মু, সায়েম আহমাদ
বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ। বহু আন্দোলন-সংগ্রাম ও ত্যাগ-তিতিক্ষার বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে এদেশের স্বাধীনতা। কত নির্যাতন, কত অবহেলিত, কত লাঞ্ছনার শিকার হয়েছে তার কোন ইয়াত্তা নেই। বুক ভরা আশা নিয় এ দেশের সর্বস্তরের মুক্তিকামী মানুষ ঝাঁপিয় পড়ে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করার পর ত্রিশ লক্ষ মানুষের জীবনের বিনিময়ে এ দেশ স্বাধীনতা লাভ করে। ৪৯ বছর হয়ে গেল বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার। স্বাধীনতার ৪৯ বছরে সুজলা-সুফলা প্রকৃতিতে ঘেরা প্রিয় বাংলাদেশের অর্জন কিন্তু কম নয়। শিক্ষা থেকে শুরু করে অর্থনীতি শিল্প-বাণিজ্য সহ গুরুত্বপূর্ণ সব সেক্টরে এসেছে ইতিবাচক পরিবর্তন। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময় থেকে এখন পর্যন্ত দেশকে বদলে দিতে বা এগিয়ে নিতে এদেশের মানুষের অবিরাম অন্তহীনভাবে চেষ্টা চলছে। আরে এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে তরুণ-যুবকরা। কিন্তু স্বাধীনতার ৪৯ বছরে কেমন বাংলাদেশ চাই? প্রশ্ন থেকে যায়। আমি এমন একটি বাংলাদেশ চাই, যেখানে থাকবে না কোন হানাহানি, কোন মারামারি ও খুনাখুনি। সবাই বন্ধুত্বসুলভ আচরণ করবে এবং একতাবদ্ধ হয়ে বসবাস করবে।
আমি ধর্ষণমুক্ত বাংলাদেশ চাই, যেখানে হবেনা কোন নারী ধর্ষণ। হবেনা কোন নারী শ্লীলতাহানি। যদিও সম্প্রতিকালে এ দেশে বহু নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন এবং লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন। যা একটি স্বাধীন দেশে এরূপ ঘৃণিত ও বর্জনীয় কাজ মোটেও কাম্য নয়। স্বপ্ন দেখি মানুষের নিরাপত্তা আমার দেশ হবে প্রথম। আমাদের দেশের নারীরা এবং প্রত্যেক জনগণ পাবে পূর্ণাঙ্গ নিরাপত্তা। সেই বাংলাদেশ চাই, যেখানে চাঁদাবাজি, মাদকদ্রব্যসহ অবৈধ ঘৃণিত কাজ সংঘটিত হবে না। শুধু চাই, শান্তি-শৃঙ্খলা একটি দেশ। এদেশের মানুষের একতা ও দেশপ্রেম হবে উন্নয়নের প্রধান হাতিয়ার। আর সেজন্য চাই, প্রত্যেক নাগরিকের একতা ও দেশপ্রেম। কারণ, একতা ও দেশপ্রেম ছাড়া উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব নয়। বর্তমান সরকার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের অনেক উন্নয়ন করেছে। ভবিষ্যতে দেশের প্রতিটি সেক্টরে উন্নয়ন ঘটানোর জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে সমৃদ্ধশালী দেশ। এমন লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ সরকার। তাই একজন সুনাগরিক হিসেবে আশাবাদী, উক্ত পরিকল্পনাগুলো খুব শীঘ্রই বাস্তবে রূপ নিবে। আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে তরুণদের কাঁধে ভর করে এগিয়ে যাবে আমার দেশ। কারণ, আজকের তরুণরাই আগামীর ভবিষ্যৎ। এদেশের কর্ণধার। আমি এমন একটি বাংলাদেশ চাই, যেখানে অস্ত্র কি জিনিস তা কেউ বুঝবে না। আর এদেশে শিক্ষা হবে একমাত্র হাতিয়ার। শিক্ষার মাধ্যমে এ দেশের প্রত্যেক নাগরিক আলোকিত দেশ এবং উন্নয়ন দেশ হিসেবে গড়তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আমি এমন একটি দেশ চাই, যে দেশে কোন শিক্ষককে আর লাঞ্ছনার শিকার হতে হবে না। যদিও আমাদের দেশে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনা ঘটেছে। যা অত্যন্ত মর্মান্তিক ও বেদনাদায়ক। শিক্ষকরা হচ্ছেন এদেশের আলোকবর্তিকা। সুনাগরিক গড়ার কারিগর। তাই শিক্ষকদের সঠিক মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করতে হবে এবং তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। আমি এমন একটি বাংলাদেশ চাই, যেখানে মানুষে মানুষে কোন ভেদাভেদ থাকবে না। একে অপরের সুখে দুঃখে পাশে থাকবে। একে অপরের সহযোগিতায় এগিয়ে আসবে। আমি এমন একটি দেশ চাই, যে দেশে পথশিশুরা মন খুলে হাসবে। অনাহারে কাটবে না আর তাদের দিন। বিভিন্ন ফুটপাতে এবং রেল স্টেশনে নিথর দেহের মত পড়ে থাকবে না আর। এমন একটি দেশ চাই, যে দেশে বেকারত্বের মতো অভিশাপকে মুছে ফেলা হবে। বেকারত্ব একটি দেশের বিষফোঁড়া। দেশের প্রতিটি বেকার প্রাণের কর্মসংস্থান সুনিশ্চিত করলে এদেশ পাবে প্রকৃত উন্নত রাষ্ট্রের গ্রহণযোগ্যতা। অনুন্নত শিক্ষাব্যবস্থা, তথ্যপ্রযুক্তির শিক্ষার অভাব এবং দুর্বল ইংরেজি জ্ঞান থাকায় সৃষ্টি হয়েছে নানা রকম সমস্যা। আর বর্তমান সরকার এসব সমস্যা সমাধানের জন্য চেষ্টা চালাচ্ছেন বিভিন্ন পদক্ষেপের মাধ্যমে। আমি এমন একটি দেশ চাই, যে দেশে থাকবে না কোনো অন্যায়, অবিচার। থাকবে না কোনো দুর্নীতি। কেননা, দুর্নীতি একটি দেশের জন্য হুমকিস্বরূপ। সম্প্রতিকালে আমাদের দেশে অনেক ধরনের দুর্নীতির ঘটনা ঘটেছে। বিশেষ করে, করোনাকালীন সময়ে সরকারি সহায়তা (ত্রাণ) দুর্নীতি। করোনা পরীক্ষায় নকল সার্টিফিকেট প্রদান করে প্রবাসীদের বিদেশে যাওয়ার সুযোগ দান করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। যার ফলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমাদের দেশের মর্যাদাক্ষুন্ন হয়েছে। এই দুর্নীতির কারণে দেশের উন্নয়নে বাধা হিসেবে বিবেচিত হয়। তাই দুর্নীতিকে পরিহার করতে পারলে দেশের উন্নয়ন বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে। দেখতে চাই ঢাকা শহরকে বসবাসযোগ্য পৃথিবীর শীর্ষ তালিকায় রাখতে কিন্তু আজও ঢাকা শহর বসবাস অযোগ্য শহরের তালিকায় ২য়। বলতে গেলে শীর্ষস্থান দখলকারী। ঢাকা শহরকে বসবাসযোগ্য গড়ে তুলতে চাই সুনিপুণ পদক্ষেপ। আর সেই পদক্ষেপ গুলো সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন করতে পারলেই সম্ভব এমন বসবাস যোগ্য শহর হিসেবে গড়ে তোলা। আরো দেখতে চাই, আমাদের দেশের শিক্ষার মানের উন্নতি। আমাদের দেশে স্বাক্ষরতার হার বেড়েছে কিন্তু শিক্ষার গুণগতমান বাড়েনি। তাই শিক্ষার প্রকৃত মান বাড়াতে চাই গুণগতমানের উন্নয়ন। আর সেজন্য চাই সুনিপুণ পদক্ষেপ। আমি যানজটমুক্ত বাংলাদেশ চাই, যে দেশে থাকবে না কোন যানজট। থাকবে শুধু যাত্রাপথে প্রশান্তি। এদেশে যানজটের কারণে জনসাধারণের মূল্যবান সময় যাত্রাপথে নষ্ট হয়। বিশেষ করে আমাদের দেশে রাজধানী ঢাকা শহরে এর প্রভাব বিস্তার বৃহৎকারে দেখা যায়। যার ফলে এ দেশের উন্নয়নে বাধা আসে। তাই এদেশের যানজট মুক্ত করতে একটি সুনির্দিষ্ট ও পরিকল্পিত প্রক্রিয়া গ্রহণ করে বাস্তবায়ন করতে হবে। পরিশেষে বলতে চাই, আমি একটি শান্তি-শৃঙ্খল, দুর্নীতিমুক্ত, ধর্ষণমুক্ত, মাদকমুক্ত, যানজটমুক্ত বাংলাদেশ চাই। তাই আসুন দেশকে ভালোবাসি, দেশের কল্যাণ কামনা করি। কেননা, এদেশ আমার, আপনার, সকলের।
লেখক- শিক্ষার্থী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা কলেজ, ঢাকা।