ডেস্ক রিপোর্ট: নেতৃত্ব ও কর্তৃত্বের দ্বন্দ্ব অবসানে অবশেষে জাতীয় পার্টির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা বেগম রওশন এরশাদকে দলের আমৃত্যু প্রধান পৃষ্ঠপোষক এবং গোলাম মোহাম্মদ কাদেরকে চেয়ারম্যান করার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়েছে। একদিন পর শনিবার অনুষ্ঠিতব্য দলের জাতীয় কাউন্সিলে সর্বসম্মতভাবে এই সিদ্ধান্তই পাস করা হবে।
দলের সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ও জাতীয় সংসদের বিরোধীদলের নেতা রওশন এরশাদকে জাতীয় পার্টিতে সর্বোচ্চ সম্মানিত পদে অধিষ্ঠিত করা হচ্ছে। তিনি যতদিন বেঁচে থাকবেন দলের এই পদে এককভাবে অধিষ্ঠিত থাকবেন, তার মৃত্যুর পরে পদটি আর কেউ ব্যবহার করতে পারবে না, বিলুপ্ত হয়ে যাবে। প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে তিনিই হবেন দলের শীর্ষনেতা। দলের যেকোনো পাবলিক মিটিংয়ে চেয়ারম্যানের উপরের মর্যাদা ভোগ করবেন তিনি। এছাড়া দলীয় পতাকা একমাত্র তার গাড়িতেই থাকবে। জাতীয় পার্টিতে এমন একটি নতুন পদ সৃষ্টি করে গঠনতন্ত্র অনুমোদন দিয়েছে দলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম।
শুক্রবার সকালে এইচ এম এরশাদের বনানী অফিসে অনুষ্ঠিত দলের প্রেসিডিয়াম সভায় উপস্থিত সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত হয়।
দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের সভাপতিত্বে সভায় জাতীয় পার্টির একজনকে সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান, আরো ৬ জন কো-চেয়ারম্যান পদ বৃদ্ধি এবং ৮ বিভাগে ৮জন অতিরিক্ত মহাসচিবের নতুন পদ সৃষ্টি করে তা গঠনতন্ত্রে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সভায় দলের গঠনতন্ত্র সংশোধন, মহাসচিব নির্বাচন, কো-চেয়ারম্যান ও অতিরিক্ত মহাসচিবসহ নতুন কমিটি গঠনে বর্তমান চেয়ারম্যান জিএম কাদেরকে এখতিয়ার দেয়া হয়েছে। সেটি সম্মেলনে পাস করিয়ে নেয়া হবে। সভায় গঠনতন্ত্র সংশোধন উপ-কমিটির আহ্বায়ক সুনীল শুভরায় সংশোধনী প্রস্তাব উত্থাপন করেন। কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী এমপি ও রেজাউল ইসলাম ভুইয়া উপস্থিত ছিলেন।
জিএম কাদেরপন্থী দলের এক প্রেসিডিয়াম সদস্য জানান, ম্যাডামকে প্রধান করে সর্বোচ্চ সম্মানিত পদে বসানো হচ্ছে। তার পরামর্শে পার্টির চেয়ারম্যান জাতীয় পার্টি পরিচালনা করবেন। শুধু তাই নয় এতদিন রওশনপন্থীসহ দলের শীর্ষপর্যায়ের যেসব নেতা অখুশি ছিলেন সবাইকে খুশি করতে দলের কো-চেয়ারম্যান পদ বাড়ানো হয়েছে, নতুন করে সৃষ্টি করা হয়ে অতিরিক্ত মহাসচিব পদের। এসব পদে তাদের দেখা যাবে।
বৈঠক শেষে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা এমপি বলেন, আজ নেতাকর্মীদের আনন্দের দিন। তারা যা চেয়েছেন সেটাই হয়েছে। আমরা সবাই জিএম কাদেরের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ আছি। ম্যাডামের নির্দেশনায় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের জাতীয় পার্টিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
এদিকে বেগম রওশন এরশাদকে প্রধান পৃষ্ঠপোষক করার সিদ্ধান্ত হলেও তিনি এতে সন্তুষ্ট কিনা জানা যায়নি। যদি সন্তুষ্ট হন তাহলে হয়তো তাকে শেষ পর্যন্ত দলের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে দেখা যাবে। তাকে কাউন্সিলে নিয়ে এসে জিএম কাদের হয়তো চমক দেখাতে পারেন। তবে এইচ এম এরশাদ বিহীন দলের এই জাতীয় কাউন্সিলে বেগম রওশন এরশাদ যাচ্ছেন না বলে তিনি তার ঘনিষ্ঠজনদের জানিয়েছেন। দলের প্রেসিডিয়াম সভায়ও তিনি উপস্থিত ছিলেন না। অনেকদিন পর এরশাদ বিহীন প্রেসিডিয়ামের প্রথম সভায় হাজির হন দলের জ্যেষ্ঠনেতা ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও সাবেক মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার। রওশন এরশাদের বিষয়টি শেষ পর্যন্ত কি হয় সেটির অপেক্ষায় দলের নেতাকর্মীরা।
দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের সভাপতিত্বে প্রেসিডিয়াম সভায় বক্তব্য রাখেন দলের মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা, জ্যেষ্ঠ নেতা আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, সাবেক মহাসচিব এবি এম রহুল আমিন হাওলাদার, প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম কিবরিয়া টিপু, অ্যাডভোকেট শেখ মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, ফখরুল ইমাম এমপি, হাবিবুর রহমান, এস.এম. ফয়সল চিশতি, আজম খান, কাজী মামুনুর রশিদ, আলমগীর সিকদার লোটন।
বৈঠক শেষে পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা সাংবাদিকদের জানান, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদ যতদিন জীবিত রয়েছেন, তিনি চিফ পেট্রোন হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। দলের সর্বোচ্চ সম্মানের স্থানে, মিটিং বা সাধারণ সভা সবখানেই ওনার এই সম্মানটা থাকবে।
রাঙ্গা বলেন, গঠনতন্ত্র যদি পরিবর্তন করতে হয়, পরিবর্তন করার পর এটার অনুমোদন নিতে হয় প্রেসিডিয়ামের সভায়। গঠনতন্ত্রে কিছু কিছু সংশোধনী ছিল, সেটা সবার সম্মতিতে অনুমোদিত হয়েছে।
উপস্থিত ছিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ, জিয়া উদ্দিন আহমেদ বাবলু, আবুল কাসেম, অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খান, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, হাফিজ উদ্দিন, সাহিদুর রহমান টেপা, মুজিবুল হক চুন্নু, মীর আব্দুস সবুর আসুদ, হাজী সাইফুদ্দিন মিলন, তাজ রহমান, নাসরিন জাহান রত্না এমপি, মেজর (অব.) খালেদ আখতার, নাজমা আখতার এমপি, লিয়াকত হোসেন খোকা এমপি, সেলিম ওসমান এমপি, সোলায়মান আলম শেঠ, আব্দুর রশীদ সরকার, মুজিবর রহমান সেন্টু, ব্যারিস্টার দিলারা খন্দকার, আলহাজ্ব সফিকুল ইসলাম সেন্টু, লে. জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী এমপি, মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, ফখরুজ্জামান জাহাঙ্গীর, আব্দুস সাত্তার মিয়া, এমরান হোসেন মিয়া, মেজর (অব.) রানা মোহাম্মদ সোহেল এমপি প্রমুখ।