশান সেন্টারের উদ্যোগ গ্রহণ করি। উপজেলা চেয়ারম্যান, নির্বাহী কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য বিভাগসহ রাজনৈতিক, পেশাজীবী ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের আন্তরিক সহযোগিতায় আইসলোশান সেন্টারের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। শীঘ্রই আইসলোশান সেন্টারটিতে চিকিৎসা সেবা শুরু হবে।
তিনি আরও জানান, আইসলোশান সেন্টারটিতে বেড বাড়ানোর পাশাপাশি এটিকে পূর্ণাঙ্গ করোনা হাসপাতাল হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে আমাদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। এক্ষেত্রে সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের সহযোগিতা খুবই জরুরি। স্বাস্থ্যবিভাগ ও সমাজের বিত্তবানদের সার্বিক সহযোগিতায় আইসলোশান সেন্টারটিকে পূর্ণাঙ্গ করোনা হাসপাতালে রূপান্তর সম্ভব বলে তিনি জানান। আমি সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের আন্তরিক সহযোগিতা ও দোয়া চাই।