মোঃ খোরশেদ আলম: হরিশংকর জলদাসের একটা উপন্যাস আছে “কসবি” নামে। যে উপন্যাসের মূল কাহিনি একটা যৌনপল্লী নিয়ে। যেখানে একজন যৌন কর্মীর বর্তমান জীবনের ভয়াবহ নির্মমতা এবং ভবিষ্যৎ এর দূরাবস্থা স্পষ্ট। আলোকপাত করা হয়েছে, তাদের উত্তরাধিকার মেয়ে হলে এই পেশায় থাকতে হবে!
‘দৌলতদিয়া পতিতালয়’ বা দৌলতদিয়া পূর্ব পাড়া ও এমন একটা নিষিদ্ধ পল্লী। অপরাধ করেছে সমাজ, সমাজের নির্দিষ্ট কিছু মানুষ। সে অপরাধের দায় মাথায় নিয়ে কেন একটা ছোট নিষ্পাপ শিশু স্বাভাবিক ভাবে বেড়ে উঠতে পারবে না? কেন এগিয়ে যেতে পারবে না দুরন্ত শৈশব, কৈশোরে! পতিতাপল্লীর প্রতিবন্ধকতা তাকে আঁকড়ে ধরে! এই সমাজ উঠতে দেয়না।
বাংলাদেশ পুলিশের জীবন্ত কিংবদন্তী, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি, জনাব হাবিবুর রহমান বিপিএম(বার), পিপিএম(বার) মহোদয় সম্পর্কে নতুন করে পরিচয় বা বিশ্লেষণ দেওয়ার কিছু নাই৷ তিনি বাংলাদেশ পুলিশের উচ্চপর্যায়ে আসীন হয়ে পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তি কতটা উজ্জ্বল করে যাচ্ছেন নিজ কর্মকাণ্ডে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।
আজকে প্রথম আলোর সম্পাদকীয় পাতায় স্যারের কর্মকাণ্ড নিয়ে লিখা হয়েছে “ যৌনপল্লীর শিশুদের জন্য বই। পুলিশের মানবিকতার অনন্য দৃষ্টান্ত ”
পতিতাপল্লীর সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করতে সেখানে গিয়ে অনুভব করলেন আর লিখলেন: “এক একজন নারী এক একটা উপন্যাস। আর নিস্পাপ শিশুগুলো এক একটা অপার সম্ভাবনা। একজনকে কোলে নিলাম, কি নিস্পাপ চাউনি!! যেন বলতে চায়, আমি তো পাপী হিসেবে জন্মাইনি!! করুন চোখের অব্যক্ত ভাষা যেন ফিসফিস করে বলছে, ‘কে আমার বাবা?’।”
অবহেলিত বেদে ও হিজড়া জনগোষ্ঠীর জন্য কাজ করে তিনি ভাগ্য বদলে দিয়েছেন তাদের। কর্মের ব্যবস্থা করেছেন৷
শুরুটা এবার যৌনপল্লী থেকে আবার। যে বাচ্চাগুলোর হাতে বই তুলে দিয়েছেন৷ এদের কেউ অন্তত যৌনকর্মী হবেনা৷ কেউ ছিনতাইকারী, সন্ত্রাসী হবেনা। দেশের পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত এই সংবাদ একদিন আন্তর্জাতিক পত্রিকায় প্রকাশ হবে। একজন পুলিশ অফিসারের মানবিকতা, সাহসিকতার, বদলে দেওয়ার গল্প।
আমাদের মত অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তাদের অনুপ্রেরণার গল্প৷
লেখক: অতিরিক্ত পুলিশ সুপার
নারায়নগঞ্জ ‘খ’ সার্কেল, ঢাকা।
(ফেসবুক থেকে নেয়া)