এম এস দোহা:
চলোমান করোনা যুদ্ধের পাশাপাশি ডেঙ্গু নিয়ে শুরু হয়েছে উদ্বেগ, উৎকন্ঠা। মশক বাহিনীর এই তৎপরতা রুখতে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়েছেন। এক্ষেত্রে বেশি আতংঙ্কে আছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটির নগরবাসী। অবশ্যই তাদের মহাভাগ্যবান ও বলা চলে। অনেকটা না চাইতে বৃষ্টি। দুই জন মেয়র পেয়েছেন তারা। এ নিয়ে তাদের খুশির অন্তনেই। যেখানে একজন মেয়রের সেবা পাওয়া কষ্ট সাধ্য সেখানে দুই জন! কি সৌভাগ্য তাদের! অবশ্যই এই বোনাস প্রাপ্তির নেতিবাচক দিকটিও তারা এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন। উল্লেখ্য গত বছর ডেংঙ্গুর ভয়াবহরূপ দেখে দেশবাসী। যাতে আক্রান্ত হয়েছিল ১০,১,৩৪৫ জন। মৃত্যু ১৭৯ জনের। এনিয়ে হয়েছে নানা নাটক। মশার অকার্যকর ঔষধ ক্রয়, মেয়র ও কাউন্সিলরদের সুখ নিদ্রা, আর এর সাথে মন্ত্রণালয়ের আমলাতান্ত্রিক বেড়াজালতো নতুন কিছু না। অনেক সুন্দর আদেশ উপদেশও শুনেছেন দেশবাসী। দক্ষিণ সিটির মেয়র বলেছেন, উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মশক বাহিনী তার এলাকায় বেড়াতে এসে তান্ডব চালিয়েছে। আবার কেউ কেউ বলেছেন লম্বা পায়জামা পাঞ্জাবী পরে মশকবাহিনীর মোকাবেলা করতে। আরো কত কি! অতচ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের রোগ নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর আইইডিইসিআর তিন মাস পূর্বে এ ব্যাপারে সচেতন করেছিল। পরবর্তীতে জানা যায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের র্শীষ কর্মকর্তা এই প্রতিষ্ঠানটির সর্তকতা গ্রহণতো দূরে থাকলো, তাদের চিনেন-ই-না। করোনা সম্পর্কিত বিভিন্ন সাংবাদিক সম্মেলনে আইইডিইসিআর এবং বিশেষজ্ঞরা আসন্ন বর্ষ মৌসুমে ডেঙ্গুর ভয়বহতা নিয়ে উৎকন্ঠা প্রকাশ করেছে। গত ৩ মাসে ২৭৩ জন রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন অতচ ২০১৯ সালে এ তিন মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৭১ জন। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি বছরে ডেঙ্গুর প্রার্দূভাব গত বছরের তুলনায় ৪ গুন বেশি। গত ৩ ও ৭ এপ্রিল স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নিজেও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মশার উপদ্রব বৃদ্ধিতে। কিন্ত মাঠ পর্যায়ে এর কোন প্রভাব পড়েছে বলে মনে হয় না। পাড়া মহল্লায় এনিয়ে কাউন্সিলরদের নেই কোন তৎপরতা। উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম মাঝে মাঝে কিছু টিভি ক্যামেরা নিয়ে মশকন নিধনের কিছু কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেন। ব্যাস। আর দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন আমলাতান্ত্রিকতার অজুহাতে চেয়ারে বসে সময় কালক্ষেপন করছেন মাত্র। তাই মন্ত্রনালয়ের বিভিন্ন সমন্বয় সভা ও তৃণমূল পর্যায়ে মশাক নিধনের কর্মসূচিতে তার সম্পৃক্ততা নাই বললেই চলে। অবশ্যই সাইদ খোকনের কাছে এর চেয়ে বেশি প্রত্যাশা সমূচিত হবে না। কারণ বেচারাকে মনোনয়ন বঞ্চিত করে ব্যরিষ্টার ফজলে নুর তাপসকে মেয়র নির্বাচন করা হলো। সুতারাং এখন যা করার তাপসই করবেন। অবশ্যই নির্বাচনী প্রচারনায় এ ধরনের জোরালো হুংঙ্কার ছিল তাপসের কন্ঠে। সম্ভব হলে নির্বাচনী মাঠে তিনি মশক বাহিনীকে পিষিয়ে মারতেন। হয়তো চেয়ারে বসলে চেষ্টায় ক্রটি করতেন না। কিন্তু দুঃখজন হলেও সত্য, নির্বাচিত হওয়ার দুই মাসের মাথায়ও আইনগত জটিলতার কারনে চেয়ারে বসতে পারছেন না। কারণ সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের মেয়াদি নাকি আগামী মে মাস পর্যন্ত। তাই কর্মতৎপরতা দেখানোর জন্য ব্যরিষ্টার ফজলে নুর তাপসকে অন্তত: আরো একমাস অপেক্ষা করতে হবে। অতচ চলমান করোনা সংকটে প্রশাসনিক স্থবিরতার সুযোগে ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ডেঙ্গু মহামারী আকার ধারণ করতে এই একমাস সময়ই যথেষ্ট। উল্লেখ্য, সিটি কর্পোরেশনসহ তৃণমূল পর্যায়ে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থপনার তদারকীর দায়িত্বে রয়েছেন মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম। যিনি নিজের মেধা, দক্ষতা, আন্তরিকতা ও অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি মাথায় রেখে কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু এক্ষেত্রে ব্যত্যয় ঘটছে দু’একটি সিটি কর্পোরেশনের মেয়রদের কর্মকান্ডের ক্ষেত্রে। তাদের ড্যামকেয়ার ভাব। মাঝে মাঝে মন্ত্রীর চেয়ে নিজেদেরকে মহাশক্তিধর ভাবেন। প্রটোকলে মন্ত্রীর সমান মর্যাদা, হাফ শায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের প্রধান নিবার্হী সহ অফুরান্ত সুযোগ-সুবিধা তাদের। তাই অনেক সময় মন্ত্রণালয়ের ডাকে সাড়া না দিয়ে তারা বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখান। যা সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত বাস্তাবায়নের ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। ঢাকা সিটি অনেক কাউন্সিলর নিজেদেরকে এমপি, মন্ত্রীর চেয়ে অনেক ক্ষমতাশালী মনে করেন। এলাকায় অঘোষিত সম্রাট তারা। চাঁদাবাজী, ফুটপাত দখল, বাড়ী দখল, টেন্ডারবাজী, মাদক সিন্ডিকেটসহ ক্যাসিনো কান্ডের মাধ্যমে অঢেল টাকা, সম্পদ, বিত্ত ও বৈভবের মালিক তারা। রাজকীয় কায়দায় জীবন যাপন তাদের। তাই নালা-নর্দমায় নোংরা পরিবেশে মশা মারা তাদের জন্য অস্বাস্থ্যকর। করোনা আক্রান্তদের পাশে লাশ দাপনের দায়িত্ব পালনে তাদেরকে পাওয়া যায় না। ইদানিং নগরীতে লক্ষ লক্ষ ভূভক্ষ কুকুরের হিংস্রতা লক্ষ্যণীয়। গরীব দুঃখী নোংরা মানুষদের হাতের সাথে হাত মিলানো, তাদের পাশে দাঁড়ানোটা কাউন্সিলরদের জন্য বড্ড বেমানান। অধিকাংশ কাউন্সিলারের এই দৃষ্টিভঙ্গি ও তাদের জবাবদিহীতা না থাকার করণে জনগনের এই দূর্ভোগ। আবার দেশের বিভিন্ন স্থানে ইউপি মেম্বারদের চলমান চাল কেলেংকারীতে সরকার বিভ্রত। তৃণমূল পর্যায়ে জনগনকে সেবা দিতে হলে সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলার ও ইউপি পরিষদের চেয়ারম্যানদের কর্মকান্ড তদারকী ও পর্যবেক্ষণের বিকল্প নেই।
লেখক: সাংবাদিক-কলামিষ্ট।