ডেস্ক রিপোর্ট: আগের চেয়ে বাংলাদেশে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড কমেছে বলে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর প্রকাশিত এক কান্ট্রি রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালে বাংলাদেশে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রবণতা ও বিস্তার আগের চেয়ে কমেছে।
শুক্রবার (১ নভেম্বর) মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের ওয়েবসাইটে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এ সময়ে বাংলাদেশে সন্ত্রাসী হামলায় একজন ধর্মনিরপেক্ষ লেখক নিহত হয়েছেন। একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের ওপরও সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর দাবি সন্ত্রাস-বিরোধী ধারাবাহিক অভিযানে দেশে পরিকল্পিত সন্ত্রাসী হামলা ঠেকানো গেছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, জঙ্গিদের গ্রেফতার, বিপুল পরিমাণ অস্ত্র-শস্ত্র আটকের কারণে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড কমেছে। যদিও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে।
প্রতিবেদনে ২০১৮ সালের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের চিত্র তুলে ধরে বলা হয়, ১১ জুন সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীরা মুন্সীগঞ্জের সেক্যুলার লেখক ও রাজনৈতিক কর্মী শাজাহান বাচ্চুকে হত্যা করেছে। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আল-কায়দা মদদপুষ্ট একটি গ্রুপ জড়িত বলে তদন্তে বেরিয়ে আসে। ২০১৯ সালের ৩ মার্চ সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বরেণ্য শিক্ষাবিদ ও শিশুসাহিত্যিক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের ওপর হামলা হয়। হামলাকারীরা তাকে ইসলামের শত্রু দাবি করে।
সন্ত্রাসবিরোধী আইন পুরোপুরি বাস্তবায়নের জন্য সরকার জোরালো পদক্ষেপ নিয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করে বলা হয়, আইনটি কার্যকর করতে সরকার ৫ এপ্রিল ঢাকা ও চট্টগ্রামে দুটি সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে।
সন্ত্রাসবিরোধী কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট সন্দেহভাজন জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। অভিযানে অনেক সন্দেহভাজন নিহত হয়েছে।
এসব হত্যাকাণ্ডকে ‘বন্দুকযুদ্ধ’, ‘ক্রসফায়ার’ বলে দাবি করা হলেও এগুলো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বলা হয়েছে প্রতিবেদনে।
এছাড়া সাইবার অপরাধ দমনে বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের তদন্ত সক্ষমতা বেড়েছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সীমান্ত ও প্রবেশ বন্দরে নিয়ন্ত্রণ জোরালো করতে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা নিয়েছে। ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরের নিরাপত্তা পদ্ধতি নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগ বহাল থাকলেও ইন্টারন্যাশনাল সিভিল অ্যাভিয়েশন অথরিটি জানিয়েছে তাদের মানের ৭৭ দশমিক ৪৬ শতাংশই পূরণ করে এটি। ২০১২ সালে সর্বশেষ জরিপের সময় থেকে এই মান ২৬ শতাংশ বেড়েছে। বাংলাদেশ আইনপ্রয়োগ সংক্রান্ত তথ্য ইন্টারপোলের সঙ্গে ভাগাভাগি করলেও দেশটির কোনও সুনির্দিষ্ট ওয়াচলিস্ট নেই। তাদের কোনও মিথস্ক্রিয়ামূলক এপিআই সিস্টেম নেই।
বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের সন্ত্রাসবিরোধী কর্মসূচির সঙ্গে সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে এবং সঙ্কট মোকাবেলা, প্রমাণ সংগ্রহের সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
‘যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসবাদ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও জঙ্গিবাদ দমনে জাতীয় কমিটি ইমাম ও মাওলানাদের নিয়ে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সচেতনতা কার্যক্রম চালাচ্ছে। পুলিশও জঙ্গিবিরোধী প্রচারণা মোকাবেলায় ধর্মীয় নেতাদের সহযোগিতা নিচ্ছে।