মু,সায়েম আহমাদ:
দুর্নীতি একটি সামাজিক ব্যাধি বা অপরাধ। বাংলাদেশে দুর্নীতি বহুল প্রচলিত শব্দ। এই বিচ্যুতিমূলক আচরণ মানুষকে নিকৃষ্ট প্রাণীর কাতারে দাঁড় করিয়ে দেয়। দুর্নীতি প্রতিরোধে অঙ্গীকারও তেমনি বহুল প্রচলিত কথা। দুর্নীতি নিয়ে অনেক লেখালেখি, আলোচনা হয়ে এসেছে। কিন্তু আদৌ কি দুর্নীতি দমন হয়েছে?
বরং, দিন দিন ক্রমশঃ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সুতরাং, আমরা বলতে পারি সমাজে দুর্নীতি গ্রহণযোগ্য অংশ হয়ে গেছে। অনেকে দুর্নীতিকে আর অপরাধ মনে করেন না। যদিও এই দুর্নীতি দমন করার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) গঠন করা হয়েছে। কিন্তু দুর্নীতির বিরুদ্ধে কোন উন্নতি সাধিত হয়েছে?
তবুও দুর্নীতিবাজরা তাদের অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে ভয়ভীতি ছাড়াই।আর এমনটি করার সাহস পাচ্ছে, তার একমাত্র কারণ জবাবদিহিতার অভাব। কেননা, আপনি আমি যে কোন কাজ করি না কেন। সেটাও কিন্তু কারো না কারো কাছে জবাবদিহি করতে হয়। কিন্তু তারা কোথায় জবাবদিহি করবে?
একটি দেশ বা রাষ্ট্রের জন্য দুর্নীতি হুমকিস্বরূপ। দুর্নীতি যে দেশে যত বেশি, সে দেশে যত বেশি পিছিয়ে। চাই সেটা অর্থনৈতিক দিক থেকে অথবা সার্বিক দিক থেকে।আমরা যদি লক্ষ্য করি উন্নয়নশীল যত দেশ রয়েছে তারা কিন্তু দুর্নীতি না করার ফলে এরূপ উন্নতি সাধিত করতে পেরেছি।
দুর্নীতিতে শীর্ষ দেশ সোমালিয়া। পৃথিবীতে অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতির দেশ সোমালিয়া। এ দেশের অধিকাংশ জনগণ কৃষিকাজের উপর নির্ভরশীল। কোনমতে চলছে তাদের জীবনযাত্রা। এরকম একটি দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের সার্বিক, অর্থনৈতিক দ্বায়িত্ব পালন করে সরকার। প্রশাসনের নিম্নস্তর থেকে শুরু করে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। আদৌ কি এদেশ থেকে দুর্নীতি দমন হবে কিনা জানা নেই কারো।
সুতরাং, এরূপ একটি দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের দিক বিবেচনা করলে বুঝা যায়। কোন জবাবদিহিতা ছিল না বলে, আজ তাদের জীবনযাত্রার করুণ অবস্থা। সম্প্রতি, এদেশে অনেক ধরনের দুর্নীতি ঘটেছে। এর মধ্যে করোনাকালীন সময়ে সরকারি সহায়তায় (ত্রাণ) দুর্নীতি, স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। স্বাস্থ্যখাতে যে দুর্নীতি প্রতিফলিত হয়েছে তা করোনা পরীক্ষায় ভুয়া সনদ প্রদান করে বিদেশের মাটিতে মানুষকে পাড়ি দেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। যার ফলে, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এদেশের সম্মানহানি হয়েছে।যা এদেশের জনগণের জন্য মোটেও কাম্য নয়। তাহলে কী লাভ দুর্নীতি করে?
যদি দেশের সম্মানের বিপরীতে অসম্মানী করা হয়। তাই, দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে শুধু আইনের শাসন নয়; বরং বদলাতে হবে মন-মানসিকতা। কারণ, আইনের শাসন যত কঠিন হোক না কেন,মন মানসিকতার পরিবর্তন না হলে এমন ঘৃণিত কাজ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব নয়। তাই , দুর্নীতি দমন করতে হলে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে ।দেশে বড় বড় দুর্নীতিবাজদের জনসমক্ষে শাস্তি প্রয়োগ করতে হবে। যার ফলে,অন্য কেউ দুর্নীতি করতে সাহস পাবে না। দেশের প্রশাসন ও জনগণ দুর্নীতির বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ ও প্রতিবাদ গড়ে তুলতে হবে। তাহলে এদেশ গড়ে উঠবে একটি উন্নত, আদর্শ ও সুশাসন রাষ্ট্র হিসেবে।
লেখক: শিক্ষার্থী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা কলেজ, ঢাকা।