ডেস্ক রিপোর্ট: বিয়ে পাগল মানুষ জামালপুরের ইসলামপুরের বক্কর। এক, দুইটি নয়। একে একে করেছেন ৬০টি বিয়ে। অবশেষে শেষ স্ত্রীর মামলায় ধরা খেলেন বক্কর। নতুন নতুন বিয়ে করতে নিজেকে কখনও সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, কখনও বিভিন্ন নামিধামি ওষুধ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টেটিভ হিসেবে পরিচয় দিতেন আবু বক্কর।
ভূয়া নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে একে একে ৬০টি বিয়ে করে সে।
তবে শেষরক্ষা হয়নি বক্করের। শেষ স্ত্রীর করা মামলায় পুলিশের হাতে আটক হয়েছে আবু বক্কর (৪৫) নামের ওই ব্যক্তি।
বক্কর ইসলামপুর উপজেলার গোয়ালেরচর ইউনিয়নের সভারচর গ্রামের বাদশা মিয়ার ছেলে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সে এলাকায় চিটার বক্কর নামে পরিচিত। ১৭ বছর বয়সে সে প্রথম বিয়ে করে। দেশের বিভিন্ন জেলায় নানা ধরনের আত্মীয় পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন ব্যবসা, কোথাও রিপ্রেজেন্টেটিভ চাকরি, অবিবাহিত, বৌমারা গেছে এ সব কথা বলে বিভিন্ন ভূয়া ঠিকানা ব্যবহার করে ৪৫ বছর বয়সে ৬০টি বিয়ে করেছেন এই প্রতারক।
বিয়ে করা তার পেশা হিসেবে নিয়েছিল। অসহায় মেয়েদের বিয়ে করে হাতিয়ে নিয়েছে মোটা অংকের টাকা। অবশেষে নেত্রকোনা পূর্বধলা উপজেলার ঔটি গ্রামে ৬০তম স্ত্রী রোজি খানমের মামলায় ধরা পড়েছে এই প্রতারক।
ইসলামপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আনছার আলী জানান, প্রতারণা করে বক্কর প্রায় ৬০টি বিয়ে করেছে। সে নিজেই স্বীকার করেছে। এলাকায় সে চিটার বক্কর নামে পরিচিত। পূর্বধলা থানায় স্ত্রী রোজি খানমের মামলায় ইসলামপুর থানা পুলিশের সহায়তায় তাকে আটক করে ওই থানায় পাঠানো হয়েছে।
তিনি জানান, স্ত্রীর মামলায় শনিবার রাতে তার বাড়ি থেকে থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।
নেত্রকোনার পূর্বধলা থানার এসআই মো. আলা উদ্দিন যুগান্তরকে জানান, খোকন নামে রোজি বেগমের এক আত্মীয়ের সঙ্গে মোবাইল ফোনে প্রথম পরিচয় হয়। পরে আস্তে আস্তে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর হলে তাদের বাড়িতে যাতায়াত করত।
বক্কর পরে একদিন খোকনকে বলে আমার তো বউ নেই, বউ মারা গেছে, আমাকে আপনাদেরও এলাকায় একটা বিয়ে করিয়ে দেন। পরে মেয়ের অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলে উভয়ের মধ্যে বিয়ে হয়।
কিন্তু বিয়ের কাবিননামায় শাহীন আলম ,পিতা মো. আকরাম আলী, গ্রাম কুতুবেরচর জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার ঠিকানা ব্যবহার করে রোজিকে বিয়ে করে। তার বিয়ের স্বাক্ষীও ছিল ভুয়া। সেই থেকে রোজীর বাড়িতে বসবাস করে আসছিল বক্কর।
এ সময় রোজির পরিবারের কাছে যৌতুকের ২ লাখ টাকা দাবি করে। এতে রোজির পরিবার অপারগতা প্রকাশ করে। পরে চিটার বক্কর কৌশলে শ্যালক রুবেলকে ওষুধ কোম্পানির চাকরি দেয়ার কথা বলে শ্বশুরের কাছ থেকে টাকা নিয়ে চম্পট দেয়।
এ ঘটনায় রোজি বেগম প্রতারক বক্করের বিরুদ্ধে নেত্রকোনার পূর্বধলা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন।
তবে নিজ উপজেলা ইসলামপুরের ঠিকানা বক্করের কখনোই ব্যবহার করতেন না। রোজিদের বাড়ি থেকে পালিয়ে এসে নিজের বাড়িতে প্রথম স্ত্রী সাজেদা বেগমসহ দুই স্ত্রী ও সাত সন্তানের সঙ্গে ছিলেন।
রোজী খানমের মামলার পরিপ্রেক্ষিতে পূর্বধলা থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে শনিবার রাতে জামালপুর জেলার ইসলামপুর থানা পুলিশের সহায়তায় ওই উপজেলার সভারচর গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে বক্করকে আটক করে।
আটক আবু বক্কর জানায়, সে ৬০টি বিয়ে করলেও তার সন্তান রয়েছে সাতটি। শুধু টাকার লোভে এতগুলো বিয়ে করেছে। সব জায়গায় টাকা পাওয়ার পরই ফেলে এসেছে স্ত্রীদের।
রোজির ছোট বোন সাদিয়া যুগান্তরকে জানান, রোজি ২০১৫ সালে নেত্রকোনার পূর্বধলা মহিলা ডিগ্রি কলেজ থেকে ডিগ্রি পাস করে স্থানীয় একটি এনজিওতে চাকরি করতেন। প্রতারক বক্কর তাদের স্থানীয় খোকন নামে এক ঘটকের মাধ্যমে পরিবারকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। পরে প্রতারক বক্কর ওই ঘটকের মাধ্যমে স্থানীয় লোকজনকে ম্যানেজ করে তার পরিবারকে চাপ দিয়ে বিয়ে করা।
তিনি জানান, গত ৬ আগস্ট ঘাগড়া ইউনিয়নের কাজী রউফের মাধ্যমে বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে বিভিন্নভাবে যৌতুকের জন্য চাপ দিচ্ছিল। একই সঙ্গে নির্যাতন করে আসছিল।
সাদিয়া জানান, রুবেলের চাকরির কথা বলে ৫ লাখ টাকা নিয়ে হুট করে চলে যায় বক্কর। কয়েকদিন পর থেকেই তাদের সঙ্গে সব যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। পরে স্ত্রী রোজি প্রতারক বক্করের জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপির ঠিকানা মোতাবেক তার পরিবারের খোঁজ-খবর নিয়ে জানতে পারে ভূয়া ঠিকানা ব্যবহার করে বিয়ের নামে প্রতারণা করেছে বক্কর।