মোঃ খোরশেদ আলম:
পুলিশের চাকরিতে রিলাক্স, অবসর টাইম, নিশ্চিন্ত….এই শব্দগুলো বড্ড বেমানান। সদা ব্যস্ততা আর কর্মময় জীবন পুলিশের। ব্যস্ততার বাইরে একটা মুহূর্তও চিন্তা করা সম্ভব নয় এখানে।….নিজের জন্য, পরিবারের জন্য দুটো সন্তানের জন্য আলাদা একটু সময় যে বের করবো- তার কোনটাই হয়ে উঠছে না এখন আর। করোনা ভাইরাস মহামারি আকার ধারণ করার পর ব্যস্ত জীবন হয়ে পড়েছে আরো ব্যস্তময়…।
জনগন কে সেবা দেওয়ার মহান ব্রত নিয়ে দায়িত্ব গ্রহণের পর দায়িত্বের বরখেলাপ কখনোই করি নি।…করতে পারিনি আমি। পারবোও না কোন কাল।
পুলিশের প্রধান কাজ অপরাধ দমন করা। অপরাধ নিয়ন্ত্রণ রাখতে সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকতে হয় আমাদের। এর-ই মাঝে করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) এখন বার্নিং ইস্যু। সারাদিন-সারাক্ষন কোনো না কোনো ইস্যুতে বাইরে ডিউটি করতে হচ্ছে তাও আবার এই গরমের মধ্যেই পিপিই পরেই । আমার দায়িত্বাধীন এলাকার বিপদগ্রস্ত মানুষের শত শত ফোন কল রেসপন্স করতে হচ্ছে । চেস্টা করছি যতটুকু সম্ভব পূরণ করার ।
আমার দায়িত্বপ্রাপ্ত এলাকা করোনা ভাইরাসের জন্য রেডজোন হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। খুউব রিস্ক জোনে আছি আমি ও আমরা । অনেক শুভাকাঙ্খী, আত্মীয়, বন্ধু, ভাই ফোন করে, মেসেজ দিয়ে সতর্ক করে যাচ্ছেন বারবার। তাদের এই সতর্কবার্তার মাধ্যমে কেউ কেউ অতিমাত্রায় আতংকিত করে দিচ্ছেন ।
হয়তো ভালোবাসেন বলেই করছেন। যেন আতংকিত হই। ঘরে থাকি, সাবধানে থাকি। কিন্তু আমরা তো পুলিশ…। আমাদের আতংকিত হতে হয় না। আমাদের ভয় থাকতে হয় না।আতংকিত হলে মনোবল ভেঙে যাবে : কাজ করবে কে ?
‘৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ও যুদ্ধের ময়দান থেকে পুলিশ পিছপা হয়নি৷ আতংকিত হয় নি। ভীত হয় নি। বর্তমানে করোনা যুদ্ধের ময়দান থেকেও বাংলাদেশ পুলিশ পিছু হটবে না। দায়িত্বে অবহেলা করবে না। যুদ্ধক্ষেত্র ছেড়ে যাবেনা৷
আমি ও তেমন একজন মানুষ। তেমন ই একজন পুলিশ। একজন জনগনের সেবক। করোনা মোকাবিলায় একজন সম্মূখ যোদ্ধা…।
আমার অনুরোধ থাকবে দয়া করে ফোন করে, মেসেজ দিয়ে আতংকিত না করে, মনোবল বাড়াতে ও সাহস যোগাতে আপনার সব প্রিয়জনকে ও পুলিশ সদস্যকে সহযোগিতা করুন। তাদের কে মানসিক শক্তির যোগান দিন।
এই দুঃসময়ে যারা বারবার স্মরণ করছেন সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা। সবার জন্য প্রাণ খোলা ভালোবাসা।সবাই দোয়া করবেন, যেন বিজয়ী হয়ে ময়দান থেকে ফিরতে পারি…।
লেখক: অতিরিক্ত পুলিশ সুপার
নারায়নগঞ্জ ‘খ’ সার্কেল।