ফারুক আল শারাহ:
লাল সবুজের বাংলাদেশ ক্রমাগত উন্নতির দিকে ধাবিত হলেও দেশের অধিকাংশ মানুষ এখনো দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করেন। এ দেশে স্বল্প আয়ের মানুষের সংখ্যাই বেশি। বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের আতংক এখন বাংলাদেশ জুড়ে। সর্বত্র উদ্বেগ-উৎকন্ঠা। বাংলাদেশে চলছে অঘোষিত জরুরি অবস্থা। হরতাল, অবরোধ, কারফিউ, ১৪৪ ধারা, প্রাকৃতিক দূর্যোগ যাই বলিনা কেন কখনো দেশে এমন স্থরিবতা দেখা যায়নি। করোনার প্রকাপ থেকে রক্ষা পেতে মানুষ আজ ঘরবন্দি। কিন্তু এমন নিয়ম কতদিন মানবে মানুষ?
চলমান পরিস্থতিতে দেশের স্বল্প আয়ের মানুষ, দিনমজুর, ভিক্ষুক, গৃহহীন ও পথশিশুদের দুর্দিন শুরু হয়ে গেছে। হোটেল-রেঁস্তোরা বন্ধ থাকায় অনেকে খেতেও পারছেনা। ইতিমধ্যে জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনি কর্মকর্তা সহ সমাজের ধনকুবেররা এগিয়ে এলেও কোনভাবে শতভাগ চাহিদা পূরণ সম্ভব হবেনা। আপাতত চাহিদা পূরণ হলেও বেশকিছুদিন সম্ভব নাও হতে পারে। আর এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হলে এবং এখন থেকে পরিস্থিতি মোকাবিলার প্রস্তুতি নেয়া না হলে করোনার চেয়ে অনাহারেও বেশি মানুষকে প্রাণ হারানো লাগতে পারে।
দেশের বিশাল জনগোষ্ঠী প্রাইভেট সেক্টর, ক্ষুদ্র ব্যবসা সহ বিভিন্ন পেশার সাথে জড়িত। তারা ধারকর্য করে একসপ্তাহ, দুই সপ্তাহ বা একমাসই চলবে কিন্তু এরপর কি হবে?
আমরা প্রত্যাশা করি করোনাভাইরোস খুব দ্রুতই বাংলাদেশে নিয়ন্ত্রণে আসবে। কিন্তু কোন কারণে নিয়ন্ত্রণে না এসে যদি ভয়াবহতার দিকে ধাবিত হতে থাকে তাহলে আমাদের পরিস্থিতি কি হবে- কেউ ভেবে দেখেছেন কি? তাই প্রাণঘাতী এ করোনাভাইরাসে দেশের মধ্যে কোন বিভেদ নয়, সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠিত হোক সকল স্তরে। করোনায় করুণা জাগুক সারা বাংলাদেশের মানুষের মাঝে।
সম্প্রতি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন সাহেব এক ভিডিও বার্তায় এপ্রিলের প্রথম দিক থেকে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের ভয়াবহতার আশংকা প্রকাশ করেছেন। যদি ঠিকই এমন হয় তাহলে ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হিসেবে আমাদের তা সামাল দেয়া কঠিন হয়ে পড়বে। শুধু তাই নয় করোনার প্রভাবে দেশের সকল সেক্টরেই নেমে আসতে পারে চরম অস্থিরতা।
আমরা দেখেছি- বন্যা, খরা, শীত, রোহিঙ্গা সংকট সহ বিভিন্ন প্রাকৃতিকে দূর্যোগে এ দেশের মানবিক শিল্প উদ্যোক্তা ও ধনকুবেরদের উদারতা। কিন্তু দেশের সবচেয়ে বড় দুঃসময়ে করোনা পরিস্থিতিতে এখনো প্রত্যাশানুযায়ী মানবিক মানুষদের সাহায্য নিয়ে এগিয়ে আসতে দেখা যাচ্ছেনা। যা অবশ্যই হতাশারা।
তবে, আশার কথা হচ্ছে বসুন্ধরা গ্রুপ করোনা সংকট মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে ১০ কোটি টাকা দিয়েছে। এছাড়াও করোনাভাইরাসের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ৫ হাজার শয্যার হাসপাতাল তৈরির ঘোষণা দিয়ে দেশব্যাপী সাড়া জাগিয়েছে। দেশের বৃহৎ এ শিল্পগোষ্ঠী লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে প্রশংসনীয় ভূমিকার পাশাপাশি দেশের প্রতিটি দূর্যোগেই মানবিক সহযোগিতা নিয়ে সবার আগে এগিয়ে আসছে। যা সত্যিই মানবিকতার অনন্য দৃষ্টান্ত।
আকিজ গ্রুপও করোনা রোগীদের জন্য হাসপাতাল করার ঘোষণা দিয়ে আতংকগ্রস্ত মানুষের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে। বসুন্ধরা গ্রুপ এবং আকিজ গ্রুপের মতো অধিকাংশ শিল্প প্রতিষ্ঠান দেশের প্রতিটি দূর্যোগেই এগিয়ে আসছে।
আমরা দেখেছি, যে মুহুর্তে করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য বাংলাদেশে কীটের সংকট সে মুহুর্তে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র স্বল্পমূল্যে কীট তৈরির ঘোষণা দিয়ে দেশের চিকিৎসা অঙ্গনে সাড়া জাগিয়েছে। দেশের এমন ক্রান্তিকালে গণস্বাস্থ্যের এমন অবদানও স্মরণীয় রাখার মতো।
মানবিকতায় বসুন্ধরা গ্রুপ, আকিজ গ্রুপ ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের মতো প্রতিষ্ঠানকে উৎসাহিত করতে বাংলাদেশে প্রতিবছরের জন্য চালু হোক ‘মানবিকতার নোবেল’। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নোবেল পুরষ্কারের মতো আমাদের দেশের নোবেল পুরষ্কারটি বিশ্বব্যাপী সাড়া না জাগালেও এ দেশের ১৭/১৮ কোটি মানুষের মধ্যে মানবিবকতায় আশার সঞ্চার করবে বলে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি। এ পুরষ্কারে আরো বেশি উৎসাহিত হবে মানবিক মানুষ ও মানবিক সংগঠন সমূহ।
লেখক: গণমাধ্যম কর্মী।