সালমান হোসেন
কোন মানুষের রক্তের প্রয়োজন হলে তা অন্য কোন মানুষ হতেই সংগ্রহ করতে হয়। কারণ এখন অব্দি চিকিৎসাবিজ্ঞানে রক্তের কোন বিকল্প বা কৃত্তিম রক্ত তৈরি করার পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়নি। ব্লাড ডোনেশন জগতের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ এবং নিঃস্বার্থ উপহার। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের তথ্য মতে, গড়ে প্রতি বছর ৮ লাখ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয়, যার মধ্যে প্রায় ৭ লাখ ব্যাগ রক্ত জোগাড় করা সম্ভব হয়। আর বাকি ১ লাখ ব্যাগ পেশাদার রক্তদাতাদের থেকে সংগ্রহ করা হয়, যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অনিরাপদ সঞ্চালনের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়। তাই, রক্তদানের মতো এত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে আমাদের আমাদের সচেতন হওয়া উচিত।
চলুন জেনে নেই, রক্ত কাদের প্রয়োজন হয়, কারা দিতে পারে, কারা পারে না ও রক্তদানের উপকারিতা সম্পর্কে! মানবদেহে নানাবিধ কারণে রক্তের প্রয়োজন হতে পারে। রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি-এর তথ্য অনুযায়ী রোগীর ধরন অনুযায়ী প্রতি বছর বিশ্বে ১০ কোটি ৮০ লক্ষ (১০৮ মিলিয়ন) ব্যাগ দানকৃত রক্ত সংগ্রহ করা হয়। যার মধ্যে ৩১% সংগ্রহ করা হয় রেড ক্রিসেন্ট ও রেড ক্রস-এর সেচ্ছাসেবীদের মাধ্যমে। তাঁদের হতে প্রাপ্ত তথ্য মতে সংগ্রহকৃত রক্ত নিম্নোলিখিত খাতে যায়- ১) ক্যান্সারও বিভিন্ন রক্তরোগে আক্রান্ত রোগীর জন্য (৩৪%) ২) বিভিন্ন ধরনের অ্যানিমিয়া (anemia) আক্রান্ত রোগীর জন্য (১৯%) ৩) ওপেন হার্ট সার্জারি-সহ বিভিন্ন ধরনের অপারেশন ও আগুনে পুড়ে যাওয়া রোগীর জন্য (১৮%) ৪) অন্যান্য শারীরিক সমস্যা যেমন হৃদরোগ, কিডনীরোগ-এর জন্য (১৩%) ৫) অর্থোপেডিক রোগীর জন্য (১২%) ৬) স্ত্রীরোগ ও ধাত্রীরোগের রোগীর-গর্ভবতী মায়েদের, সন্তান জন্মদানের পর মা ও সন্তানের জন্য (৪%) রক্তদানের মাধ্যমে একজন মানুষের জীবন বাঁচে, এর চেয়ে বড় মানসিক শান্তি আর হতে পারে না।
পাশাপাশি রক্তদাতার আরও কিছু উপকারিতার কথা বলেন চিকিৎসকেরা। চলুন জেনে নেই সেটাই- ১) নিয়মিত রক্ত দানে রক্তে কোলেস্টরেল-এর পরিমাণ কমে যায়, ফলে হৃদরোগ ও হার্ট অ্যাটাক-এর ঝুঁকি কমে। ২) নিয়মিত ( ৪ মাস অন্তর অন্তর) রক্তদানে দেহে নতুন লোহিত রক্ত কণিকা তৈরির হার বৃদ্ধি পায়। ৩) অস্থিমজ্জা সক্রিয় থাকে, দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং দ্রুত রক্তস্বল্পতা পূরণ হয়। ৪) বিনা খরচে শরীরের চেক-আপ হয়ে যায় এবং শরীরে হেপাটাইটিস-বি,সি, জন্ডিস, ম্যালেরিয়া, সিফিলিস এবং এইডস-এর মতো বড় কোন রোগ আছে কি না, সেটি জানা যায়। ৫) রক্তদানের মাধ্যমে যে ক্যালরি খরচ হয়, তার ক্ষয়পূরণ ওজন কমাতে ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে সহায়ক। প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী যেই বিপুল পরিমাণ রক্তের চাহিদা থাকে , তার জোগান দিতে ১০ কোটি ৮০ লক্ষ মানুষ রক্তদান করেন প্রতি বছর। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উপাত্ত অনুযায়ী উন্নত বিশ্বে স্বেচ্ছা রক্তদানের হার প্রতি ১০০ জনে ৪ জন হলেও, তা উন্নয়নশীল বা অনুন্নত দেশে প্রতি এক হাজারে ৪ জনেরও কম।
উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুয়ায়ী, জেমস হ্যারিসন নামে এক অস্ট্রেলিয় নাগরিক ১১৭৩ বার রক্ত দান করে বিশ্ব রেকর্ড করেন।রক্তদানে বয়সসীমা নির্ধারিত হওয়ায় ৮১ বছর বয়সী জেমস ১১ মে ২০১৮ সালে সর্বশেষ রক্ত দান করেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার লক্ষ্য ২০২০ সালের মধ্যে স্বেচ্ছায় রক্তদানের মাধ্যমে চাহিদার শতভাগ রক্তের সরবরাহ নিশ্চিত করা। এই লক্ষ্যে যারা প্রতিবছর স্বেচ্ছায় রক্তদান করেন, তাঁদের সম্মানার্থে প্রতি বছর ১৪ জুন বিশ্ব রক্তদাতা দিবস পালন করা হয়। তো ব্লাড ডোনেট করুন, অন্যের জীবন বাঁচান ও নিজে সুস্থ থাকুন। অনেকেই রক্তদানকে অতিউৎসাহিত হয়ে প্রতিযোগিতামূলক কর্মকাণ্ড মনে করে থাকেন.. শেষ রক্তদানের তিন মাস পূর্ণ হবার আগেই তারা রক্তদান করে থাকেন। এটা একদমই উচিত নয়। কেননা, রক্তের (RBC) অর্থাৎ Red Blood Cell বা, লোহিত রক্তকণিকা, যা পরিপুর্ণ হতে ১২০দিন অর্থাৎ ৪মাস লাগে। সুতরাং চার মাস পরপরই রক্তদান করাটা উত্তম। (এই বিষয়ে অনেক রক্তদাতার সাথে আমার তর্ক বিতর্কও হয়েছে)। অতএব, ৪মাস পরপরই রক্তদান করাটা চিকিৎসক কতৃক নির্দেশিত। সবশেষে… নিয়ম মেনে রক্তদান করবো সবাই হাসাবো রোগী বাঁচাবো প্রাণ Happy Blood Donating.
লেখক: সভাপতি
ছাত্র সামাজিক সংগঠন ভোলাইন
নাঙ্গলকোট, কুমিল্লা।