সামছুল আলম সাদ্দাম (জয়): দীর্ঘ সাত দিন পর বাজার করার জন্য বাহিরে গেলাম, খুব জরুরি কিছু জিনিস দরকার ছিল বাসায়। তেমন খাবার ছিল না তাই বের হতেই হল আজ। কিন্তু বের হয়ে যা দেখলাম যতটুকু মানুষ সচেতনতা হওয়া দরকার তেমন সচেতন নেই। কিন্তু অনেকের মধ্যে আবার সচেতনতা দেখলাম গ্লাবস, মাস্ক পড়া। আমি চেষ্টা করছি দেশের এই যুদ্ধকালীন অবস্থায় দেশের এই ক্রান্তিকালে আমি আমার জায়গা থেকে কিছুটা সহযোগিতা বা আমার জায়গা থেকে আমি সর্বোচ্চ করার। জানিনা আমার এ সহযোগিতা দেশের এ সময়ে কতটুকু কাজে আসছে।
প্রথমে যখন আমি স্বপ্নের সামনে বাজার করতে গেলাম দেখলাম স্বপ্নের ভিতরে মানুষ ঢোকার জন্য তাড়াহুড়া করছে। কোন নিয়ম শৃঙ্খলা নেই। শুরুতেই চিল্লাচিল্লি করে অনেককে ধমক দিয়ে নির্দিষ্ট দূরত্বে দাঁড় করালাম। প্রত্যেককে একটা নির্দিষ্ট দূরত্বে দাঁড়ালো। প্রথম অবস্থা অনেকের মন খারাপ হলেও অনেকে আমাকে বেশি করতেছি, পাকনামী করতেছি- এ ধরনের অনেক কথা বলেছে। আমি শুনেও কানে নিই নাই। কিন্তু ভাল লাগার বিষয় হচ্ছে শেষ পর্যন্ত সবাই খুশি হয়েছে। পরে সবাই বলাবলি করছে এভাবেই দাঁড়ানো উচিত। প্রথমেই এভাবে দাঁড়ানো দরকার ছিল। ধমক খেলেও ভাল লাগার জায়গাটা তো এখানেই।
অবাক করার বিষয় হচ্ছে একটি ছেলে মুখে ভাল একটি মাস্ক পড়া, হাতে গ্লাভস, চোখে চশমা। ছেলেটা যথেষ্ট স্মার্ট। আমাকে হাত দিয়ে ইশারা করল একটু দূরে যাওয়ার জন্য। নির্দিষ্ট দূরত্বে দাঁড়িয়ে কথা বলছে ছেলেটা। ভাই আজকে আমি তিনদিন কিছুই খাইনা। আমি একটা চাকরি করতাম। ওই অফিসটা অনেকদিন বন্ধ আমার মালিককে ফোন দিচ্ছি, আমার বসকে ফোন দিচ্ছি ফোন ধরছে না। যদিও কল ধরে। উনি বলছে দেশের যে অবস্থা একটু কষ্ট করে থাকো, কোন রকম ম্যানেজ করো। বাড়িতে আমার মা অসুস্থ আমার টাকায় আমার বাড়ির সবাই চলে। সংসারের প্রত্যেকটা মেম্বার আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। যতটুকু ছিল এ কয়েকদিন চলছি। এখন যে অবস্থা পরদিন গুলো কি ভাবে থাকবো বা কিভাবে কাটাবো আমি বুঝতে পারছিনা। আজকে তিনদিন আমি কিছুই খাইনা। আমি যে বাসায় থাকি সে বাসার মালিক আমাকে ভাড়া দেওয়ার জন্য আমাকে কাল খুব খারাপ ব্যবহার করছে। কষ্টে আর বাসায় না থেকে রাস্তায় ঘুরছি। দেখি কোন জায়গা থেকে অন্তত কিছু খেতে পারি কি কিনা। ভাই কার কাছে যাব কিভাবে কি করবো কিছুই বুঝতে পারছিনা। চোখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম চোখ থেকে যে পানি পড়ছে আমি সেটা হতো না দেখার কারণ চোখে সানগ্লাস, আর মুখে মাস্ক এ জন্য। কিন্তু চোখের পানিতে যে মাস্ক ভিজে যাচ্ছে তা আমি দেখছি।
বুঝতে পারছি ছেলেটার কন্ঠস্বর কতটা কঠিন, কতটা ভারী। হয়তো লিখে বুঝতে পারবো না বা বলে শেষ করতে পারবো না। জানিনা এই ক্লান্তিকাল বা এ কঠিন সময় আমাদের আরো কতদিন পার করতে হবে? এই ছেলেটার মত এরকম আরো অনেকেই আছে যারা অনেক কষ্টে আছে মুখ ফুটে কাউকে কিছুই বলতে পারছে না। অনেক কষ্টে ইতিমধ্যে জীবনযাপন করছেন, প্রতিটা সময় তাদের জন্য অনেক কষ্টের। আমাদের সমাজে যারা সম্পদশালী যাদের সামর্থ্য আছে আপনাদের কাছে করজোড়ে বিনয়ের সহিত একটা কথাই বলবো মানুষের ভালোবাসা আর সারা জীবনের জন্য প্রকৃত সম্মান পাওয়ার এর চাইতে বড় সময় সুযোগ আমার মনে হয় আর পাবেন না। এখনই সময় দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে মানুষের পাশে দাঁড়ান আপনার একটু সহযোগিতা অথবা আপনার একটু উদার মন মানসিকতায় আপনার পাশে থাকা মানুষটিকে বাঁচার সুযোগ করে দিবে।
এই ছেলেটিকে আমি কতটুকু সহযোগিতা করতে পারছি আমি জানিনা। কিন্তু ঔ সময়ে ছেলের কাছ থেকে কয়েকটি কথা আমার নিজেকে ওই সময়ের জন্য প্রকৃত মানুষ মনে হয়েছে। ছেলেটির কথা না হয় আর নাই বললাম, অন্য কোন সময় বিস্তারিত লেখায় ছেলেটির বাস্তব জীবনের প্রসঙ্গ নিয়ে আসবো। আমি আবারও বিনয়ের সাথে আপনাদের কাছে অনুরোধ, এই সময়ে সবাই সবার অবস্থান থেকে সবার সামর্থ অনুসারে দয়া করে আমরা সবাই এগিয়ে আসুন, সারা জীবনের জন্য সম্মান অর্জনের যে ধারা আমরা ধরে আছি, এখনই সময় সেই জীবন সম্মানটুকু অর্জন করার। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সুস্থ রাখুক। আমরা এ ক্লান্তিলগ্নের সময় থেকে পরিত্রাণ পাবো। আবারও হাসবো সবাই মিলে, সবই আবার আগের মত হবে। পাশাপাশি এ সময়ে আমাদের সমাজের ঘাপটি মেরে বসে থাকা কিছু লোকদেরকে খুব সহজে চেনার একটি সহজ উপায়ে করে দিল আল্লাহ।
লেখক: সহ -সভাপতি
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ
ঢাকা মহানগর উত্তর।