ডেস্ক রিপোর্ট: বিশেষ পরিস্থিতিতে নিকট আত্মীয়ের বাইরে পরিচিত কিংবা সম্পর্ক আছে, এমন ব্যক্তিরাও স্বেচ্ছায় মানবদেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দান করতে পারবেন বলে রায় ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট।
একই সঙ্গে বিদ্যমান আইন সংশোধন করে এ রায়টি অন্তর্ভুক্ত করতে স্বাস্থ্য অধিদফতর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে ৬ মাস সময় বেঁধে দিয়েছেন আদালত।
এক রিটের প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি খন্দকার দিলীরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।
আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন- ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পক্ষে ছিলেন আইনজীবী জেড আই খান পান্না ও মো. শাহীনুজ্জামান শাহীন।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৪ আগস্ট ‘অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইন, ১৯৯৯’ এর ২গ, ৩ ও ৬ ধারা কেন সংবিধান পরিপন্থী ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। ফাতেমা জোহরা নামে এক নারী ২০১৫ সালে তার মেয়ে ফাহমিদাকে একটি কিডনি দান করেন। তা সত্ত্বেও মেয়ের কিডনি অকেজো হয়ে যায়। এরপর কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য দাতা পেলেও আইনগত বাধায় মেয়েকে কিডনি দিতে না পেরে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন।
চলতি বছরের ২৮ আগস্ট হাইকোর্ট কিডনি প্রতিস্থাপনের বিষয়ে বিশেষজ্ঞ কমিটির মতামত জানতে চান। আদেশের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) প্রো-ভিসি ও বাংলাদেশ রেনাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ রফিকুল আলমের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়।
৭ নভেম্বর কিডনি প্রতিস্থাপন বিষয়ে সাত সদস্যের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কমিটি আদালতে তাদের মতামত দেন। মতামতে তারা বলেন, আত্মীয় নয় এমন কারও কিডনি প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন নেই। আইনের বাইরে অন্য কারও কিডনি প্রতিস্থাপনের সুযোগ তৈরি হলে দেশের দরিদ্র মানুষের জীবন সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। ধনীরা বাণিজ্যিকভাবে এর ব্যবহার শুরু করবে। এতে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পাচারের মাত্রা বাড়বে।
তবে বিশেষজ্ঞ কমিটির মতামতের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি বলেন, মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন বিষয়ে বিদ্যমান আইন সংশোধন হওয়া প্রয়োজন। কারণ, এ আইনে নিকটাত্মীয় ছাড়া অন্য কারও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দানের সুযোগ রাখা হয়নি। তাই একজন সুস্থ মানুষ চাইলে অন্য কাউকে তার অঙ্গদান করতে পারবেন- এমন আইন থাকা উচিত।